Advertisement
Advertisement

Breaking News

Asur 2

Asur 2 Review: ঘোর কলিতে অসুর আসলে কে! উত্তর কি আদৌ দিল রোমাঞ্চে ভরা ‘অসুর ২’?

যে বিন্দুতে প্রথম সিজন শেষ হয়েছিল, সেখান থেকেই দ্বিতীয় সিজন শুরু করেছেন পরিচালক।

Here is the review of web series Asur 2 released on Jio Cinema | Sangbad Pratidin
Published by: Sulaya Singha
  • Posted:June 5, 2023 9:07 pm
  • Updated:June 5, 2023 9:07 pm  

সরোজ দরবার: অসুর শব্দটির গায়ে লেগে আছে নানারকম অনুষঙ্গ। দেবতা বনাম অসুরের যে সাধারণ দ্বান্দ্বিক ভাবনা, তার বাইরেও অসুর নিয়ে অনেক ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ আছে। জনজাতির পরিচয়, পরাজিতের অবদমিত ইতিহাসের মতো গূঢ় বিষয়ও উঠে আসে এই সূত্রে। তবে, পরিচালক অনি সেন তাঁর ‘অসুর’ ওয়েব সিরিজের দ্বিতীয় পর্বে মঙ্গল-অমঙ্গলের প্রচল প্রকল্পটিকে তুলে নিয়েই এগিয়েছেন। প্রথম সিজন যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা জানেন মিথ ও হত্যা মিলেমিশে এমন এক রহস্যময় গোলকধাঁধা তৈরি হয়েছিল, যা চুম্বকের মতো দর্শককে টেনেই রাখেনি, বরং দর্শককে অঙ্ক কষতে বাধ্য করেছিল। অসুর আসলে কে? নানা ঘটনার বিন্দু মিলিয়ে দর্শক সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। বেশ কিছুটা সময় নিয়েই এবার তার উত্তর নিয়ে হাজির হয়েছেন পরিচালক ও কাহিনিকার।

সিরিজে অসুর আসলে কে, সে-উত্তর জানার আগে বরং জেনে নেওয়া যাক, কেউ কীভাবে অসুর হয়ে উঠতে পারে? শ্রীগীতায় অর্জুনকে এর ব্যাখ্যা দিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জানাচ্ছেন,

Advertisement

অশাস্ত্রবিহিতং ঘোরং তপ্যন্তে যে তপো জনাঃ৷
দম্ভাহঙ্কারসংযুক্তাঃ কামরাগবলান্বিতাঃ৷৷
কর্শয়ন্তঃ শরীরস্থং ভূতগ্রামমচেতসঃ ।
মাঞ্চৈবান্তঃশরীরস্থং তান্ বিদ্ধ্যাসুরনিশ্চয়ান্ ।।

অর্থাৎ, দম্ভ, অহংকার, কামনা, আসক্তিযুক্ত বলগর্বিত যে সব লোক অন্তর্যামী রূপে দেহমধ্যস্থ আমাকে (কৃষ্ণকে বা স্বয়ং ঈশ্বরকে) ক্লিষ্ট করে শাস্ত্রবিধি-বিরুদ্ধ অতি উগ্র তপস্যা করে থাকে, তাদেরকেই আসুরবুদ্ধিবিশিষ্ট বলে চিহ্নিত করা যায়। ঈশ্বর তো সর্বপ্রাণের মধ্যেই আছেন। এই অসুরগোত্রের মানুষ তাঁরাই, যাঁরা স্বদেহে ও পরদেহে অবস্থিত আত্মরূপী ঈশ্বরকেই দ্বেষ করে থাকে। কিন্তু ঘটা করে যে এত কিছু করে থাকে এই আসুরিবুদ্ধি ব্যক্তিরা, তার কারণটা কী? শ্রীগীতার উত্তর, ‘অসত্যমপ্রতিষ্ঠং তে জগদাহুরনীশ্বরম্’। অর্থাৎ, এদের মত হল জগতে সত্য বলে কিছু নেই। সকলই অসত্য। ধর্মাধর্মের ব্যবস্থা নেই, এবং সেই ব্যবস্থাপক হিসাবে ঈশ্বর বলেও কেউ কোথাও নেই। আমরা বুঝতে পারি, অসুর কোনও কষ্টকল্পনা নয়। বরং মানুষই হয়ে উঠতে পারে অসুর। শ্রীগীতা যেভাবে অসুরকে বর্ণনা করেছে, আধুনিক সময়ে যদি সেই ভাবনাকে কোনও রক্তমাংসের রূপ দিতে হয়, তবে ‘অসুর ২’ সিরিজের শুভ যোশী চরিত্রটি অবিকল তাই-ই। তার ‘তপস্যা’য় ক্লান্তি নেই। আধুনিক প্রযুক্তিতে তার দখল সর্বোচ্চ পর্যায়ে। সে একনিষ্ঠ, তীব্র বুদ্ধিমান। কিন্তু তার এই পুরো তপস্যাই ‘শাস্ত্রবিধিবিরুদ্ধ’। মানুষের অন্তঃস্থ মানবতাকে সে স্বীকার করে না। বরং তার বিশ্বাস- ঘটনা পরম্পরায় এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করা যায়, যে বিন্দুতে পৌঁছে মানুষ তার মানবতাকে অস্বীকার করতে তৈরি হয়ে যায়। এমনকী হত্যা করতে পারে তার ঈশ্বরকেও। মানুষ তার বিশ্বাস, সম্পর্ক, শুভবোধ, অনুভূতি, সমানুভূতির জন্য যে গর্ব অনুভব করে, আসলে তা এক ছলনা মাত্র। আর এসব আছে বলেই মানুষ পীড়িত। সেই ক্লেশ থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব। তাই মানুষ ও মানুষের সভ্যতাকে অতিক্রম করারই সাধনা করে সে। আর তার হাতিয়ার হয়ে ওঠে আধুনিক প্রযুক্তি।

[আরও পড়ুন: চলন্ত বাসে হস্তমৈথুন: জেলমুক্তির পর অভিযুক্তকে মালা পরিয়ে সংবর্ধনা মেনস অ্যাসোসিয়েশনের!]

এই সমাজের কর্তৃত্ব যাঁদের হাতে তাঁরা যেমন অনেক সময় সত্যের আদল রচনা করেন, অনেকটা সেরকম ভাবেই অসুর রচনা করে তার নিজস্ব সত্যের পৃথিবী। ন্যায়-নীতি-নৈতিকতা ঘটনাচক্রে তার সঙ্গেই জড়িয়ে পড়ে, তবে তার নিয়ন্ত্রণ থাকে অসুরের হাতেই। প্রযুক্তি এসে মানুষকে খাটো করে আসলে করে তুলেছে বহু তথ্যের সমাহার। সেই বিপুল তথ্য বিশ্লেষণ করলে একজন মানুষ অন্যজনের চোখের সামনে প্রায় নগ্ন হয়ে ওঠেন। অর্থাৎ মানুষের নিজস্বতা, গোপনীয়তা বলে আর কিছু থাকে না। তার চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে বলে দেওয়া যায়, আগামীতে সে কী করবে। এই বিপুল তথ্যের বিশ্লেষণের ভার কাঁধে তুলে নিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আর তথ্য জোগান দেওয়ার ভার নিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। যেখানে মানুষ স্বেচ্ছাতেই তার যাবতীয় তথ্য তুলে দিচ্ছে। কখনও অনুমোদন নিয়ে কখনও না নিয়ে মানুষের তথ্য তুলে নিয়ে এইসব প্ল্যাটফর্ম মানুষের ভবিষ্যতকে নিয়ন্ত্রণ করতে চলেছে। ফলে মানুষ নিজেই যেন বিভ্রান্ত। এর সঙ্গে যদি জুড়ে দেওয়া যায় ‘ডিপফেক’ প্রযুক্তি, তবে পোস্ট ট্রুথের মাধ্যমে মানুষে মানুষে বিভেদ-বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়া যায় অনায়াসে। এই বিভ্রান্ত, দিকভ্রষ্ট মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে তখন আর অসুবিধা হয় না। অসুরের ‘তপস্যা’ ঠিক এই জায়গাতেই। প্রযুক্তির সহায়তা নিয়েই সে প্রমাণ করতে চায়, জগতে সত্য বলে কিছু নেই, ধর্ম বলে কিছু নেই, ঈশ্বর বলেও কিছু নেই।

Asur2

ঠিক যে বিন্দুতে প্রথম সিজন শেষ হয়েছিল, সেখান থেকেই দ্বিতীয় সিজন শুরু করেছেন পরিচালক। কন্যা হারানো নিখিল নায়ারকে (বরুণ সোবতি) ধরে গল্প এগিয়েছে। ধনঞ্জয় রাজপুত (আরশাদ ওয়ারশি) গোড়াতে এসব থেকে সরে যেতে চেয়েছেন অনেক দূরে, কিন্তু পারেননি। ফলত ঘটনা পরম্পরায় আবার জড়িয়ে পড়েছেন তিনি। আর অসুরের বিরুদ্ধে মানুষের লড়াইয়ে, তিনিই হয়ে উঠেছেন প্রধান মুখ। বাকি চরিত্ররাও তাদের ভূমিকা পালন করেছে গল্প এগিয়ে নিয়ে যেতে। ওয়েব সিরিজের চরিত্র মেনেই প্রতিটি পর্বের বিন্যাসকে কায়দা করে সাজিয়েছেন পরিচালক। যেখানে গোড়াতে অসুর হয়ে ওঠার ইতিবৃত্ত বিধৃত হচ্ছে। আর এক-একটা পর্ব শেষ হচ্ছে এমন এক প্রশ্ন বা সংকটের মুহূর্তে যেখান থেকে দর্শকের পরিত্রাণ নেই। গোয়েন্দা অফিসাররা এক একটা ছোট তথ্য অবলম্বন করে কীভাবে সত্যের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন তা খুব নিখুঁত ভাবেই তুলে ধরা হয়েছে। চমৎকার অভিনয় সিরিজে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছে। একটিবারও মনে হয়নি, এ কোনও বানানো গল্পের দ্বন্দ্ব। বরং গল্প যেমন মানুষ-প্রযুক্তি-প্রবৃত্তি নিয়ে মৌলিক প্রশ্নের কাছে পৌঁছেছে, অভিনয় তেমনই জীবন-সংলগ্ন প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। এতটা পরিশ্রম আর উৎকর্ষের ছাপ প্রতিটি পর্বে, সচরাচর কোনও সিরিজের দ্বিতীয় সিজনে দেখা দিয়েছে কি না সন্দেহ। এর জন্য কাহিনির নিয়ন্ত্রণ যাঁদের হাতে ছিল সেই অভিষেক গর্গ, অভিজিৎ খুমন, গৌরব শুক্লার কৃতিত্বই সবথেকে বেশি।

[আরও পড়ুন: করমণ্ডল এক্সপ্রেসে কীভাবে দু্র্ঘটনা? তদন্তে খড়গপুরে কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি]

তবে ‘অসুর ২’ বোধহয় শুধু চমৎকার টানটান ওয়েব সিরিজ হয়েই থাকতে চায় না। এমন কিছু গূঢ় প্রশ্নের কাছে সে মানুষকে ঠেলে দেয়, যা ক্রমাগত ভাবায়, ভাবিয়ে তোলে। মানুষের মনুষ্যত্বকে পরখ করতে যে ধরনের সোশ্যাল এক্সপেরিমেন্ট করা হয়, এ সিরিজের দৃশ্যে দৃশ্যে তা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। প্রতি মুহূর্তে ভয় হয়, মানুষ হেরে যাবে না তো! অসুর যত না ভয়ংকর, তার থেকেও মানুষের এই পদস্খলনের আশঙ্কা আরও বেশি করে ভাবিয়ে তোলে। দাঁড় করিয়ে দেয় আয়নার সামনে। আর অসুর! সে যদি একজন মানুষ হয়, তবে নয় তাকে শায়েস্তা করা যায়। কিন্তু প্রযুক্তির যে বিপুল উদ্ভাস আমাদের সমূহ সর্বনাশের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, তা থেকে মুক্তি কীভাবে! এই প্রযুক্তির ফ্রাঙ্কেনস্টাইন মানুষকেই খেয়ে ফেলবে না তো! আর-একজন কাউকে সে পরমুহূর্তে অসুর হয়ে ওঠার প্ররোচনা দেবে না তো! আর যদি দেয়! স্বরচিত এই ফাঁদে পড়ে কোথায় যাবে মানুষ! এই দুর্দিনে মানবতার উপর মানুষের বিশ্বাস অটুট থাকবে তো! ‘অসুর ২’ সেই ভাবনার দিকেই চালিত করে দর্শককে। অসুর যে অ্যানার্কি তৈরি, তার মোকাবিলা করতে স্টেটকেও অ্যানার্কিতেই নেমে আসতে হয়। অর্থাৎ অসুর জিতুক বা হারুক, অ্যানার্কিই একমাত্র সত্য হয়ে ওঠে। তাহলে কি প্রযুক্তি আমাদের ভিত্তি আর অ্যানার্কি আমাদের ভবিষ্যৎ? ‘অসুর ২’-র তুলে দেওয়া এ প্রশ্নের অস্বস্তি সিরিজ শেষ হলেও মুছে যায় না কিছুতেই।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement