সুপর্ণা মজুমদার: “তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা মন জানো না…” একই অঙ্গে থাকে অনেক রূপ। একথা শুনেছেন নিশ্চয়ই। অনুভব করেছেন কখনও? জটিল ধাঁধার থেকেও জটিল মানুষের মন। কখনও মোহের জালে আটকে থাকে, আবার কখনও মায়ার বাঁধন তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রাখে। এই বাঁধনের কথাই তুলে ধরেছেন পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় (Kamaleswar Mukherjee)। ওয়েব দুনিয়ায় তাঁর এই সিনেম্যাটিক জার্নির দুই সম্পদ স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় (Swastika Mukherjee) এবং অনন্যা চট্টোপাধ্যায় (Ananya Chatterjee)। অভিনয়ের ময়দানে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলেননি।
কাহিনির কেন্দ্রবিন্দুতে অবশ্য রয়েছে ঋষি। সেই চরিত্রে অভিনয় করেছেন আনকোরা বিপুল পাত্র (Bipul Patra)। মুখ যত মিষ্টি, চোখ ততটাই প্রতিক্রিয়াপ্রবণ। ‘খাঁচার ভিতর’ যেমন ‘অচিন পাখি’ ছটফট করে, তেমনই অতীতের যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে ঋষি। মা মায়ার (অনন্যা) স্মৃতি সারাক্ষণ তাঁকে যন্ত্রণার চোরাবালিতে আটকে রাখে। এমন পরিস্থিতিতেই অরুণাদের (স্বস্তিকা) বাড়িতে পেইং গেস্ট হয়ে থাকতে শুরু করে। অরুণার বড় ছেলে আগে থেকেই বাইরে থাকত। ঋষি আসার আগে ছোটছেলেও বিদেশে চলে যায়। মেয়ে মিঠি উঠতি যৌবনের স্বপ্ন নিয়েই ব্যস্ত। এমন পরিস্থিতে খুব সহজেই অরুণার কাছে চলে আসে ঋষি। অরুণাও স্নেহান্ধ হয়ে ওঠে। ঋষির বাস্তব-কল্পনা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। ‘মোহমায়া’র (Mohomaya) পাঁচটি এপিসোডে যেন বড় কোনও ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছেন পরিচালক কমেলশ্বর মুখোপাধ্যায়। যে ঝড়ের গতি জুন মাসে টের পাওয়া যাবে।
হইচই (Hoichoi) অরিজিনাল সিরিজে কাহিনি, চিত্রনাট্য ও ক্রিয়েটিভ ডিরেকশনে সাহানা দত্তর (Sahana Dutta) ছোঁয়া বোঝা যায়। অমিত-ঈশানের সুর গল্পের নাটকীয়তার সঙ্গে মিশে গেছে। টুবানের সিনেম্যাটোগ্রাফি প্রশংসনীয়। কালারটোনকে ভাল ব্যবহার করেছেন তিনি। তবে সিরিজ বলেই যেত গল্পকে বেশি প্রসারিত করতে হবে, তার কোনও মানে নেই। কিছু কিছু দৃশ্য একটু বেশিই টানা মনে হয়েছে। অবশ্য স্বস্তিকা এবং অনন্যা যখনই ক্যামেরার সামনে এসেছেন, মন ছুঁয়ে গিয়েছেন। যে স্বস্তিকা ‘দুপুর ঠাকুরপো’দের বউদি হতে পারেন, সেই স্বস্তিকাই আবার অনায়াসে তিন বড় ছেলে-মেয়ের মা হিসেবে দিব্যি মানিয়ে যেতে পারেন। আবার বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারেন। এমন এলেম শুধু টলিউড কেন, বলিউডের অনেক অভিনেত্রীর নেই। দুর্ধষ শব্দটি অনন্যার ক্ষেত্রেই খাটে। যন্ত্রণার দৃশ্য বুক চিরে ভিতরে ঢুকে যায়। তাঁকে মায়া হিসেবে ক্যামেরার সামনে আনার জন্য কমলেশ্বরকে ধন্যবাদ। এমন অভিনয় বহুদিন চোখে পড়েনি। অরুণার স্বামীর চরিত্রে সুজন মুখোপাধ্যায় সহজাত। তবে তাঁর ভূমিকা অনেকটা ‘ডর’ সিনেমার সানি দেওলের মতো। মিঠি চরিত্রের অভিনেত্রীকে বয়সের তুলনায় একটু ছোট মনে হয়েছে। প্রতিভার কদর পেলে বিপুল অবশ্যই বিকশিত হবে। তবে বডি ল্যাঙ্গোয়েজের দিকটাতেও একটু নজর দিলে ভাল হয়। ছাই চাপা আগুনের মতো ‘মোহমায়া’র এই প্রথম মরশুম। যাঁর স্ফুলিঙ্গ শেষের এপিসোডে দেখা গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.