সায়নী সেন: নানা বিতর্ক, আলোচনা, চোখরাঙানিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মুক্তি পেল ‘কেদারনাথ’৷ শুধু মুক্তি পেল, বললে বোধহয় ভুল হয়৷ তার চেয়ে বলা ভাল প্রথম দিনেই দর্শকদের মন জয় করল মুক্কু-মনসুরের প্রেম৷ সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত তারকাখচিত ‘ঠাগস অফ হিন্দোস্তান’ কিংবা রজনীকান্তের ‘২.০’ দর্শকদের হতাশ করেছিল৷ তবে অভিষেক কাপুরের ‘কেদারনাথ’ হতাশ করেনি সিনে অনুরাগীদের৷ বরং মুক্কু-মনসুরের প্রেমকাহিনি কখনও কাঁদাল আবার কখনও হইহই করে হাসির রসদ জোগাল তাঁদের৷
দুই ভিনধর্মী যুবক-যুবতীর মধ্যে গড়ে ওঠা প্রেমকে দিয়ে শুরু ‘কেদারনাথ’-এর পথচলা৷ কখনও পরিবারের বাধা, আবার কখনও সমাজের চোখরাঙানি এমনকী প্রাকৃতিক বিপর্যয় পেরিয়ে প্রেমকে টিকিয়ে রাখার অদম্য লড়াই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে গোটা ছবিটিকে৷ হিন্দু পণ্ডিত পরিবারের মেয়ে মুক্কু৷ এই চরিত্রের মাধ্যমে বলিউডে ডেবিউ করেছেন সইফ-অমৃতাকন্যা সারা আলি খান৷ কেদারনাথ মন্দির লাগোয়া এক গ্রামেই বাড়ি তাঁদের৷ বাবা, মা আর দিদির সঙ্গেই বেড়ে ওঠে মুক্কু৷ কিশোরী বয়সের গণ্ডি পেরোনো মুক্কু প্রাণোচ্ছ্বল৷ কোনও বাধাই যেন তার কাছে বাধা নয়৷ এমন সময়েই তাঁর মন চুরি করে মনসুর৷ সুশান্ত সিং রাজপুতকেই দেখা গিয়েছে এই চরিত্রে৷ কেদারনাথে আসা তীর্থযাত্রীদের ঘোড়ায় কিংবা পিঠে করে মন্দিরে পৌঁছে দেওয়াই কাজ তার৷ ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর মাকে নিয়েই সংসার শান্ত স্বভাবের মনসুরের৷ এহেন মনসুরকেই ভাল লেগে যায় মুক্কুর৷ সকাল হতে না হতেই প্রতিদিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে মুক্কু৷ পাহাড়ি রাস্তা ধরে কখনও ঘোড়া আবার কখনও নিজের পিঠে চড়িয়ে লক্ষ্যহীন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়াই রুটিনে পরিণত হয়ে গিয়েছিল মনসুরের৷ সম্পর্কে প্রথমে আপত্তি থাকলেও, মুক্কুর মতো এমন উচ্ছ্বল মেয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার সাধ্য ছিল না তার৷ যত সময় এগিয়েছে, ততই একে অপরের ঘনিষ্ঠ হতে থাকে মুক্কু-মনসুর৷ সিনেমার প্রথমার্ধ জুড়ে ধীরে ধীরে সারা-সুশান্তের প্রেমকেই পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক৷
নায়ক-নায়িকার প্রেমকাহিনি দিয়ে যে দর্শকদের মন জয় করা যাবে না, তা ভালই জানেন পরিচালক৷ দ্বিতীয়ার্ধে গল্প বাঁক নেয় অন্যদিকে৷ মনসুরের সঙ্গে সম্পর্কের কথা জানতে পারে মুক্কুর হবু স্বামী কুল্লু৷ ভিনধর্মী দুই ছেলেমেয়ের প্রেমের সম্পর্কে পাঁচিল হয়ে দাঁড়ায় মুক্কুর পরিবার৷ হিন্দু পণ্ডিতদের রোষের মুখে পড়ে মনসুর৷ মুক্কুর মোহ কাটাতে মারধরও করা হয় তাঁকে৷ কিন্তু কোনও পরিস্থিতিতেই আলাদা হতে নারাজ মুক্কু-মনসুর৷ সামাজিক অবস্থানে যাতে কোনও আঘাত না লাগে তাই রাতারাতি মুক্কুর বিয়ের বন্দোবস্ত করে ফেলেন তাঁর বাবা৷ বিয়ে হলেও, শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার আগে চরম সিদ্ধান্ত নেয় মুক্কু৷ হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করে সে৷ সব বাধা অগ্রাহ্য করে অসুস্থ মুক্কুর সঙ্গে দেখা করতে আসে মনসুর৷
আর এই দৃশ্য দেখেই দর্শকরা ভেবেছিলেন এই বুঝি আর পাঁচটা প্রেমকাহিনির মতো মুক্কু-মনসুরের প্রেম পরিণতি পেয়ে যাবে৷ কিন্তু না, দর্শকদের ভাবনা মিথ্যে প্রমাণ করে এখানেই গল্পে রয়েছে টুইস্ট৷ মুক্কু-মনসুরের প্রেমকাহিনি থেকে ছবি মোড় নেয় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের নির্মমতার দিকে৷ ২০১৩ সালে উত্তরাখণ্ডের বন্যার ভয়াবহ রূপ খুব যত্ন করে তুলে ধরা হয়েছে ছবিতে৷ গ্রাফিক্সের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা ধ্বংসপুরী প্রেক্ষাগৃহে বসে থাকা দর্শকদের অতীতের স্মৃতিকে চাঙ্গা করে দিয়েছে৷ প্রকৃতি-মানুষের যুদ্ধ হলমুখীদের চোখে জল এনে দিতে বাধ্য৷
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের রেশ কাটিয়ে বছর তিনেক পর আবারও স্বাভাবিক ছন্দে ফেরে উত্তরাখণ্ড৷ শুরু হয় পুণ্যার্থীদের আনাগোনা৷ দেখা পাওয়া যায় মুক্কুর৷ কিন্তু কোথায় গেল মনসুর? সে উত্তরের খোঁজে হলমুখী আপনাকে হতেই হবে৷ মুক্কুর চরিত্রে সারা অনবদ্য৷ নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন সুশান্ত সিং রাজপুত৷ শুরু থেকে ছবিতে এতটুকু একঘেয়েমি নেই৷ এক্কেবারে শেষ দৃশ্যে ছবির কিছুটা তাল কেটেছে৷ শেষ দৃশ্যটি আরও একটু এগোলে বোধহয় আরও মন ছুঁয়ে যেত দর্শকদের৷ তবে গ্রাফিক্সের কারসাজি, সারা-সুশান্তের অভিনয় মিলিয়ে ‘কেদারনাথ’ নিরাশ করেনি দর্শকদের৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.