সন্দীপ্তা ভঞ্জ: সদ্য হইচই-এর প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে ‘নষ্টনীড়’। কেমন হল? পড়ুন রিভিউ-
ক্ষমতার আস্ফালন
সম্পর্ক ভাঙাগড়া জীবনের একেকটা পর্যায়ে আসতেই থাকে। কিন্তু মাঝপথে যদি থেমে যায় কোনও সম্পর্কের গতি? বাঁক নেয় অন্য পথে? তাহলে কোনও মানুষের পক্ষেই তা সুখকর নয়। ‘নষ্টনীড়’-এর অপর্ণার কাহিনি ঠিক এরকম। ‘তথাকথিত’ সুখী দাম্পত্যের মাঝে কখন যে ফাঁক গলে চোরাস্রোতের মতো পরকীয়া ঢুকে পড়েছে, সে জানতেও পারেনি। সম্বিত ফিরেছে স্বামীর বিরুদ্ধে শোনা #MeToo অপবাদে।
অপর্ণার স্বামী ঋষভ পেশায় অধ্যাপক। সমাজেও বেশ যশ-খ্যাতি। সোসাইটিতে সম্মান আছে। আচমকাই একদিন ছাত্রীর আনা #MeToo মামলায় জড়িয়ে জেলে যায়। স্বামীর পাশে থেকে ঠাঁয় টিটিপক্ষীর মতো সমর্থন জোগাতে থাকে অপু। সংসার বাঁচাতে তখন সে মরিয়া। তবে মেয়েদের জ্বালা-যন্ত্রণার আঁচ ঠিকই টের পেয়েছিল। তাই স্বামীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কাছে মাথা নত না করেও বাড়ি ফিরে স্বামীকে মুখের ওপর প্রশ্ন করার সাহস রেখেছিল সে।
অপুর সংসার
সুগৃহিনী অপর্ণার সাজানো সংসার। উচ্চশিক্ষিত, মেধাবী পড়ুয়া হয়েও সংসার আগলায় সে। সমাজে প্রতিষ্ঠিত, বিত্তশালী স্বামী। মিষ্টি মেয়ে। কিন্তু কখন যে চোরাবালির অতল গহীনে তলিয়ে গেল সেসব বিশ্বাস, ভরসা, আশা, সংসারসুখ… অপু টেরই পেল না। কখন তাঁর ভালবাসার নীড় নষ্ট হয়ে গেল সংসারি অপু বুঝতেই পারল না। তবে পায়ের তলার মাটি সরে গেল সেদিন, যেদিন ঈশ্বরতুল্য, বন্ধুসম বরের কুকীর্তির আঁচ পেল। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল তাঁর বিশ্বাস।
যে শাড়ির আঁচল দিয়ে সযত্নে হেঁশেলের মশলার কৌটো মুছে সাজাতো, সেই আঁচল দিয়েই শ্রীঘরে থাকা স্বামীর জন্য দৌঁড়োদৌঁড়ি করে ঘর্মাক্ত চোখমুখ মুছতে হল। অপর্ণার চরিত্রটা আপাত দৃষ্টিতে কোমল বলে মনে হলেও তা দৃঢ়। তাই যখন স্বামীর কুকীর্তির জানতে পারে, নিজে থেকে আইনিভাবে সরে আসতে চায়। কিন্তু বিয়ে ভাঙা কি অতই সহজ? সমাজের রক্তচক্ষুকে পাত্তা না দিলেও ব্যক্তিগত ‘বিবেক দংশন’ তো থেকেই যায়।
অপর্ণার লড়াই
অপর্ণার ভূমিকায় সন্দীপ্তা সেন ভাল। পরিস্থিতির শিকার হয়ে গল্পের মোড় ঘোরাতে যে অভিনয়ের মাধ্যমে হাতে রাশ টেনে রেখেছিলেন তিনি, তাঁর জন্য বাহবা প্রাপ্য তাঁর। ক্ষমতাবিলাসী অধ্যাপকের চরিত্রে সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়কে বেশ মানিয়েছে। যথাযথ অভিনয়। সন্দীপ্তার সঙ্গে প্যারালালি অঙ্গনা রায় ভাল অভিনয় করেছেন। সন্দীপ্তার বান্ধবী ও তাঁর প্রেমিকের চরিত্রে রুকমা রায় ও অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় যথাযথ। ঢিমে আঁচে গল্পের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হয়ে উঠেছেন দুজনেই।
সিরিজে মোট ৬টি এপিসোড। প্রথম তিনটে পর্ব ঢিলে তালে হলেও শেষ ৩টে বেশ টানটান। আসল ট্যুইস্ট তিন নম্বর পর্ব থেকেই শুরু। সেক্ষেত্রে মনে হল হঠাৎ করেই যেন ৩ নম্বর পর্ব থেকে শেষ করার তাড়াহুড়ো লেগে গেল। তবে শেষ হয়েও কৌতূহলের রেশ থেকে যায়। দ্বিতীয়বার অন্তঃসত্ত্বা হওয়া অপর্ণা কি ‘ঠুনকো’ সংসারের নাগপাশ থেকে বেরতে পারবে, নাকি স্বামীর দোষের জন্য যে মেয়েটিকে পেটের সন্তান হারিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়েছে, তার বিচারের জন্য মাথা উঁচু করে লড়বে?
ইউএসপি
পরিচালক অদিতি রায়, গল্পকার সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায় সেই প্রশ্ন জিইয়ে রেখেই ‘নষ্টনীড়’-এ ইতি টানলেন। শেষপাতে বলে রাখি, ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে…’, ‘মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু…’, সমাজের এই প্রচলিত বস্তাপচা রদ্দিমার্কা ধ্যানধারণা বদলের জন্য কড়া নেড়ে গেল ‘নষ্টনীড়’ সিরিজ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.