উপাসনা সেন: পুজোর ছবির লড়াইটা প্রায় অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন কোয়েল মল্লিক। সে ‘মিতিন মাসি’ হোক বা ‘বনি’। পর্দায় তাঁর আবির্ভাবের ক্যারিশমা এমনই, যে ছবি শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে মনে হয়- জিতুন মাসি। কাহিনি এগোলেই দর্শক তাঁর সঙ্গে মিলে যায় প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে চলা সমস্ত সংগ্রামে। বুদ্ধিদীপ্ত গোয়েন্দার চরিত্রে তিনি নিজেকে দারুণভাবে তৈরি করে ফেলেছেন। এবার অরিন্দম শীল পরিচালিত ‘জঙ্গলে মিতিন মাসি’ দেখতে দেখতে সেই অনুভব আরও দৃঢ় হয়। থ্রিলার আর রহস্য সন্ধানে অরিন্দম শীলের দক্ষতা এতদিনে প্রমাণিত, এ ছবিতে তার ছাপ রয়েছে।
এবারের মূল গল্প বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের বার্তা নিয়ে। অরণ্যের অধিকার কার? মানুষের না বন্যপ্রাণের? অরণ্যবাসীর না বহিরাগতদের? এই প্রশ্নের ব্যাপ্তি বিরাট। সুচিত্রা ভট্টাচার্যর ‘সারান্ডায় শয়তান’ অবলম্বনে এই ছবিটি, এমনই সব প্রশ্নকে স্বল্প পরিসরে পরিচালক তুলে ধরেছেন গোয়েন্দা গল্পের আড়ালে। প্রায় দু’দশক আগে প্রকাশিত ‘সারান্ডায় শয়তান’ ছিল মিতিন মাসির গোয়েন্দাগিরিতে চোরাশিকারিদের নাস্তানাবুদ হওয়ার গল্প। এত বছরে পাল্টে গিয়েছে চোরাশিকারের ধরন এবং ক্রমশ বেড়েছে বন্যপ্রাণ সম্পর্কে সচেতনতা। কিন্তু একইসঙ্গে জটিল হয়েছে বন্যপ্রাণ শিকারের রাজনীতিও। সেখানে জুড়েছে অরণ্যবাসী মানুষের প্রসঙ্গ। অরিন্দম শীলের এই ছবি নিছক গোয়েন্দা গল্পে সীমাবদ্ধ নয়, ধরেছে এই গভীর প্রশ্নটিকেও। কোয়েল আগেই মিতিনমাসি চরিত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই প্রতিষ্ঠা আরও জোরদার হয়েছে ‘জঙ্গলে মিতিন মাসি’ ছবিতে। এই প্রজ্ঞাপারমিতা বা মিতিন কেবল ইন্টেলিজেন্ট নয়, অ্যাকশনেও দক্ষ।
ছোটরা দারুণ আনন্দ পাবে কোয়েলের অ্যাকশন অবতার দেখে। আর ভালো লাগবে জঙ্গল ভ্রমণের সঙ্গে অ্যাডভেঞ্চারের ককটেল। পাহাড়, নদী, আঁকাবাকা পথ, জঙ্গল, পুজোর আবহে অন্যধরনের স্বাদ দেবে। গল্পে সারান্ডায় শিকারচক্রে আন্তর্জাতিক চক্রান্তের আভাস ছিল মাত্র এই ছবিতে তা স্পষ্ট হয়েছে সিনেমাটির প্রয়োজনে। স্বামী পার্থর (শুভ্রজিৎ দত্ত) সঙ্গে মিতিনের রসায়নও চমৎকার ফুটে উঠেছে সিনেমায়। টুপুরের চরিত্রে লেখা চট্টোপাধ্যায় সাবলীল।
ভালো লাগে কমলিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। অসীম রায়চৌধুরি মিতিনের অবণীদার ভূমিকায় একদম যথাযথ। ছোট চরিত্রে বেশ ছাপ ফেললেন সামিউল আলম। একটি ইন্টারেস্টিং চরিত্রে অরিজিৎ দত্তকে পাওয়া যায়। অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের ক্যামেরা চমৎকার। বিক্রম ঘোষের আবহ ছবির মেজাজকে নিখুঁতভাবে ধরেছে। শুভা মুদগলের গান ছবিতে অন্য মাত্রা যোগ করেছে। ভালো লাগে ইমন চক্রবর্তীর গানটিও। পুজোয় প্রসেনজিৎ, দেব, আবিরের ছবির মাঝে কোয়েলের ‘মিতিন মাসি’ যেন নারীশক্তির মুখ। ছোট-বড় সকলে মিলে এই অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ ভালোই লাগবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.