Advertisement
Advertisement
কেদারা

একাকীত্ব নিয়ে কেমন থাকেন একজন সফল মানুষ? উত্তর দেবে ‘কেদারা’

হলে যাওয়ার আগে জেনে নিন কেমন হল ছবি।

Here are review of must watching bengali film Kedara
Published by: Sayani Sen
  • Posted:November 3, 2019 4:21 pm
  • Updated:November 3, 2019 4:45 pm  

চারুবাক: একটা পরিপূর্ণ সফল মানুষ ‘একা’ হয়ে গেলে কী হয়! কেমন হয় তাঁর মানসিক অবস্থা! কাজ না থাকলে শরীরে জং ধরে ঠিকই, কিন্তু বুকের ভিতর বাঁ দিকটায় কি যন্ত্রণা হয় না! সেই অব্যক্ত যন্ত্রণা কখনও কখনও বোমার মতো ফেটে পড়ে মুখ দিয়ে। সংসারে বাতিল মানুষটা একদিন সমাজে বাতিল হয়ে পড়েন। বাড়িতে বাতিল জিনিসপত্রের মতো ‘বাতিল’ মানুষটি যদি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন, যথেষ্ট অভিজাত মেজাজের হন, তাহলেও সেই চাপা সম্মান ও আভিজাত্যবোধও আগ্নেয়গিরির মতো। অভিমান ও রাগের চেহারা নিয়ে মাঝেসাঝে নির্গত হয় বইকি!

এমনই একজন ‘একা’ মানুষ ‘কেদারা’ ছবির নরসিংহ। পেশায় সফল হরবোলা। কিন্তু সংসার জীবনে অসফল। ফলে সন্তান নিয়ে স্ত্রী পৃথক। দু’জনের বিরহে বয়স্ক নরসিংহ কাতর হলেও মর্যাদা হারাতে সহজে চান না। তাঁর জীবনে একমাত্র দুর্বলতা বয়স্কা ঠাম্মা। তিনি প্রয়াত। কিন্তু হরবোলা হয়ে ঠাম্মাকে নিজের জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছেন তাঁকে। একা একাই কথা বললেন তাঁর সঙ্গে। নরসিংহর মান-অভিমান, সুখ-দুঃখের ভাগীদার একমাত্র তিনিই।

Advertisement

অসমবয়সি হলেও আরও এক ‘একক’ মানুষ তাঁর প্রতিবেশী, বাতিল পুরনো জিনিসপত্র কেনাবেচার মানুষ রুদ্রনীল। দু’জনার বন্ধুত্বেও কোনও খাদ নেই। পরিচালক ইন্দ্রনীল দাশগুপ্ত এই দুটি ‘একক’ মানুষের বুকচাপা একাকীত্ব, নির্জনতাকে ‘কেদার’ ছবিতে এত জীবন্ত ও বাঙ্ময় করে তুলেছেন যে এটি তাঁর প্রথম ছবি বিশ্বাস করতে অসুবিধা হয়। চিত্রকল্পের ভাবনায় ও বিন্যাসে, প্রয়োগ ও নান্দনিকতায় ভরপুর ছবির প্রতিটি ফ্রেম। মনে হয় নরসিংহর অর্ন্তযাতনার সঙ্গে চিত্রনাট্যকার যেন একাকার হয়ে যান। প্রবীণ বয়সে পেশা ছাড়লেও তিনি মনে করেন হরবোলা একটা আর্ট যেটা এক ধরনের প্রাণী। সেই প্রাণীটির তখন বয়স হয়েছে, রোগে আক্রান্ত, ভেন্টিলেশনে চলে গিয়েছে। তবুও সেই প্রাণীকে তিনি ছেড়ে যেতে পারছেন না। এরপরেই দেখানো হয় যন্ত্রণা ও বেদনায় কাতর নরসিংহ বৃষ্টিতে ভিজছেন। চোখের জলে মিশে একাকার হয়ে যায় প্রকৃতির কান্না! অভীক মুখোপাধ্যায়ের ক্যামেরা অত্যন্ত শৈল্পিক মোড়কে ধরেছেন মুহূর্তটি।

ঠাম্মার সঙ্গে তার সারাক্ষণ একা একা কথা বলে যাওয়ার পাশাপাশি ইন্দ্রদীপ একটি অসাধারণ দৃশ্য রচনা করেন ঘরের নরসিংহর মধ্যে। হাফডজন টেলিফোন বসিয়ে কল্পিত কিছু মানুষের সঙ্গে সাজানো কথোপকথন। কথা বলেন স্ত্রীর সঙ্গেও। এমনকি বাড়ি ফিরে আসার ব্যর্থ আবেদনও রাখে একসময়। এমন মন কেমন করা দৃশ্যের মাঝে নরসিংহর হস্তমৈথুনের দৃশ্যটি কিন্তু ঠিক মেলে না। ওটা দেখানো কি জরুরি ছিল? পাড়ার মস্তান ও এমএলএ’র মুখোমুখি হয়ে নরসিংহ যে মর্যাদাবোধ ও আভিজাত্যের পরিচয় রাখেন, তারপর তাঁর পরিণতির ইঙ্গিত যেভাবে দেখানো হয়, সেখানে বাড়ির কাজের মেয়ের শরীর দেখে তাঁর এমন প্রতিক্রিয়া কাম্য নয় কিংবা সেটিও অপ্রয়োজনীয় লেগেছে। কিংবা বলতে পারি, ছবির শেষ পর্বে শ্রীজাতর যে কবিতাটি পরিচালক শোনান সেটিও অপ্রয়োজনীয় লেগেছে। তিনি সিনেমার ভাষায় যথেষ্ট দক্ষ, ভিসুয়ালি সুন্দর সাজিয়েছেন ছবি। তবুও এই কবিতার ব্যবহার বাড়তি লাগে।

[আরও পড়ুন: অনুষ্ঠান করতে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনা, গুরুতর জখম সারেগামাপা খ্যাত শিল্পী]

অভিনয়ে নরসিংহর ভূমিকায় কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়া আর কেই বা করতে পারতেন এমন বাঙ্ময়, জীবন্ত অভিনয়। এখনকার বাংলায় তিনি সেরা চরিত্রাভিনেতা! অলৌকিক বললেও অত্যুক্তি হবে না। পাশে দাঁড়িয়ে অনেকদিন পর রুদ্রনীল ঘোষও সুন্দর সহযোগিতা করেছেন। ‘কেদারা’ যতটা ইন্দ্রনীল দাশগুপ্তর ছবি। ঠিক ততটাই কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের। ‘কেদারা’ এই দু’জনকেই সিংহাসনে বসালো।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement