নির্মল ধর: ‘ছেল্লো শো’ (Chhello Show) যদি পরিচালক প্যান নলিনের আত্মজীবনীমূলক সিনেমা হয়ে থাকে, তাহলে স্বীকার করতেই হচ্ছে যে প্যান নিজেকে বড় বেশি ভালবেসে ছবিটি করেছেন। কিশোর নায়ক সময়ের (ভাবিন রাবাড়ি) জন্মের সময় নাকি তার বাবা-মায়ের (রিচা মিনা ও দীপেন রাভাল) কাছে টাকা-পয়সা কিছুই ছিল না। ছিল অফুরান ‘সময়’। সেটি খরচ করেই ছেলের জন্ম দিয়েছেন তাঁরা। কৈশোরে সুলভ সারল্যে এ কথাগুলি বলেছে সময়। স্কুল পালিয়ে, বাবার চায়ের দোকান থেকে টাকা চুরি করে সে প্রায় রোজই সিনেমা হলে ঢুকে পরে সিনেমা দেখতে। অন্ধকার ঘরে প্রজেক্টর থেকে আলোর রশ্মি কীভাবে পর্দায় ছবি হয়ে ওঠে সেটাই অবাক করে দেয় কিশোরমনকে। আলোছায়ার খেলা নিয়ে এক অনুসন্ধিৎসা শুরু হয়।
সিনেমা হলই হয়ে ওঠে সময়ের নতুন শিক্ষায়তন। শিক্ষক হয় হলের মাঝবয়সী ক্ষুধার্ত প্রজেকশনিস্ট ফজল (ভাবেশ শ্রীমালি)। তার প্রজেকশন রুমে বসে সময় শুধু ছবি দেখে না, ছবি তৈরির টুকটাক কাজও শিখে ফেলে। তার কিশোর মনের কোণে ছবি বানানোর পোকা নড়তে শুরু করে। কিন্তু সময়ের গোঁড়া ব্রাহ্মণ পরিবার সিনেমাকে তখনও স্বীকৃতি দিতে পারেনি। অথচ কয়েকজন বন্ধু মিলে হল থেকে বিভিন্ন ছবির রিল চুরি করে সময় নিজেই এক ভূতুড়ে পোড়ো বাড়িতে নিজেদের সিনেমা হল বানিয়ে ফেলে। বাবা একদিন লুকিয়ে ছেলের সেই কর্মকাণ্ড দেখে উপলব্ধি করেন ছোট্ট আধা-শহর চালালা থেকে বড় শহরে সময়কে সঠিক সুযোগ না করে দিলে সেটা অপরাধ হবে।
বাবা নিজেই তখন ছেলেকে মাত্র ১৪ মিনিট সময়ে বরোদা এক্সপ্রেস ট্রেনে চাপিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে পাঠিয়ে দেন। মাত্র ১৪ মিনিট সময়ে এতবড় একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া যেমন বাস্তবে অসম্ভব এবং অতি নাটকীয়, ঠিক তেমনভাবেই পুরো ছবি জুড়ে বিভিন্ন উপকাহিনির উপস্থিতিও অবাস্তব। বলিউডি স্টাইলে সাজানো।
একদল ছেলের হঠাৎ হঠাৎ হাফ ডজন সাইকেল জোগাড় হয়ে যায় কীভাবে বোঝা মুশকিল। তাদের কর্মকাণ্ডেরও কোনও যুক্তি মেলে না। সিনেমা হলটি বন্ধ হয়ে গেলে রিল বোঝাই গাড়ির সঙ্গে সাইকেল দলের পাল্লা দেওয়া, ভাঙা সেলাই মেশিন, সাইকেলের চাকা ইত্যাদি দিয়ে প্রজেক্টর তৈরি করে ফেলার বিষয়গুলো শুধু অবাস্তবই নয়, ওই ছোট্ট আধা-শহরের পরিবেশে অসম্ভবও। ছবির শেষ পর্বে সেলুলয়েড ফিল্ম বাতিল হয়ে ডিজিটাল যুগ শুরু হলে নাইট্রেট ফিল্মের রিলগুলো গালিয়ে চুড়ি খেলনা তৈরি হওয়ার কারখানা দেখানো এবং সেখানে কিশোর সময়ের বিষণ্ণ উপস্থিতি কি জরুরি ছিল? উপরন্তু সেটি অবাস্তবও।
বরং আমাদের কৌশিক গাঙ্গুলি ‘সিনেমাওয়ালা’ ছবিতে প্রজেক্টরের বিদায় দৃশ্যকে শ্মশান যাত্রার চেহারা দিয়ে অনেক বেশি মর্মান্তিক করে তুলেছিলেন। কিংবা ইতালির ছবি ‘সিনেমা প্যারাডিসো’র কথা মনে এলে প্যান নলিনের এই ছবি বেশ পানসে, হালকা লাগে। হলিউড-বলিউডের ফর্মুলাকে মিলিয়ে মিশিয়ে প্যান এক ‘প্যান ইন্ডিয়ান’ ছবির জন্ম দিয়েছেন শুধু, যার মধ্যে প্রাণের স্পর্শ খুব একটা নেই। যা আছে সেটা হল তিনজন শিল্পীর অসাধারণ অভিনয়।
কিশোর শিল্পী ভবানী রাবারি, প্রজেকশনিস্টের চরিত্রে ভবেশ শ্রীমালি এবং বাবার চরিত্রে দীপেন রাবালা কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলেননি। ভবানীর অতি স্পর্শকাতর দৃষ্টি ভুলতে দেয় না দর্শককে। প্রয়াত শিশুশিল্পী রাহুলের অভিনয়ও নজর কাড়ে। তবে অস্কারের (Oscar) মূল প্রতিযোগিতায় এই ছবি যে কোনও জায়গা পাবে না, তা হলফ করে বলা যায়। অবশ্য ছবির প্রযোজক সিদ্ধার্থ রায়কাপুর এবং পরিচালক প্যান নলিনের চেষ্টাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়।
ছবি – ছেল্লো শো
অভিনয়ে – ভাবিন রাবাড়ি, রিচা মিনা, দীপেন রাভাল, ভাবেশ শ্রীমালি, রাহুল কোলি, পরেশ মেহতা, বিকাশ বাটা
পরিচালনায় – প্যান নলিন
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.