সুপর্ণা মজুমদার: রহস্য ও রোমাঞ্চ। দুই শব্দের প্রতি বাঙালির টান সনাতন। কিশোর সাহিত্য থেকে সিনেমার পর্দা, কিংবা হালফিলের ওয়েব সিরিজ, সবেতেই রহস্যের রমরমা। সেই রেশ টেনেই হইচই (Hoichoi) প্ল্যাটফর্মে শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে ‘রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ ৩’ (Rahasya Romancha Series 3)। আগের গল্পের রেশ টেনেই রহস্যের নতুন জাল বুনেছেন পরিচালক অভিরূপ ঘোষ (Abhirup Ghosh)। লন্ডনের ২২১/বি বেকার স্ট্রিট তাঁর অন্যতম পছন্দের জায়গা হলে অবাক হব না। কাহিনির পরতে পরতে রয়েছে শার্লক হোমসের ছায়া।
গল্প শুরু হল কালো নেকড়ের বাড়ি ফেরার ঘটনা দিয়ে। শুরুতেই অ্যাকশন দৃশ্য চোখ-কান সজাগ করতে বাধ্য করেছিল। তারপর কাহিনি নিজের খেয়ালখুশি মতো এগিয়েছে। কিছু জায়গায় রহস্যের রোমাঞ্চ ধরে রেখেছেন পরিচালক। তবে সংলাপের ওপর একটু খেয়াল রাখতে হত। এক জায়গায় নিরাপত্তা রক্ষীকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “উইদআউট পারমিশন ছাড়া বাইরে বেরনো যাবে না”। এই ছোটখাটো বিষয়গুলি একটু খেয়াল রাখতে হয়। বিশেষ করে রহস্যের ক্ষেত্রে। কারণ যে বাঙালি দর্শক রহস্য গল্প দেখতে বসেন, তাঁর প্রত্যেকটি ইন্দ্রিয় সজাগ থাকে। চরিত্রের মতো নিজেকেও গোয়েন্দা ভাবাটা বাঙালির চিরন্তন অভ্যাস। মরা, শকুনির মতো চরিত্রগুলির নামের নির্বাচন বেশ ভাল। তবে কালো নেকড়ের মতো প্রশিক্ষিত আর্মি অফিসারের চরিত্রে আরও একটু ক্ষিপ্রতা আশা করেছিলাম। হ্যাঁ, স্টুডিওপাড়ার বাজেটে অবশ্যই ‘কিল বিল’ কিংবা সাম্প্রতিক ‘দ্য ওল্ড গার্ড’-এর মতো সিনেমা তৈরি করা সম্ভব নয়। চ্যালেঞ্জ প্রচুর থাকে। থাকে বাজেটের সমস্যা। সেই নিরিখে এই প্রচেষ্টা প্রশংসা করতেই হয়, শুধু কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। OTT প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তার সৌজন্যে এখন সারা বিশ্বের বিনোদন হাতের মুঠোয়, ফলে দর্শকের প্রত্যাশা এখন অনেক বেশি। দৃশ্যের খুঁটিনাটি বিষয়গুলি মাথায় রাখা খুবই প্রয়োজন।
অভিনয়ের প্রসঙ্গে প্রথমেই বলতে হয় কাঞ্চন মল্লিকের (Kanchan Mallick) কথা। বলিউড নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি, পঙ্কজ ত্রিপাঠিদের দিব্যি ব্যবহার করছে। ফলও পাচ্ছে হাতেনাতে। ‘সিরিয়াস মেন’, ‘লুডো’র মতো সিনেমা চোখে অঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে দক্ষ অভিনেতার মূল্য। সেই মূল্য এবার টলিপাড়ার বোঝা উচিত। সৌরভ দাসের (Saurav Das) চরিত্র (মরা) মোটামুটি শার্লক ও জোকারের একটা মিশ্রণের মতো ঠেকল। সায়নী ঘোষ (Saayoni Ghosh) যেন তাঁর চিরশত্রু মরিয়ার্টি। ভাল অভিনেত্রী শাঁওলি চট্টোপাধ্যায় (Saoli Chattopadhyay)। তবে কালো নেকড়ে হিসেবে তাঁর চোখের চাহনিতে আরও একটু শান্ত-হিংস্রতা প্রয়োজন ছিল। অ্যাকশন দৃশ্যেও বডি ল্যাঙ্গুয়েজের একটু খেয়াল রাখতে হবে। অমৃতার চরিত্রে রুকমা রায়ের (Rooqma Ray) প্রচেষ্টা ভাল। শেষপাতে ঝন্টুর (রুদ্রনীল ঘোষ) প্রত্যাবর্তন ছিল সিরিজের সেরা পাওনা। কিছু কিছু জায়গায় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক একটু বাড়তি ঠেকেছে। আলোর ট্রিটমেন্ট ভাল। মোটের উপর রহস্যপ্রেমীরা একবার অন্তত এই অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতেই পারেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.