আকাশ মিশ্র: ছিপছিপে কোমর। চোখের চাউনিতে পুরুষের হৃদয়ে ঝড় তুলতে পারে রাজস্থানের ছোট্ট এক গ্রামের মেয়ে মিমি! এলাকাবাসীর কাছে মিমিই পরমসুন্দরী। পাঁচতারা হোটেলের বিনোদনের দায়িত্ব তাঁর হাতেই। নেচে গেয়ে তুফান তোলে মিমি। হিরোইন হতে চায়। বলিউডে যেতে চায়। দীপিকা (Deepika Padukone), আলিয়া (Alia Bhatt), অনুষ্কাদের (Anushka Sharma) এক হাত নিতে চায়। রণবীর সিংয়ের (Ranveer Singh) ছবির সামনে দাঁড়িয়ে অনর্গল কথা বলে চলে। বিন্দাস, হাসি মুখের এই মিমির জীবনে যে কখনও ঝড় আসতে পারে, তা আঁচও করতে পারে না কেউ। কিন্তু ঝড় আসে। মাতৃত্ব আসে। আত্মত্যাগ আসে। সংগ্রাম আসে। আর মিমি কখনও হেসে, কখনও চোখের জলে, কখনও লড়াই করে ঝড়ের ঝাপটা সামলেও নেয়।
পরিচালক লক্ষণ উতেকার ‘মিমি’ (Mimi) ছবিতে সারোগেসির গল্প ঠিক এভাবেই সাজিয়েছেন। কমেডি, ড্রামার ধাঁচে মাতৃত্ব, সিঙ্গল মাদারের কনসেপ্টকে খুব সহজে পৌঁছে দিয়েছেন দর্শকদের মধ্যে। যা কিনা এই ছবির আসল ম্যাজিক। খুব সরলভাবে, এক সরল গল্পের মধ্যে দিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে ধরেছেন পরিচালক। কিন্তু, এই ম্যাজিককে যিনি ছাপিয়ে গিয়েছেন, তিনি হলেন কৃতি স্যানন (kriti sanon)। এই ছবি যেন তাঁর জন্যই তৈরি হয়েছে।
কৃতি স্যানন আগেও প্রমাণ দিয়েছেন তিনি ভাল অভিনেত্রী। ‘বরেলি কি বরফি’ যার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। ছোট টাউনের গল্পের ছবিতে কৃতি যেন একেবারে পারফেক্ট। ‘মিমি’ ছবির ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটাই ঘটালেন কৃতি। মিমি চরিত্রকে একেবারে যেন আত্মস্থ করে ফেললেন কৃতি।
পঙ্কজ ত্রিপাঠী (Pankaj Tripathi) কতটা ভাল অভিনেতা। তা নতুন করে বলার দরকার নেই। পঙ্কজের কমেডি টাইমিং যে কত ভাল তা ফের প্রমাণ করলেন তিনি। তবে এই ছবিতে পঙ্কজ, কৃতিকে পুরোটাই সাপোর্ট করে গিয়েছেন। একজন বিচক্ষণ অভিনেতার ঠিক যা করা উচিত, ঠিক সেভাবেই। পঙ্কজ জানতেন, এই ছবি একেবারেই কৃতির। কিন্তু সেই ইগোর লড়াইয়ে না গিয়ে বরং কৃতিকে গ্রুম করেছেন। খোলা মাঠ দিয়েছেন অভিনয় করার জন্য। বহুদৃশ্যেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
মিমি একেবারেই অভিনয়ের ছবি। যার দায়িত্ব শুধুই কৃতি বা পঙ্কজের উপরে নয়। সহঅভিনেতা হিসেবে মিমির বন্ধু ‘সামার’ চরিত্রে সাই তামহানকারের অভিনয় বহু দৃশ্যে কৃতির অভিনয়কেও ছাপিয়ে যায়। এর সঙ্গে ঠিকঠাক তাল মিলিয়ে গিয়েছেন, মনোজ পাওয়া (Manoj Pawa), সুপ্রিয়া পাঠক (Supria Pathak)। বিদেশি দম্পতির চরিত্রে ইভলিন এডওয়ার্ডস ও আইডনের অভিনয়ও বেশ ভাল। রহমানের সুর ছবির মুডকে ধরে রাখে। বিশেষ করে ‘পরমসুন্দরী’ গানটি মনে থেকে যায়।
‘মিমি’ ছবির একটি দৃশ্যের কথা না বললেই নয়। মিমির কোলে সদ্য জন্মানো শিশু। ক্যামেরা সোজা মিমির মুখে ক্লোজআপ। কৃতি স্যানন এক দৃশ্যেই যেন বুঝিয়ে দিলেন তিনি এই ছবির সবচেয়ে স্ট্রং পয়েন্ট। আর পরিচালক বুঝিয়ে দিলেন, কোন দিকে ছবির গল্প এগোতে চলেছে।
এত সব ভাল থাকলেও, ‘মিমি’ ছবির মধ্যে খামতি রয়েছে কিছু। ছবির দ্বিতীয়ভাগে এডিটিং নিষ্ঠুর হলে ছবিটা আরও বেশি উপভোগ্য হত। বিশেষ করে শেষের আধঘণ্টা একটু বেশিমাত্রায় টেনেছেন পরিচালক। যেটা এড়িয়ে যাওয়াই যেত। এসব ত্রুটিকে পাশে রাখলে, ‘মিমি’ দেখার মতো একটা ছবি। ‘মিমি’ মারাঠী ছবি ‘মালা আই ভাচে’-র হিন্দি রিমেক। মারাঠি ছবিটি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল। শেষমেশ বলতে হয়, ‘মিমি’ ছবি দেখুন একমাত্র কৃতির অনবদ্য অভিনয়ের জন্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.