Advertisement
Advertisement

Breaking News

পঙ্কজ-বীরেন্দ্র বনাম হেমন্ত-উত্তম, ‘মহালয়া’য় উঠে এল অনেক অজানা ইতিহাস

সমালোচকরা কী বলছেন?

Mahalaya film review
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:March 2, 2019 4:20 pm
  • Updated:March 2, 2019 4:57 pm  

চারুবাক: মধ্য সত্তরের ‘জরুরি’ অবস্থার সময়ে কোনও এক ‘বিগ বস’-এর নাম ভাঁড়িয়ে শশী সিনহা নামের এক আমলা (প্রসেনজিৎ) কীভাবে ও কেমন কৌশলে বাঙালির তৎকালীন সংগীত, শিক্ষা ও সংস্কৃতি চেতনাকে অপমান করেছিলেন, তারই ফিকশনাইজড ডকুড্রামা হল সৌমিক সেনের ‘মহালয়া’। ১৯৫৮-এ রেকর্ড করা আকাশবাণীর অনুষ্ঠান ষাট পেরিয়েও একইরকম জনপ্রিয়।

পুজোর নীলাকাশ এখনও বীরেন্দ্রকৃষ্ণের মন্ত্রস্বরে উচ্চারিত সংস্কৃত শ্লোক আর পঙ্কজ মল্লিকের সুরে দেবীর আবাহনী গান না শুনলে যেন ফ্যাকাশে লাগে। পুজো এল না মনে হয়। ওই অনুষ্ঠানের এপিকত্বকে ব্যঙ্গ করে ‘অনন্য সাধারণ’ কিছু করে তোলার দর্পিত ভঙ্গিতে প্রবাদপ্রতীম দুই প্রতিভাকে সরিয়ে আকাশবাণী দিল্লির ওই আমল এবং তৎকালীন আকাশবাণী কলকাতার সাহেবকর্তা যে অপকাণ্ডটি করেছিলেন- তার অনেকটাই পিছনের ইতিহাসকে গবেষণা করে তুলে এনেছেন তন্ময় মুখোপাধ্যায়। আর সেই গবেষণালব্ধ তথ্যকেই চিত্রনাট্যে সাজিয়েছেন সৌমিক। এই শহরে পিরিয়ড পিস বানানোর ঝক্কি অনেক। ক্যামেরাকে প্রায় বাইরে বার করতেই পারেননি তিনি। আকাশবাণীর ইন্টেরিয়র, বীরেন্দ্রকৃষ্ণের বাড়ি এবং উত্তমকুমারের বসার ঘরের মধ্যেই ঘুরছে তাঁর ক্যামেরা। তবে সময় ও ঘটনাগুলোকে তুলে আনার আন্তরিক প্রয়াসকে সাধুবাদ দিতেই হয়।

Advertisement

রুক্ষ বাস্তবের প্রতিচ্ছবি, ঘাত-প্রতিঘাতে দীর্ণ ‘সোনচিড়িয়া’-য় অভিনয় বড় প্রাপ্তি ]

দুই প্রধান পুরুষকে সরিয়ে নতুন সাজে নতুনভাবে ‘দুর্গা দুর্গতিহারিণী’ অনুষ্ঠানের জন্য আনা হয়েছিল গানের জগতের বড়দা হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এবং বাংলা সিনেমার ম্যাটিনি আইডল উত্তমকুমারকে। সৌমিকের চিত্রনাট্য মুম্বইতে ‘ব্যস্ত’ হেমন্তর পেশাদারি অস্বস্তি এবং আত্মবিশ্বাসের জায়গাটি যেমন ধরেছে, তেমনই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব-অস্বস্তিকে উত্তমকুমারের স্পষ্ট করেছে। উত্তম কখনওই চাননি বীরেন্দ্রকৃষ্ণের জুতোয় পা গলাতে। সত্যি বলতে কি, হেমন্তই তাঁকে অযথা স্তুতির ছলে ‘রাজি’ করিয়েছিলেন। আর জনৈক হিন্দু মহারাজ অঘোর সামন্তর সঙ্গে পঙ্কজ মল্লিকের সরাসরি সংঘাতের কথাও আমরা জানতাম। চিত্রনাট্যে অত্যন্ত দাপুটেভাবেই সেই পর্বটি এনেছেন পরিচালক। যে কারণে পঙ্কজ মল্লিককে অতি জনপ্রিয় সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘সংগীত শিক্ষার আসর’ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। আকাশবাণীর সেই ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়কে ডকুফিচারের আকারে এভাবে তুলে রাখার জন্য আগামী প্রজন্ম এই ছবির প্রযোজক-পরিচালক, দু’জনকেই মনে রাখবে।

‘মহালয়া’ ছবির আর্কাইভ্যাল মূল্য এখানেই। যদিও ছবির বানানোয় নির্মাণগত খামতি আছে। প্রধান চার-পাঁচটি চরিত্র বাদে বাকি সহ-শিল্পীদের কাজ অনেকাংশেই অ্যামেচারিশ, আকাশবাণীর ইন্টিরিয়র নির্মাণে তেমন কুশলতার ছাপ নেই। রবীন্দ্রনাথের শেষযাত্রায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণের ভাষ্য পর্বটির চিত্রগ্রহণ খুবই অবহেলায় তৈরি। অথচ সৌমিকের চিত্রনাট্য ওই সময়ের ঘটনাবলীর চিত্রায়ণে ও সংলাপের ব্যবহারে ব্যঙ্গ ও বিদ্রুপের খোঁচাগুলিতে রীতিমতো সাহসী। বাংলার ‘সেনসেবল ট্যালেন্টদের’ একজোট করে ‘সিনেমা অন দ্য এয়ার’ বানাতে গিয়ে পুরো আকাশবাণীর সারা মুখে যে তীবের সমালোচনার মাছির আক্রমণ ঘটেছিল, তার ফলে সেই ‘সিনহা’ আমলাকে পুজোর আগেই ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-র পুনঃসম্প্রচার করাতে হয়েছিল সেই ‘বিগ বস’-এর আদেশেই। বড়দা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে অসুস্থ পঙ্কজ মল্লিকের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল। স্বীকার করতে হয়েছিল, ‘আপনার ছায়ার বাইরে আর যাব না।’ মহিষাসুরমর্দিনীর পুনঃসম্প্রচার শুনে উত্তমকুমারও বলে উঠেছিলেন, ‘বুকের পাথরটা নেমে গেল। সত্যিই পুজো এল এবার।’ যে উত্তম নিজের প্রশংসা শুনে বলেছিলেন ‘মানুষের ভালবাসা পেলাম। কিন্তু পুজোর পরিবেশ এল কি?’

এই ছবির আরেকটা বড় দিক অভিনয়। শুভাশিস বা যিশু কেউই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ বা উত্তমকুমার হয়ে উঠতে চাননি। মানুষ দু’টির স্পিরিটটাকে ধরে নিজেদের অভিনয়টাই করেছেন। খুবই সাবলীল ও সুন্দর তাঁদের কাজ। পঙ্কজ মল্লিক ও হেমন্তের চরিত্রে শুভময় চট্টোপাধ্যায় এবং সপ্তর্ষি রায়ও দাপট দেখিয়েছেন। জয়ন্ত কৃপালিনীর (স্টিভেনসন) ও প্রসেনজিৎ (শশী সিনহা) এক কথায় যথাযথ। দেবজ্যোতি মিশ্রকে ধন্যবাদ। তিনি নস্ট্যালজিয়ায় আশ্রয় না নিয়ে মহালয়ার পরিবেশকে এক বাহারি আবহে তৈরি করেছেন এবং ছবির শেষ পর্বে ফিরে এসেছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ-পঙ্কজ মল্লিকের স্তোস্ত্র সংগীতের চিরকালীন যুগলবন্দি।

দর্শকদের মন কতটা ছুঁতে পারল ‘লুকাছুপি’? ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement