সুপর্ণা মজুমদার: রিভিউ করতে গেলে সবসময় যে নতুন সিনেমা কিংবা সিরিজ নিয়েই লিখতে হবে তেমন তো কোনও কথা নেই! ভাল কিছু নিয়ে আগ্রহ যে কোনও সময় জাগতে পারে। বিশেষ করে তা যদি ভারচুয়াল জগতের অন্যতম চর্চিত বিষয় হয়ে ওঠে। এই মুহূর্তে তাই হচ্ছে কেট উইনস্লেট (Kate Winslet) অভিনীত সিরিজ ‘মেয়ার অফ ইস্টাউন’ (Mare of Easttown) নিয়ে। কী এমন আছে ক্রাইম ড্রামা সিরিজে?
কারণ অনেক। তবে প্রথমেই যে নামটি এই প্রসঙ্গে বলতে হবে তা হল মেয়ার শিহান অর্থাৎ কেট উইনস্লেট। হলিউডের এই অভিনেত্রীর কথা বললেই অনেকের মনে ‘টাইটানিক’ সিনেমার স্মৃতি ভেসে ওঠে। সেই সিনেমার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, ব্রিটিশ অভিনেত্রীর পরিসর জেমস ক্যামেরনের সিনেমার থেকে অনেক অনেক বেশি। বহু আগের এক সাক্ষাৎকারে কেট জানিয়েছিলেন তিনি চরিত্রের কাঠিন্যকে খুব ভালবাসেন। পছন্দের সেই ময়দানেই ক্রেগ জোবেলের পরিচালনায় খেলার সুযোগ পেয়েছেন কেট। তাতেই বল বাউন্ডারির পারে পাঠিয়ে দিয়েছেন অভিনেত্রী। একবার নয় বহুবার। অনেক অভিনেত্রীকেই দেখেছি বয়সের ভাঁজ লুকোতে চড়া মেকআপ ব্যবহার করেন। সেই চেষ্টাই করেননি কেট। পুলিশের গোয়েন্দার রুক্ষতা, সন্তান হারানোর যন্ত্রণা তাঁর চেহারার বলিরেখায় ফুটে উঠেছে। চেহারার স্থূলতা একবারও বেমানান লাগেনি।
রহস্য গল্প মানেই জটিলতা। সেই জটিলতার ফাঁদেই অনেক সময় গল্পের শ্বাসরোধ হয়ে যায়। আসল গল্প কোথায় যে হারিয়ে যায় তা কেউ বলতে পারে না। অতিনাটকীয়তায় গল্পের রোমাঞ্চ বেঘোরে প্রাণ হারায়। ‘মেয়ার অফ ইস্টাউন’ সিরিজে ঠিক তার বিপরীত কাজটিই করেছেন পরিচালক ক্রেগ জোবেল। ঠিক স্লো পয়জনের মতো দর্শকের মাথায় গল্পের নেশা ঢুকিয়ে দিয়েছেন। কেটি বেলির (কেইটলিন হাউলাহান) নিখোঁজ হওয়ার রহস্য, এরিন ম্যাকমেনামিনের খুনের রহস্য (কেইলি স্পেনি), মেয়ারের নিজের ছেলের আত্মহত্যার শোক, খুন নিয়ে নিজের মানুষদের উপরই সন্দেহ থেকে নাতিকে নিজের কাছে রাখার জন্য লড়াই – এত কিছু রয়েছে সাতটি এপিসোডের মধ্যে। কিন্তু প্রত্যেকটির আলাদা সত্ত্বা রয়েছে।
সিনেমা হোক বা সিরিজ, তার বড় সম্পদ হয় বলিষ্ঠ পার্শ্ব চরিত্র। সেখানে প্রথমেই বলতে হয় মেয়রের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করা জিন স্মার্টের কথা (Jean Smart)। আক্ষরিক অর্থেই ‘স্মার্ট পারফরম্যান্স’ ৬৯ বছরের আমেরিকান অভিনেত্রীর। মা ও মেয়ের অম্লমধুর এই সম্পর্কের সঙ্গে অনেকেই নিজের মিল খুঁজে পেতে পারেন। মেয়ারের মেয়ে শুভানের চরিত্রে অ্যাঙ্গাউরি রাইসের অভিনয়ও প্রশংসনীয়। কেটের পাশে আলাদা করে নজর কাড়াটাই তাঁর কৃতিত্ব। লোরি রসের চরিত্রের অসহায়তা যেন জুলিয়্যান নিকোলসন ছাড়া কেউ ফুটিয়ে তুলতে পারতেন না। বন্ধুত্ব আর প্রেমের মাঝেও যে কোনও সম্পর্কের অস্তিত্ব থাকতে পারে তা মেয়ার আর ডিটেক্টিভ কলি জ্যাবেলের (ইভান পিটার্স) রসায়নে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
প্রত্যেক সিনেমার নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য থাকে। তবে আমার ব্যক্তিগতভাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রক্তমাংসের চরিত্র দেখতে ভাল লাগে। আপনারও যদি সেই ভাল লাগা থাকে। তাহলে বুঝতে পারবেন, পুলিশ মানেই ‘দাবাং’ নয়। তাঁদেরও ভালমন্দ থাকে। রক্তাক্ত দেহ, সন্তানের শোকে কাতর বাবা-মাকে দেখলে তাঁদের ভিতরেও কিছু একটা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। নাতিকে নিজের কাছে রাখতে প্রয়াত ছেলের প্রেমিকার বাড়িতে নিষিদ্ধ মাদক লুকিয়ে রেখে আসে মেয়ার। তার জন্য সাসপেন্ডও হয়। এখানেই সে বিদেশের মাটিতে থেকেও আপন হয়ে ওঠে। ভুল-ঠিকের গণ্ডিতে তাকে বাঁধা যায় না।
সিনেমা হোক বা সিরিজ, তাতে ক্যামেরা ও সম্পাদনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ‘মেয়ার অফ ইস্টাউন’-এর ক্ষেত্রে সম্পাদনার মুন্সিয়ানাই বেশি চোখে পড়েছে। তার সঙ্গে বাড়তি পাওনা আবহ সংগীত। প্রথমেই ফিলাডেলফিয়ার মফস্বল এলাকার কোলাজের দৃশ্যটি মন ভরিয়ে দেয়।
সব শেষে মেয়ার চরিত্রের একটি অসাধারণ সংলাপ লিখতে চাই। আর তা অযথা ভাবানুবাদ করব না। আশা করি, পাঠক মার্জনা করে ইংরাজিতেই পড়ে নেবেন, আর তাঁদের ভাল লাগবে।
“Doing something great is overrated cause then people expect that from you… all the time. What they don’t realize is that you are just as screwed up as they are.”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.