নির্মল ধর: মালয়ালি সুপারস্টার মোহনলাল পরিচালক প্রিয়দর্শনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই ‘মারাক্কার’ ছবির পরিকল্পনা করেছিলেন ১৯৯৬ সালে। চিত্রনাট্য লেখেন টি দামোদরণ। ১৯৯৯ সালে একবার ছবিটি তৈরির জন্য প্রযোজক পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন প্রিয়দর্শন। বিগ বাজেটের ছবির জন্য অর্থলগ্নি করতে কেউ তখন রাজি হননি। পরে আবার ২০১৭ সালে নতুনভাবে চিত্রনাট্য লিখে ড্রাফট করা হয়। সেবছরই শুটিং শুরু হয় রামোজি ফিল্ম সিটিতে। শেষ হয় ২০১৯ সালের মার্চ মাসে।
একশো কোটি টাকার ছবি ‘মারাক্কার: লায়ন অফ দ্য অ্যারাবিয়ান সি’ (Marakkar: Lion of the Arabian Sea)। বিশাল ক্যানভাস। সময়টাও কালিকট উপকূলে পর্তুগিজ ব্যবসায়ীদের আক্রমণের। ছবির ভিজ্যুয়াল এফেক্টের দায়িত্ব সামলেছেন সাবু শিরিন। ২০২০ সালের মার্চ মাসে ছবিটির মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোভিডের কারণে তা মুক্তি পেল গত ২ ডিসেম্বর। তবে তার মধ্যে রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক জিতেছে ‘মারাক্কার’।
ইতিহাসের এক সত্যি ঘটনাকে কল্পনা ও ফিকশনের চেহারা দিয়ে চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন পরিচালক প্রিয়দর্শন এবং আনি সাসি। প্রধান চরিত্র কুঞ্জলি মারাক্কার ধর্মে মুসলিম। কিন্তু জামোরিনের হিন্দু রাজা সোমার্থি কুঞ্জলিকেই তাঁর নৌবাহিনীর প্রধান করেন। মারাক্কারের সাহস, বীরত্ব এবং মানবিকতার কাহিনি সারা রাজ্যজুড়ে। ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে আসা পর্তুগিজ জলদস্যুদের রুখতে মারাক্কারই যে একমাত্র ভরসা তা নিয়ে দ্বিমত ছিল না হিন্দু রাজার। কিন্তু মন্ত্রী-আমাত্যদের মধ্যে বিরোধ থাকবেই, থাকবে রেষারেষি। সেটা চিত্রনাট্যে যথাযথ জায়গা পেয়েছে। রাখতে হয়েছে প্রেম। হয়তো এগুলো সবই বাস্তব ও কল্পনার মিশেল।
কিন্তু পরিচালক প্রিয়দর্শন আলোচকচিত্রী থিরু এবং ভিজ্যুয়াল এফেক্টে কারিগর সাবু শিরিন এপিক ফ্রেমে আগাগোড়া গল্পকেই বেঁধে রেখেছেন। ঘোড়দৌড়, তলোয়ারের লড়াই, আগুনে তীর-ধনুকের ছোড়াছুড়ি, গোলা-বারুদের দাপট — সবটাই লার্জার দ্যান লাইফ। অনেক সময়ই দর্শকের ‘বাহুবলী’র কথা মনে পড়তে পারে।
কুঞ্জলি কীভাবে শক্তি আর বুদ্ধির পর্তুগিজদের পরাজিত করে সেটা একটু দেখতে ক্লান্তিকর হলেও চোখ মেলে থাকতেই হয় প্রযোজনার বৈভব ও জাঁকজমকের জন্য। তরঙ্গ-ক্ষুব্ধ সমুদ্রে নৌবাহিনীর লড়াই সত্যিই দেখার মতো। এই ছবির শ্রেষ্ঠত্ব শুধু প্রোডাকশন ভ্যালুতে। গল্পে-কাহিনিতে কোনও নতুনত্ব নেই। মোহনলাল তাঁর বিশাল চেহারা নিয়েও মারাক্কারকে যথেষ্ট অ্যাকশন নায়ক করে তুলেছেন। অভিনয়েও তিনি তুলনাহীন। সুনীল শেট্টি বা নেদুমুদি ভেনু, প্রভু বা চিনা শিল্পী চিয়াং সকলেই মোহনলালের ‘মারাক্কার’-কে উজ্জ্বলতর করে তোলার কারিগর মাত্র। সর্বভারতীয় সেরা ছবি হওয়ার তেমন কোনও সামাজিক বা রাজনৈতিক কারণ ছিল না এই ছবির পক্ষে। তবুও রাষ্ট্রপতি পদক পেল ছবিটি। হয়তো বা নায়ক মোহনলালের ক্যারিশমার জন্যই। এই শহরে ক’জন বাঙালি দর্শক ভারত সেরা ছবিটিকে আগ্রহ নিয়ে দেখলেন জানি না। তবে, কিছু মালয়ালি দর্শক তো ছিলেনই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.