Advertisement
Advertisement

Breaking News

Palan Movie Review: কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘পালান’ আত্মমর্যাদার লড়াই, ছবির প্রাণ অঞ্জন দত্ত

মধ্যবিত্ত বাঙালির জীবন সেঁচে বানানো এ ছবির প্রতিটা ফ্রেম।

Here is the review of Bengali Movie Palan | Sangbad Pratidin
Published by: Suparna Majumder
  • Posted:September 22, 2023 6:05 pm
  • Updated:September 22, 2023 6:34 pm  

রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়: মানব অস্তিত্বের সব থেকে বড় বিপন্নতা হল, মানুষ পালাতে চায়। কিন্তু ‘পালান’ (Palan Movie) বললেই কি পালানো যায়? মানুষ, প্রায় সব মানুষ, পালাতে চায় তার অতীত থেকে। কিন্তু সে অসম্ভব, সে অসম্ভব! সে পালাতে পারে না অতীতের অন‌্যায়, অতীতের শোচনা, অতীতের পাপবোধ, এমনকী অতীতের মর্যাদাবোধ কিংবা অহং থেকেও, যে অহংবোধ ‘হিউব্রিস’ (Hubris) নামে গ্রিক ট্র‌্যাজেডিতে মানুষের পিছু নিয়েছে, পালানোর পথ বন্ধ করেছে, ঘটিয়েছে যন্ত্রণা ও নাশ। কৌশিক গঙ্গোপাধ‌্যায়, যিনি বারবার তাঁর ছবিতে নিজের পরিচয় দিয়েছেন নব নব ভাবনার সৃজনে ও বিন‌্যাসে, এবার ‘পালান’ ছবিতে নিয়ে এলেন আরও এক অভিনব ভাবনাধারা।

Palan-Movie

Advertisement

যে বীজ থেকে ‘পালান’ ছবির ডালপালা ছড়াচ্ছে সেই বীজটির নাম, মধ‌্যবিত্ত মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থান, তার প্রাত‌্যহিক অবস্থার ক্ষয়িষ্ণুতা এবং তার ক্রমাগত আগলে রাখা আত্মসম্মান। ‘বীজ’ শব্দটি বহন করে মাটির অনুষঙ্গ। ‘পালান’-এর ক্ষেত্রে তার মাটি, তার শিকড় ৪০ বছর আগে মৃণাল সেনের ‘খারিজ’ ছবিটি। সেই গল্পের দু’টি প্রধান চরিত্র, অঞ্জন সেন (অঞ্জন দত্ত) এবং মমতা সেন (মমতা শঙ্কর) ‘পালান’ ছবিতেও তাঁদের পিছনে ফেলে-আসা চল্লিশ বছর নিয়ে হাজির। গত চল্লিশ বছরে অনেক পরিবর্তন এবং সংযোগের মধ্যে এসেছে ‘পালান’-এর পাওলি সেন (পাওলি দাম)।

Palan-Movie-2
চল্লিশ বছর আগে ‘খারিজ’ ছবিতে অঞ্জন আর মমতা সেনের বাড়ির কাজের ছেলেটি স্থানাভাবে রান্নাঘরে ঘুমিয়ে মারা গেল। মারা যাওয়ার কারণ, রান্নাঘরের বদ্ধ পরিস্থিতিতে কার্বন মনোক্সাইডের বিষ। কৌশিক নিজে বলেছেন, যখন তিনি প্রথম ‘খারিজ’ দেখেন, তখন তিনি না চিনতেন মৃণাল সেনকে, না জানতেন কার্বন মনোক্সাইড। কিন্তু এই না-জানা রহস‌্য থেকেও পালানো সম্ভব হল না। রহস্যের বীজটি যে-মূল ভাবনা থেকে ডালপালা ছড়াল, তা হল একটি ‘পরিস্থিতি’, যা থেকে কোনও ছবির বিষয় হয়ে উঠতে পারে, হতে পারে কোনও মানব কাহিনির সূচক। কৌশিকের ‘নগরকীর্তন’ থেকে ‘সিনেমাওয়ালা’ থেকে ‘অর্ধাঙ্গিনী’– সব ছবিরই উড়ানসরণি ‘পরিস্থিতি’। এবং এইখানেই কৌশিকের ছবিতে মৃণাল সেনের পেলব প্রতিভাস। যার মধ্যে মৃণাল সেনের একশো বছরের প্রতিও রয়েছে প্রতিদেয় ঋণাঞ্জলি ও প্রণতি।

[আরও পড়ুন: ‘একটা অডিশন সব বদলে দিল’, ‘চার্লি চোপড়া’ সিরিজের মুক্তির আগে অকপট অভিনেত্রী ওয়ামিকা গাব্বি]

‘পালান’ থেকে আমাদের মতো মধ‌্যবিত্ত বাঙালিরও পালানোর জো নেই। ছবিটি শেষ হওয়ার পরেও তাই শেষ হল না, অন্তত আমার ভাবনায়। জড়িয়ে যাচ্ছে ক্রমশ আমার অতীতের নানা অন‌্যায়বোধ, শোচনা এবং আহত মর্যাদাবোধ, এমনকী, আত্মকান্নার সঙ্গেও। অভিমানের মতো বড় আত্মকরুণা রঙিন দুর্বলতা মানুষের আর নেই। সেই দুর্বলতা থেকে পালানো অসম্ভব। কৌশিকের ‘পালান’ জানে বাঙালির অস্মিতা-দুয়ারের অব‌্যর্থ চিচিংফাঁক! আমি অন্তত ‘পালান’ সম্বন্ধে নিঃসন্দেহে বলতে পারি, ‘নাড়িতে মোর রক্তধারায় লেগেছে তার টান।’

Palan-Movie 2

মৃণাল সেনের অঞ্জন ও মমতা সেনের সঙ্গে সেই বাড়িটি, যে-বাড়ির রান্নাঘরে ঘুমিয়ে মারা গেল কাজের ছেলেটি– সেই বাড়িও এই ছবির একটি চলিষ্ণু চরিত্র, যে ক্রমশ বলছে নিয়তি নির্ধারিত নাশের দিকে– ঠিক যেন গ্রিক ট্র‌্যাজেডি থেকে উঠে আসা ভাগ‌্যতাড়িত চরিত্র।
তারপর এ-ছবির কোনও ব্রাহ্মমুহূর্তে প্রোটাগনিস্ট অঞ্জন সেন (অঞ্জন দত্ত) রুখে দাঁড়ায় ভাগ‌্য নিয়ন্ত্রক বিধাতা, নিয়তি, নেমেসিসের বিরুদ্ধে– সে বলে একচল্লিশ বছর আগে তার বাড়ির অসহায় কাজের ছেলে পালানের মতো সে মরবে না দমবন্ধ করা রান্নাঘরে, এ-লড়াই তার আত্মমর্যাদার লড়াই, তার ডিগনিটির লড়াই। শেষ পর্যন্ত এ লড়াই সে জিতবেই। ঠিক এইখান থেকেই তার ডিগনিটির লড়াইয়ের সঙ্গী হয় স্ত্রী মমতা, পুত্র যিশু, পুত্রবধূ পাওলি। এবং সেই পুরনো বাড়িটাও। প্রতিপক্ষ প্রোমোটার।

Palan

এবার আসি অভিনয়ে। পুত্রবধূ পাওলি সেনের চরিত্রে পাওলি সারাক্ষণ মধুর, সারাক্ষণ মানিয়ে-নেওয়া, খাপ খাওয়ানো অথচ সাংসারিকতায় নির্ভরযোগ‌্য একজন, যার ওপর বিশ্বাস কখনও বিঘ্নিত হয় না। যিশুর মতো ছেলে পেতে কোন বাবা-মা না চাইবে– যে বাবা-মা-বউ, সব্বাইকে আগলে রাখছে। মমতা অঞ্জনের পুরনো গিন্নির ভূমিকায় এবং মা-শাশুড়ির ভূমিকায় অসাধারণ। অন‌্য এক মনে রাখার মতো চরিত্র, ‘খারিজ’ ছবি থেকে গড়িয়ে আসা হরি (ভূমিকায় দেবপ্রতিম দাশগুপ্ত)।

কিন্তু ‘পালান’-এর প্রাণ অঞ্জন দত্ত। অঞ্জন দত্তর অভিনয় ছাড়া ‘পালান’-এর মতো ছবি করা সম্ভবই নয়। ‘পালান’-এর তুমুল, অবিশ্বাস‌্য, অবিস্মরণীয় ক্লাইম‌্যাক্স একটি মাত্র শব্দের উচ্চারণে। যে শব্দে সমস্ত সভ‌্যতা, সংস্কৃতি ও প্রকাশের শুরু সেই শব্দটি এমনভাবে উচ্চারণ করেন অঞ্জন দত্ত, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর, আমি নিশ্চিত, তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অভিনেতাদের একজন। এই প্রথম কোনও সিনেমায় এমন দুঃসাহসী ক্লাইম‌্যাক্স দেখলাম ও শুনলাম– যা উপনিষদে আছে– ‘অপাবৃণু’–প্রকাশিত হও! এবং আরও একবার বলতেই পারি, ‘লেগেছে তার টান।’
পুনশ্চ: এবার একটি আলাদা কথনের বড় প্রয়োজন। যিশু এবং পাওলি বিছানায় আদরে, আশ্লেষে, প‌্যাশনে, তৃষ্ণায়, জাগরণে। একজনের বাবা, অন‌্যজনের শ্বশুরমশাই, অঞ্জন, পাশাপাশি দৃশ্যে, বিপজ্জনক বারান্দায়! তুলনাহীন এই সিকোয়েন্সের তীব্র টেনশন ও জ‌্যান্ত যৌনতা!

ছবি – পালান
অভিনয়ে – অঞ্জন দত্ত, মমতা শঙ্কর, যিশু সেনগুপ্ত, পাওলি দাম, শ্রীলা মজুমদার, দেবপ্রতিম দাশগুপ্ত প্রমুখ
পরিচালনায় – কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়

[আরও পড়ুন: দুর্বল গল্পেই ভরাডুবি, মন কাড়তে পারল না ভিকি কৌশলের ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান ফ্যামিলি’ ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement