নির্মল ধর: হিমাচলের চোখ ও মন ভোলানো লোকেশন, পাহাড়ি রাস্তায় বাঁকে বাঁকে উন্মুক্ত প্রকৃতি, সেই সঙ্গে ভয় ধরানো জঙ্গল, আর শ্রীমতী রায় নামের চরিত্রটি(মমতা শংকর) যখন তন্ত্রসাধনায় মগ্ন হন তখন ছবির পরিমণ্ডলটাই যেন আরও বেশি রহস্যময় হয়ে ওঠে। ‘অন্তর্ধান’ (Antardhaan) পরিচালক অরিন্দম ভট্টাচার্য শুরু থেকেই রহস্যের সুন্দর এক আবহ তৈরি করে দেন।
স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে দু’দিনের জন্য বেড়াতে যেতে চায় জিনিয়া (মোহর চৌধুরী)। মেয়ের বেড়াতে যাওয়া নিয়ে প্রথমে আপত্তি থাকলেও পরে রাজি হয়ে যায় অনির্বাণ (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়)। জিনিয়া শুধু মাত্র স্কুলব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ে, বাড়ির সামনে অপেক্ষমান গাড়িতে উঠেও পড়ে। মা (তনুশ্রী চক্রবর্তী) একটিবারের জন্যও দেখলেন না, মেয়ে কার সঙ্গে গেল, বান্ধবীরা ছিল কিনা? প্রথম খটকা এখানেই! খটকা লাগে জঙ্গলের ভয় নিয়ে অকারণ রহস্যের বাতাবরণ তৈরির চেষ্টাতেও।তবে জিনিয়ার ‘অন্তর্ধান’ রহস্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বজায় রাখা হয়েছে সুগ্রথিত ভাবেই!
বাবা-মায়ের (পরমব্রত ও তনুশ্রী) একমাত্র সন্তান জিনিয়ার রহস্যজনক অন্তর্ধানের পর পুলিশ ও গোয়েন্দা নীলাদ্রি সেনের (রজতাভ দত্ত) গোয়েন্দাগিরির কাজে কোনও ফাঁক নেই। প্রাক্তন বিধায়ক ও ডাক্তার ব্রীজেন্দ্র সিংহের (হর্ষ ছায়া) নকল ওষুধের ব্যবসা, দিল্লির হাসপাতালে পাঁচটি শিশুর মৃত্যু, পাহাড়ি জায়গা কাসৌলিতে পরোক্ষে তাঁর দোর্দন্ড প্রতাপ, এমনকী ব্রীজেন্দ্রকে ধর্ষক হিসেবে দেখানোর কাজটি সুচারুভাবে দেখালেও তিন নাম্বার খটকা থেকেই যায়! দর্শক মনে প্রশ্ন জাগে, ডাক্তারের চেম্বার থেকে কাঁদতে কাঁদতে জিনিয়ার বেরিয়ে আসার দৃশ্যটি কি তাহলে সাজানো ছিল?
ঠগ, দুর্নীতিপরায়ণ, জাল ওষুধের কারবারি, বিধায়ককে শাস্তি দিতে যেভাবে জিনিয়ার অন্তর্ধান রহস্য ঘটানো হয়েছে, সেখানে এমন ত্রুটি থাকাটা উচিত নয়। ব্যস, এটুকু ত্রুটি না ধরলে, মানতেই হবে ‘অন্তর্ধান’ সত্যিই নাটক, রহস্য, থ্রিলিং মেজাজে জমিয়ে দেখার মত ছবি। রাতুল শংকরের অভিনব আবহ রহস্যের আমেজ এবং থ্রিলারের মজাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। চিত্রগ্রহণ, সম্পাদনার কাজ ছবির মুড এবং পরিবেশ তৈরিতে সাহায্যের হাত এগিয়ে দিয়েছে পরিচালককে। এবং অভিনেতারা তো বটেই! বিশেষ করে নীলাদ্রির চরিত্রে রজতাভ দত্ত তাঁর ছোট ছোট কমিক ছোঁয়া দিয়ে দর্শকের কাছে আলাদা হাততালি আদায় করে নেন। ব্রীজেন্দ্রর চরিত্রে খুব অল্প সময় পেয়েও হর্ষ ছায়া নজর কাড়েন।
বাবা-মায়ের চরিত্রে পরমব্রত ও তনুশ্রী দু’জনেই বেশ মধ্যবিত্ত সংসারের জীবনধারা বজায় রেখে বাস্তবানুগ অভিনয় করেছেন। দু-তিনটি নাটকীয় মুহূর্তে দু’জনেই খুবই সাবলীল ও স্বাভাবিক। তবে এই ছবির মূল কাঠামো, অর্থাৎ চিত্রনাট্য সত্যিই চলতি বাংলা ছবির থেকে একেবারেই আলাদা। মাঝে মাঝে মনে হতেই পারে বিদেশি কোনো ঘটনা, গল্প, বা ছবির ছায়া নেইতো এর পেছনে?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.