Advertisement
Advertisement

Breaking News

Maharaja

‘মহারাজা’র জয়জয়কার, থ্রিলারে মোড়া পিতৃত্বের আখ্যানে অনবদ্য বিজয়-অনুরাগ

৫০তম ছবিতে চোখ ধাঁধানো সেঞ্চুরি বিজয় সেতুপতির!

Maharaja review: Vijay Sethupathi roars in his 50th movie
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:July 17, 2024 7:15 pm
  • Updated:July 17, 2024 7:15 pm

বিশ্বদীপ দে: মাত্র ২০ কোটি টাকায় তৈরি ‘মহারাজা’ ছবিটি বক্স অফিসে ঝড় তুলেছিল। ২০২৪ সালের নিরিখে এটাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয়কারী তামিল ছবি। উপার্জন প্রায় ১০৮ কোটি! এদিকে ওটিটি মঞ্চেও তা গোটা দেশের দর্শকের মন জয় করেছে। নায়ক হিসেবে বিজয় সেতুপতির ৫০তম ছবিটি নিয়ে আলোচনা সোশাল মিডিয়ায় অহরহ চোখে পড়ছে। কিন্তু ঠিক কোথায় ‘ম্যাজিক’ তৈরি করে দেয় ছবিটি? গান নেই, আইটেম ডান্সের প্রশ্নও নেই, নেই লাগাতার অ্যাকশন। কিন্তু দেখতে বসলে এক আশ্চর্য কৌশলে চিত্রনাট্য কীভাবে যেন কলার চেপে ধরতে থাকে। আর সেটাই এই ছবির সবচেয়ে বড় শক্তি।

যে বই একবার হাতে তুলে নিলে না পড়ে নামিয়ে রাখা যায় না তাকে ‘আনপুটডাউনেবল’ বলে। এই ছবিটি সেই গোত্রেই পড়ে। অথচ ভেবে দেখলে ছবির শুরুটা নেহাতই সাধারণ। তুবড়ে যাওয়া ডাস্টবিন (যার নাম নাকি ‘লক্ষ্মী’) হারিয়ে গিয়েছে বলে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছে নিরীহ এক প্রৌঢ়। স্বাভাবিক ভাবেই এমন অভিযোগ শুনে অফিসাররাও থ। এর জন্য কেউ থানায় আসে নাকি? কিন্তু প্রৌঢ়ের প্রবল আর্জি, প্রয়োজনে সে পাঁচ, পাঁচ কেন সাত লক্ষ টাকাও খরচ করতে রাজি! কেন? কী আছে ওই ডাস্টবিনে? নাকি এর আড়ালে রয়েছে অন্য কিছু? দক্ষিণী ছবি দেখার অভ্যাস যাঁদের রয়েছে তাঁরা জানেন প্লট টুইস্টে এই ধরনের ছবি কত দূর পৌঁছে যেতে পারে। এই তামিল ছবিটিও ব্যতিক্রম নয়। ফলে পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মতো দর্শক যত এগোতে থাকেন ততই নতুন নতুন চমক তাঁর অপেক্ষায় থাকে।

Advertisement

Advertisement

[আরও পড়ুন: কেজরির জামিন মামলা, প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রসঙ্গ তুলে সরব আইনজীবী]

মহারাজার চরিত্রে বিজয় সেতুপতি (Vijay Sethupathi) স্তব্ধ করে দেন। শান্ত নিরীহ এক নাপিতের ভিতরে যেন স্থির হয়ে রয়েছে বিস্ফোরণের আগের মুহূর্ত। যত সময় যায়, ততই সেই বিস্ফোরণের আঁচ মিলতে থাকে। ‘জওয়ান’ ছবিতে খলনায়কের চরিত্রে যেন পুরোটা দিতে পারেননি বিজয়। কয়েকদিন আগেই দেখেছিলাম তাঁর ‘মেরি ক্রিসমাস’ ছবিটি। সেখানেও তিনি অসাধারণ। কিন্তু এই ছবিতে তাঁর অভিনয় আরও সহজ, আরও লক্ষ্যভেদী। যা বুঝিয়ে দেয়, এই ধরনের স্টোরিলাইনেই তিনি সবচেয়ে বেশি সাবলীল।

এবং অনুরাগ কাশ্যপ (Anurag Kashyap)। ছবির খলনায়ক তিনি। সেলভম নাম্নী এক নিষ্ঠুর দস্যুর চরিত্রে তাঁর অভিনয় দেখলে বিশ্বাস হতে চায় না, আদপে এই মানুষটিকে আমরা পরিচালক হিসেবে চিনি। ছবির একেবারে ক্লাইম্যাক্সেও তিনি অনবদ্য। যদিও মনে হয়, ছবির বাকি অংশের অভিনয়ের তুলনায় এখানে আরও একটু অভিনয়ের সুযোগ তাঁর ছিল। সেটুকু অতৃপ্তি বাদ দিলে আগাগোড়া তিনি শিহরণ জাগান মনে। বিজয়, অনুরাগ ছাড়াও বাকিরা সকলেই দুরন্ত অভিনয় করেছেন।

[আরও পড়ুন: ভোট বিপর্যয়ের জেরে মুষল পর্ব উত্তরপ্রদেশ বিজেপিতে! যোগীর সঙ্গে ‘দূরত্ব’ ডেপুটি কেশব মৌর্যর]

ছবির আবহসঙ্গীত অসাধারণ। বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক বি আজানেশ লোকনাথ সুনাম বজায় রেখেছেন। বিভিন্ন সময়ে উত্তেজনা ও বিষাদকে সুরের এমন চমৎকার ভাবে বুনে দেওয়া হয়েছে, তা দৃশ্যগুলির ঔজ্জ্বল্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ছবিতে কমেডি দৃশ্যগুলিও ভালো। তবে বাণিজ্যিক ছবির মশলা মেনে কিছু বাড়াবাড়ি নিশ্চয়ই রয়েছে। এমন এক গল্প হাতে থাকার পরও কেন সেপথে হাঁটতে হল পরিচালক নিথিলান স্বামীনাথনকে, সেই প্রশ্ন থেকে যায়। চিত্রনাট্যের বুনোট এই সব জায়গায় খানিক টোল খায়। তবুও সব মিলিয়ে গতি কোথাও থমকায় না। একবার শুরু করে করলে নিরলস ঝরনার মতো তরতরিয়ে তা দর্শককে পৌঁছে দেয় ক্লাইম্যাক্সে। যেন একটি নিপুণ তরবারি লক্ষ্যে পৌঁছে থরথরিয়ে কেঁপে উঠতে থাকে।

এই ছবি আসলে দুই কন্যার বাবার গল্প। শেষের বিষণ্ণ চমক তাই দর্শককে অস্থির করে তোলে। ছবির মূল সুর লুকিয়ে রয়েছে এখানেই। নিছক রিভেঞ্জ ড্রামার মোড়কেই সীমাবদ্ধ থাকলে ছবি শেষের রেশ এতটা আকুল করতে পারত না। এবং অবশ্যই আলাদা করে বলতে হবে ফিলোমিন রাজের সম্পাদনার কথা। ছবিতে টাইমলাইনকে যেভাবে ঘেঁটে দেওয়া হয়েছে, তা এলোমেলো তাসের মতো উড়তে উড়তে সঠিক দিকে গিয়ে ক্লাইম্যাক্সে মসৃণ ল্যান্ডিং করে। ফলে ছবিটি আগাগোড়াই তার আকর্ষণ বজায় রাখতে সক্ষম হয়।

বলিউড নাকি দক্ষিণী ছবির কাছে পিছিয়ে পড়ছে। একথাটা গত কয়েক বছরে বার বার উঠে এসেছে সোশাল মিডিয়ায়। সেই আলোচনার এখানে সুযোগ নেই। কেবল এটুকু বলার, নিছক নায়কের ক্যারিশমার দিকেই ফোকাস না রেখে গল্পটা সৎভাবে বলতে পারাই হয়তো ক্রমশ টিনসেল টাউনকে পিছিয়ে দিচ্ছে। সেভাবে ভেবে দেখলে ‘মহারাজা’ একটি নিখাদ বাণিজ্যিক ছবিই। নানা অবাস্তবতা এই ছবিতেও রয়েছে। কিন্তু সেই ‘নায়ক’ ছবিতে শর্মিলার সহযাত্রীর মতোই বলে উঠতে ইচ্ছে করে, ”যখন দেখি ভাই, তখন কিন্তু ওসব খেয়াল থাকে না।” এই ভানহীনতাই দক্ষিণ ছবির মূল শক্তি। ‘মহারাজা’রও (Maharaja)।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ