নির্মল ধর: এখন ছোট কিংবা বড়ো দুই পর্দাতেই ‘who done it’ ধরনের রহস্য – গোয়েন্দা গল্পের বাজার ভাল। তরুণ পরিচালক সায়ন্তন ঘোষাল, প্রথম ছবি থেকেই এই ধরনের কাজে হাত লাগিয়েছেন। এই “গোরা” দেখার পর অস্বীকার করা যাবে না, তাঁর হাতটি এখন বেশ পোক্ত হয়েছে। তবে তাঁকে পোক্ত করে তোলার কাজে চিত্রনাট্যকার শাহানা দত্তর অংশীদারিত্ব অনেকটাই।
পরিচিত লেখকদের কলমের নিব দিয়ে খুন হওয়া, হত্যার পর দাঁতগুলো তুলে ফেলে সেখানে নিব সাজিয়ে রাখার মতো অস্বাভাবিক ঘটনার তদন্তের ভার এসে পড়ে প্রায় সর্বক্ষণ ভুলোমনা পুলিশের গোয়েন্দা গোরা সেনের উপর। সহকারী এবং গাড়ির চালকের ভূমিকায় সঙ্গে থাকে গোরার হবু ভগ্নিপতি সারথী। গোরা সেন যেমন দুঁদে গোয়েন্দা, তেমনি বেসুরো গায়ক। আবার গায়নের মধ্য দিয়েই তিনি খুনের রহস্য উন্মোচন করে থাকেন। কিঞ্চিৎ নয়, একটু বেশিই খ্যাপাটে। প্রায় কারও নামই তিনি মনে রাখতে পারেন না। একজনকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে ডেকে বসেন। কিন্তু ঘিলুর কম্পিউটার ডিস্কটি একেবারেই নির্ভুল, সজাগ।
মোদ্দা গল্পটি হল এক তরুণী লেখক সুপ্রিয়া তাঁর লেখা প্রকাশের জন্য তিন তিনজন প্রখ্যাত লেখকের সঙ্গে ‘যোগাযোগ’ করেও বিফল হয়ে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যায়। মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে তাঁর ভাইকে সে কিছু ইঙ্গিত দিলেও, দিদির মৃত্যুতে উন্মাদ হয়ে যায়। এদিকে কিছুদিন পর সুপ্রীয়ার পরিচিত দুই লেখক বিচিত্র ওই পদ্ধতিতে খুন হয়ে যান। গোরা সেন তদন্তে নেমেই পুলিশকে বলেন তৃতীয় লেখক একদিন বাদেই খুন হবেন, ওঁকে সাবধান করুন। খোদ পুলিশের নাকের ডগায়, কিন্তু নির্ধারিত দিনে লেখকের উপর আক্রমণ হয়। তবে খুনি আসল কাজটি করতে পারে না। কোনওক্রমে রক্ষে পান লেখক।
খুনিকে ধরার গোয়েন্দাগিরির সঙ্গে এক স্বপ্নচারী তরুণীর গল্প জুড়ে দিয়ে অবিবাহিত গোরার এক হবু বউ জোগাড় করে দেওয়া ছাড়া মূল গল্পে আর কোনও কাজে আসেনি সেই চরিত্র। তবে ইশা সাহা অবশ্য খুবই স্বাভাবিক অভিনয়ে চরিত্রটি বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছেন। তবে আটটি পর্বে সাজানো এই রহস্য কাহিনির অনেকটাই বিচ্ছিন্ন মনে হয়। কে বা কারা খুনি সেটাতো জানা যাবেই “সমাপ্তি” পর্বে। তার আগের সাজানো সাতটি পর্বকে দর্শকের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে একা ঋত্বিক চক্রবর্তীই যথেষ্ট! তাঁর অমন বুদ্ধিদীপ্ত পাগলপনা অভিনয় যেন অন্য এক ঋত্বিককে আমাদের সামনে আনল।
কিন্তু তবুও প্রশ্ন থেকেই যায় – যে মানুষটা প্রতি মুহূর্তে নাম ভুলে যায়, খাবার খেয়েছে কিনা মনে রাখতে পারে না,তাঁর ব্রেন কম্পিউটার অত সূক্ষ্মভাবে সক্রিয় থাকে কী করে? এবং একজন এমন মানুষের পক্ষে সফল গোয়েন্দা হয়ে ওঠা বাস্তবে অসম্ভব! এমন গোয়েন্দা গোরাকে শুধু ভুলোমি আর পাগলামি দিয়ে কি দর্শকের কাছে জনপ্রিয় করা যাবে? এই সিরিজকে চলমান রাখতে গোরাকে অন্যভাবে সাজাতেই হবে। প্রকৃত খুনি কে বা কারা, তা নিয়ে গোরার সমাপ্তি বক্তৃতাবাজিও তেমন জমে না। কালেকটিভ খুনের ইঙ্গিত দিয়ে পুরো গল্পটাই যেন বেশি জটিল ও যুক্তি তর্কের বাইরে শুধু “গপ্পো” হয়েই রইল!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.