শম্পালী মৌলিক: অতিমারী আমাদের সকলের জীবনই কমবেশি এলোমেলো করে দিয়েছে। এখনও ফিরে দেখলে দুঃসহ বোধ হয় করোনার (Coronavirus) দিনগুলো। ২০২০-র মার্চে লকডাউন শব্দটা আমাদের জীবনযাত্রায় ঢুকে পড়ে। সেই ভয়ংকর সময়টা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিয়ে যায় অচেনা ভাইরাস। অতিমারীর দিন নিয়ে ছবি বানাতে গেলে যথেষ্ট যত্ন, সংবেদনশীল মন এবং বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন। আশা করেছিলাম মধুর ভাণ্ডারকরের (Madhur Bhandarkar) মতো বিশিষ্ট পরিচালক যখন ‘ইন্ডিয়া লকডাউন’ (India Lockdown) বানিয়েছেন, এ ছবি মনে দাগ কাটবে।
খানিকটা হতাশই হলাম ছবিটা দেখে। মারণরোগের আতঙ্ক কিংবা সংকট কোনওটাই তেমনভাবে ছুঁয়ে যায় না। অথচ এ পরিচালকই তো ‘চাঁদনি বার’, ‘পেজ ৩’ কিংবা ‘ট্রাফিক সিগন্যাল’ বানিয়েছেন! চিত্রনাট্যে লকডাউন শুরু হওয়ার আগে ও পরের সময়টা ধরা হয়েছে। মুম্বই এবং সংলগ্ন অঞ্চলের মানুষের জীবনের অবস্থার বিবরণ রয়েছে। সেখানে সাধারণ মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত, বহুতলের বিত্তশালী বাসিন্দা, কলেজপড়ুয়া, বাড়ির পরিচারিকা, পরিযায়ী শ্রমিক, এক মহিলা পাইলট, প্রেমে উন্মাদ দুই তরুণ-তরুণী, এমনকী রোজগারহীন যৌনকর্মীদের কথাও উঠে এসেছে।
ভাল প্রয়াস কিন্তু চরিত্রগুলোর প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়নি, তাই তাদের জীবনের গল্পগুলো আলগা মনে হয়। করোনাকালের সংশয়-অবিশ্বাস কোথায় ছবিতে? কোথায় সেই আইসোলেশন? গৃহবন্দি দিনগুলোর অস্বস্তি আমাদের জীবনের কত সমীকরণ বদলে দিয়েছে। এই ছবি সেগুলো ধরেছে কিন্তু বড্ড ওপর-ওপর।
ছবিতে একজন বয়স্ক বাবা রয়েছেন, যিনি মেয়ের কাছে পৌঁছতে চান লকডাউনের দিনগুলোতে। তাঁরই কিছুটা ভাইরাসের ভয় রয়েছে মনে হল। পরিচারিকাকে ছুটি দিয়ে দেন তিনি, কিছু বাড়তি টাকা দিয়ে। অথচ এই মানুষটাই আবার প্রতিবেশীর মৃত্যুতে একবারও যান না। আরেকটি মুখ্যচরিত্র, পাইলট মেয়েটি। উড়ান বন্ধ ফলে সে গৃহবন্দি। তার আবাসনে নতুন আসা প্রতিবেশী তরুণটিকে তার ভাল লাগে। ঘটনাচক্রে তারা ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে এই ছেলেটি আবার প্রেমিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য দিন গুনছিল। কিন্তু করোনা বাধ সাধায় প্রেমিকা আসতে পারছিল না। ছেলেটির ফাঁকা ফ্ল্যাটে কখন তারা একত্রিত হবে এই ভাবনাতেই অনেকটা সময় যায় তাদের। অথচ তখন তো মারণরোগের আতঙ্ক সমস্ত চিন্তাভাবনা ধূসর করে দিয়েছিল আমাদের!
জীবন প্রায় অসাড় হওয়ার অবস্থা, একে অসুখের চিন্তা, অর্থের চিন্তা, পেশার অনিশ্চয়তা, ওয়ার্ক ফ্রম হোম-এর হ্যাঁপা ইত্যাদি নানা বিষয় সমাজের সব স্তরের মানুষের জীবন ছারখার করে দিয়েছিল। সেই ক্রাইসিস কি ঠিকভাবে ধরা গিয়েছে Zee5 ওয়েব প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাওয়া চিত্রনাট্যে? তবু গণিকাবৃত্তির সংকট ধরতে পেরেছে ছবিটা। আর পরিযায়ী শ্রমিকদের মাইলের পর মাইল পথচলা, অনাহার, উদ্বেগ দেখতে দেখতে খুব যন্ত্রণা হয়। যেখানে কাজহারা পরিচারিকাও যোগ দিয়েছে তার স্বামীকে নিয়ে। খিদের তাড়নায় তাদের পচা কলা খাওয়ার দৃশ্যটায় চোখ ভিজে যায়। এখানে বলতেই হয় প্রতীক বাব্বর (Prateik Babbar) অসাধারণ।
যৌনকর্মীর চরিত্রে শ্বেতা বসু প্রসাদও ভাল। পাইলটের ভূমিকায় সাবলীল অভিনয় অহনা কুমরার। সরকার এবং প্রশাসনের ভূমিকার দিকটা চিত্রনাট্যে আরও কিছুটা জায়গা পেলে ভাল হত। আর একটা বিষয়, প্রধান চরিত্ররা কেউ করোনা আক্রান্ত হয় না, এটা অদ্ভুত লেগেছে। শেষ পর্যন্ত এ ছবি অতিমারীর আঁধার কাটিয়ে জীবনের ছন্দে ফেরার কথা বলে, তবু মেকিং আরও অনেক ভাল হতে পারত।
সিনেমা – ইন্ডিয়া লকডাউন
পরিচালক – মধুর ভাণ্ডারকর
অভিনয় – প্রতীক বব্বর, অহনা কুমরা, শ্বেতা বসু প্রসাদ, সাই তামহানকর, প্রকাশ বেলাওয়ারি
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.