সন্দীপ্তা ভঞ্জ: ‘দেবী’, ১৩ মিনিটের এই শর্ট ফিল্মই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে। পরিচালক বঙ্গতনয়া প্রিয়াঙ্কা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রয়াসকে নেটদুনিয়ার একটা ক্ষুদ্র অংশ বাঁকাভাবে ‘ফেমিনিজম’-এর তকমা দিলেও, ‘দেবী’র বার্তা কিন্তু সার্বজনীন। যে দুনিয়ায় আশির বৃদ্ধা থেকে আট মাস তথা আট বছরের খুদে মেয়েকেও পুরুষের লালসার শিকার হতে হয়, সেখানে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া দরকার ছিল।
খাওয়া-খাওয়ি, সাম্প্রদায়িক হিংসা-হানাহানির মাঝেও যদি একটা ছোট্ট জ্বলন্ত দুনিয়া থাকে, সেই জগৎ সেসমস্ত নারীদের, যারা রোজ কোথাও গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হচ্ছে আবার কারও বা শরীর ছিঁড়ে-খুবলে খাচ্ছে ‘পুরুষ সিংহ’রা। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ এবং নির্মমভাবে খুনের শিকার হচ্ছেন মহিলারা।
দিল্লির নির্ভয়া থেকে হায়দরাবাদ ধর্ষণ কাণ্ডই হোক কিংবা কাঠুয়া রেপ কেসের রোমহর্ষক ঘটনা, কাঁপিয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। কিন্তু তাতেও কি বর্তমান পরিস্থিতির কোনও হেরফের হয়েছে? ১৩ মিনিটের এই শর্ট ফিল্ম সেই প্রশ্নই ছুঁড়েছে। ছবিতে দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন শ্রেণীর, ধর্মের এবং ভিন্ন বয়সের মহিলারা নৃশংসভাবে ধর্ষিত হয়ে মারা গিয়েছেন। মৃত্যুর পর তাদের সবার আশ্রয় হয়েছে একটি ঘরে। এদিকে দিনের পর দিন সেই ঘরে তো সদস্যদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যার জেরে অস্তিত্ব সংকটে ভুগছেন সেই ঘরেরই আশ্রিত মহিলারা। প্রত্যেকটা মুহূর্তে কলিং বাজলেই তাদের প্রত্যেকের বিরক্তির উদ্রেক হয়। আমাদের সমাজে ধর্ষিতাদের দিকে যেমন আঙুল তুলে একঘরে করে রাখা হয়, সেই সমস্ত নারীদের হয়েই সমাজের দিকে পালটা আঙুল তুলেছেন পরিচালক। প্রিয়াঙ্কা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত ‘দেবী’ সেই প্রচলিত চিন্তাধারাকেই বিঁধেছে।
প্রসঙ্গত, ছবিতে ৯ অভিনেত্রী এবং পরিচালক ছাড়াও সিনেমা তৈরির প্রায় সমস্ত বিভাগের সদস্যই মহিলা। শুধু প্রযোজক, আর্ট ডিরেক্টর এবং সহযোগী কয়েকজন সদস্য পুরুষ। কাজল, শ্রুতি হাসান, নেহা ধুপিয়া-সহ অনেক পরিচিত মুখকেই দেখা গেল এই ১৩ মিনিটের ছবিতে। তবে তারকাখচিত কাস্টিংয়ের ঝসলানিতে ম্লান হয়নি ছবির বিষয়বস্তু।
গত কয়েক বছরে নারীচরিত্র কেন্দ্রিক সিনেমা তৈরিতে বলিউড বেশ সাহসী পদক্ষেপ নিচ্ছে। পাশ্চাত্যের আঙিনা পেরিয়ে ‘ওমেন সেন্ট্রিক’ ফিল্মের ট্রেন্ড এখন বলিউডেও ঢুকে পড়েছে। বায়োপিক থেকে শুরু করে যে কোনওরকম গল্পে প্রাধান্য পাচ্ছে নারীচরিত্ররা। কারণ, সমাজের অগ্রগতিতে নারীদের অবদান যে পুরুষদের থেকে কোনও অংশে কম নয়! আর সেই বার্তা তুলে ধরতেই ‘দেবী’র মতো একটা নাতিদীর্ঘ তীক্ষ্ণ ‘আলপিন’ দরকার ছিল। যা ডুডল পেইন্টিংয়ের মতো মজ্জায় মজ্জায় বাস্তব চিত্রটা এঁকে দিতে পারবে। যে দেশে দুধের শিশু থেকে মরণাপণ্ণ বৃদ্ধা, কেউই নিরাপদ নয়, সেই কঠোর বাস্তবটা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকিয়ে দিতেই পরিচালক প্রিয়াঙ্কার ‘দেবী’।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.