আকাশ মিশ্র: রহমানের সুরে ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ শুনে ক্ষুব্ধ বাঙালি। বিতর্কের পারদ যেন ক্রমেই চড়ছে। সোশাল মিডিয়ায় একের পর এক প্রতিবাদী পোস্ট মায়েস্ত্রোর বিরুদ্ধে। এর মধ্যেই মুক্তি পেয়েছে সেই ছবিটি, যেখানে রয়েছে এই গান। স্বাভাবিক ভাবেই কৌতূহল দানা বাঁধছে, ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরি ‘পিপ্পা’ (Pippa Review) ছবি কি আদৌ মন কাড়তে পারল? নাকি ‘লৌহ কপাটে’র রিমেকের মতোই তা আত্মাহীন?
প্রায় ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের ছবি পিপ্পা। পরিচালক রাজা মেনন এই ছবির শুরুতেই দর্শককে জানিয়ে দেন, তাঁর ছবি কোন আবহে তৈরি। অ্যানিমেশনে খুব অল্প পরিসরেই পরিচালক তুলে ধরলেন ‘৭১-এর বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। সঙ্গে টেনে আনলেন ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক এবং ভাসমান ট্যাঙ্ক ‘পিটি ৭৬’ যা কিনা ভারতের প্রথম ট্যাঙ্ক। এই ট্যাঙ্ককেই ডাকা হত ‘পিপ্পা’ নামে।
১৯৭১ সালের সেই লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাশে পেয়েছিল ভারতকে। গরিবপুরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য নিয়ে পাকিস্তানের ট্যাঙ্কের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল ভারতীয় ট্যাঙ্ক। ‘পিপ্পা’ ছবিটি মূলত তৈরি হয়েছে সেনা অফিসার বলরাম সিং মেহেতার লেখা বই ‘দ্য বার্নিং চ্যাফিস’ অবলম্বনে। মুক্তিযুদ্ধ তিনি একেবারে ফ্রন্ট থেকে দেখেছিলেন। তাঁর চোখ দিয়ে দেখা মুক্তিযুদ্ধকেই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে ‘পিপ্পা’তে। হয়তো এখানেই গন্ডগোলটা পাকিয়েছেন পরিচালক। বলরামের চোখ দিয়ে দেখা মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলতে গিয়ে, যুদ্ধের তাপ, সংগ্রাম, আত্মত্যাগকে ঠিকমতো তুলে ধরতে পারেননি। তেমনই তুলে ধরতে পারেননি এই যুদ্ধের সঙ্গে ভারতের আবেগকে। যদিও সংলাপে বার বার এসেছে, এই যুদ্ধ ভারত লড়ছে নিতান্ত মানবিক তাগিদে। তবে দৃশ্যায়নে কিংবা গল্প বলার ধরনে তা একেবারেই গায়েব।
‘পিপ্পা’ শুরু থেকেই যুদ্ধে আপনজন হারানো পরিবারের গল্প বলে। যে পরিবারের দুই ছেলে রাম ও বল্লি সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছে। পিপ্পা দুই ভাইয়ের সংঘাতের গল্প বলে। যেখানে ভাই রাম সেনাবাহিনীর নিয়মকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় আর অন্যদিকে ছোটভাই বল্লি (ঈশান খট্টর) রগচটা। সেনাবাহিনীতে থাকলেও, তাঁর জীবন উদ্দেশ্যহীন।
এই ছবি দেখতে দেখতে হৃতিক রোশনের ‘লক্ষ্য’ ছবির কথা মনে পড়তে পারে। কারণ, সেখানেও হিরোকে হিরো হয়ে ওঠার জন্য কার্গিল জয় করতে হয়েছিল। এখানে একই ভাবে এসেছে ‘৭১ -এর মুক্তিযুদ্ধ। পিপ্পা ছবিটিতে মুক্তিযুদ্ধ কম, বল্লি ওরফে বলরাম সিং মেহেতার নায়ক হয়ে ওঠার গল্পই যেন প্রাধান্য পেয়েছে। যা ক্রমশ একঘেয়ে হয়ে ওঠে। আর তাই ছবিটি দেখতে দেখতে একসময় আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে হয়। পরিচালক এমন একটি জ্বলন্ত প্রেক্ষাপটকে গল্প বলার জন্য বেছেও সামনে নিয়ে এলেন এক নায়কের গল্পকে! তা কি মানা যায়? ‘৭১-এর দেশভাগ, মুক্তিযুদ্ধের যন্ত্রণা, পাকিস্তানি সেনার হাতে নারীর অসম্মান, রিফিউজিদের কান্না- এসবই কেবল অ্যানিমেশন কার্ড হয়ে দাঁড়ায়! তবে একঝলকে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া হত্যার দৃশ্যও। কিন্তু তা এতই স্বল্প, কোনও প্রভাবই ফেলতে পারেনি। বাকি সময় ছবি জুড়ে শুধুই নায়কের জয়গান!
যদিও অভিনয়ের দিক থেকে এগিয়ে থাকবেন ঈশান খট্টর। কিন্তু ম্রুণাল ঠাকুরের রাধা চরিত্রকে সঠিক আকার দিতে পারেননি পরিচালক। সোনি রাজদান ও প্রিয়াংশু পেনউলিও, চন্দ্রচূড় রাজও তথৈবচ। ফলে ছবিটি ক্রমেই বিরক্তির কারণ হয়ে উঠতে থাকে। পাশাপাশি ছবিতে ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ যেভাবে এসেছে তাও বিরক্তিই দিয়েছে। আসলে শুধু রহমানের এই রিমেক নয়, ‘পিপ্পা ছবি পুরোটাই যেন আত্মাহীন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.