চারুবাক: ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈ ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সৈনিক। মহিলাদের মধ্যে সম্মুখসমরে শহিদ হওয়া বোধ হয় প্রথম। তাঁর জীবনবৃত্তান্তও রহস্য ও রঙিন।
বেনারসের মণিকর্ণিকা ঘাটে সদ্যোজাত শিশুটিকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন এক পেশোয়া। ঘাটের এক পূজারী ব্রাহ্মণই তাঁর নাম দেন মণিকর্ণিকা। পালিত বাবার শাসনে ও শিক্ষায় মণি বড় হয়ে ওঠেন আত্মসাহসী এক ‘যোদ্ধা’ হয়ে। আর যৌবনে পা দিতেই বিয়ে হয়ে যায় ঝাঁসির রাজপুত্র নাচ-গানের সমঝদার গঙ্গাধর রাওয়ের (যিশু) সঙ্গে। বিয়ের পর হয় তাঁর নতুন নাম লক্ষ্মী। মধ্য ও পশ্চিম ভারতে ইংরেজরা তখন ছোট ছোট করদ রাজ্যগুলো কবজা করতে সচেষ্ট। ঝাঁসির ‘রানি’ হওয়ার পরই স্বামীর উৎসাহ ও সহচর্যে লক্ষ্মীবাঈ হয়ে ওঠেন ‘স্বাধীনতা’-র প্রতীক। দেশপ্রেমের এক জ্বলন্ত শিখা। ইতিহাসকে আশ্রয় করলেও পরিচালক কঙ্গনা রানাউত কাহিনীর মধ্যে শ্রুত গল্প-গাথা এবং নিজস্ব কল্পনার রং মিলিয়ে লক্ষ্মীবাঈকে রুপোলি পর্দায় ব্যবসায়িক উপযোগী করে তোলায় কোনও ত্রুটি রাখেননি। ত্রুটি রয়েছে ইতিহাসে। অবশ্য ছবি শুরুর আগেই ডিসক্লেমার দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
[ নওয়াজেরই ছবি, কিন্তু দর্শকের কাছে কতটা খোলসা হল ‘ঠাকরে’-র জীবন? ]
আসলে ‘মণিকর্ণিকা’ আদ্যপান্ত কঙ্গনার ছবি। তাঁর অসিচালনার কেরামতি। ঘোড়া ছোটানোর চালিয়াতি যুদ্ধক্ষেত্রে রণহুংকার তোলা- সবটাই কঙ্গনা করেছেন লার্জার দ্যান লাইফের স্টাইলে। ‘বাহুবলী’ ছবিতে দৃশ্য-পরিকল্পনার জাঁকজমক দেখার পর তাই ছবির বহিরঙ্গ তেমন আকর্ষণ করে না বটে, কিন্তু বুন্দেলখণ্ড, ঝাঁসি, গোয়ালিয়র প্রভৃতি জায়গার রাজপ্রাসাদের ইন্টেরিয়র, পরিকল্পিত পোশাকের জৌলুস অবশ্যই নজর কাড়ে। রাজা গঙ্গাধর রাওয়ের অকালমৃত্যুর পর তরুণী বিধবা লক্ষ্মী প্রচলিত নিয়ম ভেঙে ঝাঁসির প্রকৃত রানি হয়ে ওঠার পর্বটি সুন্দরভাবে বুনেছেন পরিচালক। তবে তাঁতিয়া টোপি (অতুল), গার্ডনের (ড্যানি) চরিত্রগুলোর আরও স্পেস পাওয়া প্রয়োজন ছিল। যিশু সেনগুপ্ত অভিনীত গঙ্গাধর রাওয়ের চরিত্র অবশ্য উপযুক্ত জায়গাই পেয়েছে। অভিনয় তো যিশু বেশ ভালই করেছেন। দেখতেও ভারী সুন্দর লাগছিল। মজা লাগল ক্যাপ্টেন গর্ডন, হিউরোজ এবং তাঁদের সাঙ্গপাঙ্গদের কেমন ঝরঝরে হিন্দিতে সংলাপ বলতে দেখে। হাস্যকর রীতিমতো। ভাগ্যিস রানির দেশপ্রেম বস্তুটিকে হাস্যকর করে তোলেনি। ব্যাকগ্রাউন্ডে ‘ম্যায় রহুঁ ইয়ে না রহুঁ, ভারতকো রেহনা চাহিয়ে’ গানটির একাধিকবার প্রয়োগ সুন্দর। এবং আবহ রচনাতেও ত্রিভূজ শংকর-এহসান-লয় জমিয়ে দেন।
এই ছবির আসল চমক তো কঙ্গনা নিজেই। তাঁর জীবন্ত এবং দৃপ্ত অভিনয়ই রানি লক্ষ্মীবাঈকে সহনীয় নয়, উপভোগ্য করে। শুধু ফিজক্যাল অভিনয় নয়, তিনি অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশেও বেশ সপ্রতিভ ও স্বাভাবিক। বক্স অফিস সাফল্যের ব্যাপারে ‘মণিকর্ণিকা’ তাঁর কামব্যাক ফিল্ম না বলেও অভিনয়ে তিনি প্রমাণ করে দিলেন একার কাঁধে ছবি টেনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা তাঁর আছে।
[ নান্দনিক মোড়কে একান্তই সৃজিতের ছবি হয়ে উঠল ‘শাহজাহান রিজেন্সি’ ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.