নির্মল ধর: যাকগে, শেষ পর্যন্ত OTT প্ল্যাটফর্মের সৌজন্যে সাত বছর পর বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ‘আনওয়ার কা আজব কিস্সা’ (Anwar Ka Ajab Kissa) দর্শকের সামনে এল। আমরা অনেকেই আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। হ্যাঁ, মাল্টিপ্লেক্স বা সিঙ্গল স্ক্রিনে মুক্তি পেল না বটে, কিন্তু অন্য উপায়ই বা কী ছিল!
এই ছবি আদ্যন্ত বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর (Buddhadev Dasgupta) নিজস্ব ঘরানার ছবি। লিনিয়ার স্ট্রাকচার এতটুকু নেই, শট থেকে শটে তিনি গল্পের শরীর ভেঙে চুরমার দিয়েছেন, আবার একইসঙ্গে গড়ে উঠেছে অন্য এক গল্পের শরীর। ছবির প্রধান চরিত্র আনোয়ার (নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি) একজন গোয়েন্দা। সখের নয়, পেশাদার। কিন্তু তার প্রধান কাজ খুনিকে ধরা বা রহস্যের সমাধান নয়। আনোয়ার মূলত টিকটিকি গিরি করে নারী-পুরুষের লুকোনো প্রেমের সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা করে। যদিও সে নিজের প্রেমিকা আয়েশাকে (নিহারিকা সিং) হারিয়েছে। আনওয়ারের এই গোয়েন্দাগিরির সঙ্গে ধীরে ধীরে ঢুকে পড়ে তার অতীতের সন্ধানের কাহিনিও। সময়ে সময়ে সে নিজের উপরেই গোয়েন্দাগিরি করতে শুরু করে!
আদতে বুদ্ধদেবের এ ছবির নির্যাস একটাই! তা হল মানুষ সর্বদাই খুঁজে চলেছে নিজেকে। নিজের কাজের মধ্যে, নিজের সংসার যাপনের মধ্যে, এমনকী নিজেকে নিজে আড়াল করার মধ্যেও। বিভিন্ন কেসের পিছনে ধাওয়া করতে করতে আনওয়ার নিজেও ক্লান্ত হয়, একাকীত্ব গ্রাস করে তাকে। আবার কখনও নিজের অতীত প্রেমেও উঁকি দেয় সে। তখন তার একমাত্র আশ্রয় সর্বক্ষণের সঙ্গী কুকুরটি। দু’জনে একসঙ্গে মদ্যপানও করে। অবলা প্রাণীটিই তখন তার নিঃসঙ্গতার একমাত্র আশ্রয়। বিহারের কোনও এক গ্রামে বাবা (পোস্টমাস্টার) ও কাকাদের সংসারে সে ছিল খানিকটা ‘অড ম্যান আউট’। এখন নিজের একার সংসারেও আনোয়ার নিঃসঙ্গ। যেন সে নিজেকেও খুঁজতে চায়।
বুদ্ধদেব একান্ত ভেবেই তাঁর নিজস্ব কবিতার ছন্দে ছবির মালাটি গেঁথেছেন। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন আত্মজা সুরকার অলোকনন্দা দাশগুপ্ত। সুকুমার রায়ের ‘হাট্টিমাটিম’ গানটির এমন উপযুক্ত ও প্রাপ্তমনস্ক ব্যবহার কখনও দেখিনি। ছবির ভিজ্যুয়াল গতির সঙ্গে কেমন একাত্ম হয় লিরিক ও সুর। এবং সবার উপর রাখতে হবে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির (Nawazuddin Siddiqui) অভিনয়। ওঁকে ছাড়া যেন আনওয়ার ভাবাই যায় না। এক ধরনের উদাসী নির্লিপ্ত মুখ তাঁর। অথচ কাজের সময় যথেষ্ট সপ্রতিভ, ছটফটও করতেও পারেন। কিন্তু নিজের মুখোমুখি হলেই অন্য নওয়াজউদ্দিন। এতদিন আগে তৈরি ছবিতেও তাঁকে আজকের মনে হয়। কলকাতার অমৃতা চট্টোপাধ্যায়, অনন্যা চট্টোপাধ্যায়, মুম্বইয়ের পঙ্কজ ত্রিপাঠি, নিহারিকা সিংরা তাঁদের উপস্থিতির মাধ্যমে পরিচালককে সাহায্য করেছেন। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ছবির এমনটাই ধারা। যাঁরা সিনেমার মধ্যে শিল্পের খোঁজ করবেন, কবিতার কল্পনা খুঁজবেন, কাব্যিক অনুভূতির দরজায় পৌঁছাতে চাইবেন, তাঁদের ‘আনওয়ার কা আজব কিস্সা’ একবার অন্তত দেখতেই হবে। OTT প্ল্যাটফর্মগুলি নিয়ে নানা অভিযোগ থাকলেও এর মাধ্যমে যে এই ছবি দর্শকদের সামনে এল, তার জন্য একটু হলেও ধন্যবাদ প্রাপ্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.