সন্দীপ্তা ভঞ্জ: “আয়লা, আমফান-এর থেকেও বড় তাণ্ডব হতে চলেছে!”- প্রথমেই সাবধানবাণী দিয়েছিলেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। ১১ আগস্ট মুক্তি পেল সেই বহু প্রতীক্ষিত সিরিজ। কেমন হল? রইল রিভিউ।
মাঝে কেটে গিয়েছে দশ-দশটা বছর। শত্রুদের শনি হয়ে আবারও কেতাদুরস্ত ‘ক্যাওড়া’ পুলিশ ইনসপেক্টর অনিমেষ দত্ত হাজির। তবে এবার ওয়েব প্ল্যাটফর্মের আবহাওয়া চরম করে দিল ‘আবার প্রলয়’। নারীপাচার-খুন রুখতে ‘সিংহম’ অফিসার অনিমেষ দত্তের বদলি হয় সুন্দরবনের এক প্রত্যন্ত গাঁয়ে। যে অঞ্চলে নারী পাচারের রমরমা। স্কুলে পড়া নাবালিকা মেয়েদের প্রথমে প্রেমের জালে ফাঁসানো হয়। তারপর তাদের মাদক মেশানো খাবার খাইয়ে বেহুঁশ করে জলপথে চালান দেওয়া হয় বাইরে। আর সেই পাচারচক্রের নাশ করতেই এন্ট্রি নেয় অনিমেষ দত্ত ওরফে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়।
১০ পর্বের এই সিরিজ একেবারে অ্যাকশন প্যাকড। মশালামুভির সমস্ত উপকরণই রয়েছে। এর আগে ‘শবর’-এ শাশ্বতকে মারপিট করতে দেখা গেলেও এই সিরিজে অনিমেষ অবতারে তিনি আরও ক্ষুরধার। তিন বন্ধু- হারু, কানু ও মণির ট্র্যাজিক বন্ধুত্বের অতীত ও বর্তমান কাহিনির মোড়কে দুর্বল সমাজব্যবস্থা, ঢিলেঢালা প্রশাসন এবং আইনের ফাঁক গলে অপরাধের জালবিস্তারের মতো বহু প্রাসঙ্গিক প্লটে সিরিজ সাজিয়েছেন রাজ চক্রবর্তী।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের মুখে মুখরোচক সংলাপ শুনতে মন্দ লাগে না। ৩০ মিনিট করে একেকটা পর্ব একেঘেয়ে লাগবে না দর্শকদের। বাংলা সিরিজে এর আগে এমন ভায়োলেন্স দেখা গেলেও চিত্রনাট্যের খাসা বুনোট আর প্রতিটা চরিত্রের অভিনয়ে ‘আবার প্রলয়’ রাজ চক্রবর্তী মাস্টারপিস হয়ে উঠেছে। এই গল্প বড়পর্দায় দেখানো হলে সেন্সরের কাঁচিতে বাদ পড়ত বহু সংলাপ ও দৃশ্য। সেক্ষেত্রে ওটিটি ময়দানের সুবিধে নিয়ে প্রান্তিক মানুষদের রূঢ় বাস্তব দক্ষভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন পরিচালক। শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় নিয়ে আলাদা করে উল্লেখ করার প্রয়োজন পড়ে না। মজাচ্ছলেই রহস্য সমাধান করা এমন পুলিশ চরিত্রের বড় অভাব বাংলার পর্দায়। তাঁর সংলাপও হাততালির দাবিদার।
অনিমেষ দত্তর কড়া মাস্টারমশাই বিনোদবিহারীর ভূমিকায় পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও দেখা গেল। স্বল্পচরিত্রেও তার উপস্থিতি নজর কাড়ে। তবে ‘আবার প্রলয়’-এর সুবাদে রাজ চক্রবর্তী বড় আবিষ্কার মোহিনী মায়ের চরিত্রে কৌশানী মুখোপাধ্যায়। এর আগে তাঁকে এমন অবতারে দেখা যায়নি। পুলিশ অফিসার ‘হ্যালোবাবু’ করালিবাবুর ভূমিকায় রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের অভিনয় অবাক করে দেয়। ধর্মগুরু শম্ভুবাবার চরিত্রে ঋত্বিক চক্রবর্তী বড় চমক। সেই রহস্য উহ্য থাক এই পরিসরে। রিভিউয়ে ফাঁস করলে মজা নষ্ট। গৌরব চক্রবর্তীও যথাযথ। মহিলা পুলিশকর্মী মাধবীর চরিত্রে সোহিনী সেনগুপ্ত এবং গল্পের অন্যতম মাইলস্টোন চরিত্র পরিতোষ সরকারের ভূমিকায় লোকনাথ দে বড় প্রাপ্তি।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য ‘আবার প্রলয়’-এর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। প্রতিটা চরিত্র এবং দৃশ্যকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে। কিন্তু বড়পর্দার পরিচালক ওয়েব ময়দানের পরিসরে পরবর্তী কাজের ক্ষেত্রে ‘টাইম অ্যান্ড স্পেস’-এর বিষয়টা যদি আরেকটু খেয়াল রাখেন তাহলে আরও ভাল। কিছুক্ষেত্রে অ্যাকশন সিকোয়েন্সগুলো অতিরঞ্জিত মনে হলেও মসালামুভি হিসেবে মন্দ লাগে না। অনেকটা দক্ষিণী ধাঁচ মিলল এক্ষেত্রে। তবে শেষ পাতে বলি, রাজ চক্রবর্তীর মাস্টারপিস ‘আবার প্রলয়’ ‘মাস্ট ওয়াচ’-এর তালিকায় দিব্যি রাখতে পারেন। কারণ ‘মন্দার’-এর পর বাংলায় এধরণের সিরিজ আবারও দেখা গেল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.