শম্পালী মৌলিক: বড় বয়সের জটিল মনটা কিছুক্ষণের জন্য সুইচ অফ করে রেখে ‘বগলা মামা’ (Bogla Mama Jug Jug Jio) দেখতে বসলে সত্যিই মনে হবে, যুগ যুগ জিও! আমাদের চারপাশের পৃথিবীটা ভারচুয়ালি বাড়লেও, আদতে ছোট হয়ে আসছে। সেখানে ‘বগলা মামা’র গল্প বৃহত্তর পরিবারকে নিয়ে বাঁচার কথা বলে। পাড়ার দাদা-দিদি, কাকা, মামা-মাসি, প্রতিবেশী সবাই আত্মীয় এখানে। এমনটাই তো ছিল আটের দশকে। এমনকী নয়ের দশকের মধ্যিখান পর্যন্ত আমাদের ছোটবেলায় এমন জড়িয়ে-মড়িয়ে বেঁচে থাকাই দেখেছি আমরা। তারপর কবে যেন নিউক্লিয়ার পরিবারের দিকে ঝুঁকে পড়লাম আমরা।
ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় ‘সোনাদা’র মতো সফল ফ্র্যাঞ্চাইজি চরিত্র পর্দায় প্রতিষ্ঠা করেছেন এর আগে। তাঁর হাত ধরেই বড় পর্দায় চলে এল আরও একটি নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি ‘বগলা মামা’। রাজকুমার মৈত্রর কাহিনি অবলম্বনে এই ছবি। গল্প যে প্রচুর লোকের পড়া তা হয়তো নয়, তার জন্য এই ছবির রস আস্বাদনে অসুবিধা হবে না। ঘরানায় ‘সিরিও কমেডি’। হালকা জোকস্ কিংবা দ্ব্যর্থবোধক শব্দের ব্যবহারে হাসানো নয়, চমৎকার সিচুয়েশনাল কমেডি এ ছবি। তার সঙ্গে সেন্টিমেন্ট, হালকা প্রেম, জমাট বন্ধুত্ব জুড়ে আছে।
এই প্রথমবার নামভূমিকায় পাওয়া গেল খরাজ মুখোপাধ্যায়কে (Kharaj Mukherjee)। কেমন তাঁর ‘বগলা’ চরিত্র? মানুষটা সরল, আবেগপ্রবণ, থিয়েটার ভালোবাসে দারুণভাবে। জীবনে তথাকথিত অর্থে সফল না হলেও একটা কিছু করে দেখানোর তাগিদ রয়েছে তার। বগলার চার শাগরেদ– কেবু (ঋদ্ধি সেন), সাধন (সুদীপ ধাড়া), ত্রিদিব (উজান চট্টোপাধ্যায়), নাড়ু (মিঠুন গুপ্ত), ধনু (জিৎ সুন্দর)। পাঁচজনে মিলে তাদের দুর্ধর্ষ দল। আটের দশকের শহরতলি এ ছবির প্রেক্ষাপট।
বগলার সঙ্গে পাকেচক্রে আলাপ হয়েছিল, ব্যবসায়ী ফেলু আচার্যর, আচরণে যে গুণ্ডা-গোছের। সে চায় নাটকের প্রতিযোগিতায় জিততে এবং ‘কালচারড’ তকমা পেতে এলাকার মানুষের চোখে। বিশেষ করে হারাতে চায় স্থানীয় মাস্টারকে (সন্দীপ ভট্টাচার্যকে)। কারণ, সেখানে রয়েছে অসম্মানের ইতিহাস। অতএব ফেলু বগলাকে দেয় নাটকের বায়না, জিতে আসার দায়িত্ব বগলার দলের। দোর্দণ্ডপ্রতাপ ফেলুর ভয়ে সিঁটিয়ে যায় বগলার ছেলেরা। কিন্তু বগলা হারতে নারাজ। ‘কীচক বধ’ মঞ্চস্থ করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নেয়। প্রধান প্রতিপক্ষ ‘মাস্টারের ‘সিরাজদৌল্লা’। হারলে ফেলু তাদের সেঁকতেও পিছপা হবে না। ব্যস, ছবি জমে যায়। অজস্র ‘কেওস’ পেরতে পেরতে গল্প এগোয়।
আসলে ‘কেওস’-ই ছবির আসল মজা। অতি-অভিনয়ে ছবি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা ছিল কিন্তু হয়নি। খরাজ মুখোপাধ্যায় ধরে ব্যাট করেছেন। তিনি অব্যর্থ বগলা। চালিয়ে খেলেছে তার ইয়ং ব্রিগেডও। ছবির প্রাণ এই একঝাঁক তরুণ অভিনেতা। রোমান্টিক কেবুর চরিত্রে ঋদ্ধি বেশ ভালো। সাধনের চরিত্রে সুদীপ ধাড়া অতুলনীয়। ডিম চুরির দৃশ্য কিংবা শেক্সপিয়ররূপে মঞ্চে তাঁর অনায়াস বিচরণ বলে দেয়, সুদীপ টলিউডে ধারাবাহিক হতেই এসেছেন। উজান চট্টোপাধ্যায় ত্রিদিবের চরিত্রে এককথায় ব্রিলিয়ান্ট। ভালো লাগে জিৎ সুন্দর ও মিঠুনকেও। কেবুর প্রেমিকার চরিত্রে দিতিপ্রিয়া ভালো কাজ করেছেন। কৌশিক সেন কেন এত বড় মাপের অভিনেতা, এই স্বল্প পরিসরেও বোঝা যায়। কৃষ্ণার চরিত্রে অসম্ভব ভালো লেগেছে অপরাজিতা আঢ্যকে।
রেশমি সেন, সুমিত সমাদ্দার ঠিকঠাক। ফেলুর চরিত্রে রজতাভ দত্ত অবিকল্প। বিশ্বনাথ বসু আরেকটু জায়গা পেলে আরও খুলত। ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তর সুরে গানগুলো ছবির মুডের উপযোগী । কিছু ত্রুটি রয়েছে। চিত্রনাট্য আরও টানটান হতে পারত। আর ছবির দৈর্ঘ্য কমানো যেত। আর একটা বিষয়– পর পর অঘটনের মাঝে একটু ব্রিদিং স্পেস দিলে মন্দ হত না। তবে বলতেই হয় উপভোগ্য ‘ক্লাইমেক্স’। পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় হারিয়ে যাওয়া সময় এবং নির্মল আনন্দ ফিরিয়ে আনতে চেয়েছেন এই ছবির মাধ্যমে। সেখানে তিনি সফল।
ছবি – বগলা মামা যুগ যুগ জিও
অভিনয়ে – খরাজ মুখোপাধ্যায়, ঋদ্ধি সেন, রজতাভ দত্ত, অপরাজিতা আঢ্য, দিতিপ্রিয়া রায়, কৌশিক সেন, বিশ্বনাথ বসু, উজান চট্টোপাধ্যায়
পরিচালনায় – ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.