নির্মল ধর: অর্ণব রিঙ্গো বন্দ্যোপাধ্যায় (Arnab Riingo Banerjee), নিজেকে ‘রিঙ্গো’ বলতেই পছন্দ করেন। আর পছন্দ করেন চলতি বাংলা সিনেমার ধারার বাইরে কিছু করতে। অবশ্যই সেখানে বাণিজ্যিক ভাবনা একেবারেই থাকে না এমন নয়। রিঙ্গোর বাণিজ্যিক ধারণা ও ভাবনা একটু, একটু কেন? অনেকটাই হাইফাই স্টাইলের। আধুনিকতার প্রযুক্তির প্রয়োগের ভিত্তিতে রিঙ্গো এখনও টালিগঞ্জের প্রথম সারিতে। বেশ ক’বছর পর তাঁর নতুন ছবি ‘কর্মা’ (Karma) মুক্তি পেল OTT প্ল্যাটফর্ম আড্ডাটাইমসে (Addatimes)। কলকাতার পাশাপাশি মফস্বল এলাকাগুলিতেও দর্শকের অভাবে একাধিক সিনেমা হল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে টেকস্যাভি রিঙ্গোও ওয়েবের পথে হেঁটেছেন। ঘরের নিশ্চিন্ত আরামে আয়েশে বসে দেখার ছবিই বটে! দু’পাত্র সঙ্গী হলেও মন্দ হবে না।
ছবির কেন্দ্রীয় বিষয় প্রেম, প্রেমের নামে প্রতারণা। প্রেম, পরিণয়, প্রতারণা থেকে প্রতিশোধ – এ সবই নাকি মানুষের কর্মফল! অন্তত পরিচালক, কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার, আলোকচিত্রী সম্পাদক রিঙ্গো তেমনটাই দেখতে চেয়েছেন। ছবির লোকেশন দক্ষিণের শৈলশহর কোদাইকানাল। চোখজুড়ানো একটি বাংলো টাইপের বাড়ি। হোম স্টে হিসেবে সেটা চালু। মালকিন এক সুন্দরী তরুণী সঞ্জনা (পৃথা সেনগুপ্ত)। আছে তাঁর বৃদ্ধা মা, যাঁকে দেখা যায় না। উপস্থিতিটুকু বোঝা যায় শুধু। এই বাংলোর প্রকৃত মালিক ক্যাপ্টেন বোস ক’বছর আগে আত্মহত্যা করেছেন বাড়ির ব্যালকনি থেকে পড়ে। হোম স্টে’তে একে একে একাধিক প্রেমিক-প্রেমিকা, হবু দম্পতি আসে আর উধাও হয়ে যায়। সব শেষে আসে সিদ্ধার্থ (সাহেব ভট্টাচার্য) নামের এক হবু লেখক, সঙ্গী তাঁর প্রেমিকা। সঞ্জনা আতিথেয়তায় কোনও ত্রুটি রাখে না, অথচ আবার খুন! আবার প্রতিশোধ? কেন? সেই প্রশ্নের জবাব পেতে ‘কর্মা’ একবার দেখতেই হবে।
রিঙ্গোর গল্প বলার কৃতকৌশল দর্শককে চেয়ারের হাতলে আটকে রাখবে। তাঁর আলোকচিত্রের পরিকল্পনা, রহস্য জমিয়ে দেওয়ার নাটুকে ভাবনা, প্রেম ও যৌনতার মিছরি মার্কা মিশ্রণ সত্যিই দেখার মতো। আর্ট ফিল্ম বানানোর কোনো ভনিতা নেই। পরিষ্কার ব্যবসাই তাঁর ছবি তৈরির মন্ত্র। এক ঝাঁক নতুন মুখকে দিয়েও প্রশংসনীয় কাজ বার করে নিয়েছেন পরিচালক। প্রধান চরিত্রে পৃথা (Pritha Sengupta) অবশ্যই দর্শকের নজরে আসবেন। সিদ্ধার্থর চরিত্রে সাহেব ভট্টাচার্য (Shaheb Bhattacherjee) তাঁর শিশুসুলভ অ্যাপিয়ারেন্স নিয়ে মন্দ নন। এছাড়া বিধান, রিতা, রাইমা, ম্যাক্স, রাধিকা নামের চরিত্রগুলিতে নতুন শিল্পীরা কিন্তু বেশ জমিয়েই কাজ করেছেন। থিম সং হিসেবে “অচেনা শহরে মানুষ মরে, পৃথিবী বদলে যায়…” গানটির ব্যবহার অর্থবহ।
আসলে প্রেম, প্রতারণা, প্রতিশোধ নিয়ে এক বিচিত্র কাণ্ডকারখানার বাণিজ্যিক প্লেট সাজিয়েছেন রিঙ্গো। এখন অপেক্ষা তাঁর ‘কর্মফল’ দেখার। তবে হ্যাঁ, OTT প্ল্যাটফর্মে একবার দেখার পর দর্শকের হাতের বাটন কি আর রিপ্লে করতে চাইবে? না করলে সেটাও কী হবে দর্শকের “কর্ম” এবং পরিচালকের “কর্মফল”?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.