চারুবাক: আমির খানের ‘লগান’ দিয়ে শুরু। সেই ট্রাডিশন সমানে চলছে এখনও। স্পোর্টস ফিল্মের সঙ্গে জাতীয়তাবোধ, দেশপ্রেম পরিমাণ মতো মিলিয়ে ককটেল বানাতে পারলে ব্যবসা আঙুলের ডগায়। ‘লগান’ ফিল্ম সেটা প্রমাণ করেছিল বছর দশ আগে। আর এখন তো ‘ফিল্ম’ বস্তুটাই উধাও। ছবি নির্মাণে এখন ডিজিটালের রমরমা। ছবির মুক্তির জন্য রয়েছে আইনক্স, পিভিআর আর আইম্যাক্স নামের ডিজিটাল প্রোজেকশন। একই সঙ্গে একদিনে সারা দেশজুড়ে হাজারখানেক শো। আসলে শো বিজনেসের নামে পুরো সেটআপটাই তো বদলে গিয়েছে। মধ্যমানের ছবি বানাতে পারলেই পয়সা উসুল।
পরিচালক রিমা কাগতি ‘গোল্ড’ ছবিতে ভারতীয় দলের ওলিম্পিকের খেলায় ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথম সোনার মেডেল ঘরে তোলার ঘটনাকেই নাটকীয়ভাবে তুলে এনেছেন। ‘লগান’ ছিল কল্পনা নির্ভর। আর ‘গোল্ড’ হল সত্য ঘটনাকে অবলম্বন করে কল্পনার রং চড়িয়ে সেটাকে দর্শকের কাছে উপাদেয় করে তোলা। প্রায় দুশো বছরের রাজত্ব শেষে ’৪৭-এ ব্রিটিশরা দেশের মাটি ছাড়ে। তারপরের বছরেই লন্ডন ওলিম্পিকসে ব্রিটিশদের হারিয়ে সোনা জেতার নেপথ্যে জাতীয়তাবোধ, দেশপ্রেম এবং জাতীয় পতাকার সম্মান রক্ষার মতো অনুভূতি কাজ করছিল। অন্তত তেমনটাই দেখিয়েছেন পরিচালক। ভারতীয় দলের এমন জয়ের নেপথ্যে যে মানুষটির অবদান সবচাইতে বেশি, রিমার চিত্রনাট্য গড়ে উঠেছে তাঁকে কেন্দ্র করেই। তিনি হচ্ছেন তপন দাস। এক বঙ্গ তনয়। তাঁরই উৎসাহে, সক্রিয়তায় এবং অনেকাংশে তার যোগ্য নেতৃত্বের কারণেই এসেছিল। তিন-তিনটে গোল খাওয়ার পরও চার গোলে জয়। জয় সূচক গোলটি যে হিম্মত সিং করেছিল, ম্যানেজার মেহতার বিরোধিতা সত্ত্বেও তাঁকে স্টিক হাতে মাঠে নামিয়েছিলেন তপন দাসই। খেলার বিরতির সময় খেলোয়াড়দের তিনিই জাতীয় পতাকা দেখিয়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। বলা যেতে পারে ভারতীয় হকি দলের সেই জয়ের নেপথ্যের নায়ক ছিলেন তিনিই। অবশ্য রিমার চিত্রনাট্যে খেলোয়াড়দের অন্তর্দ্বন্দ্ব, হকি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের আকচা-আকচিও উপযুক্ত জায়গা নিয়েছে। তপনের সঙ্গে মেহতার ইগোর লড়াই। ওয়াদিয়া নামে পার্সি ভদ্রলোকের নিরপেক্ষতা কিংবা খেলোয়াড় আরপি সিংয়ের সঙ্গে হিম্মতের ঠান্ডা লড়াই কোনওটাই বাদ দেননি রিমা। তবে তপন দাসের পানীয় প্রীতি নিয়ে যে ঘটনাগুলো দেখিয়েছেন, সেটা কতটা সত্যি আর কতটাই বা কল্পনা তা নিয়ে এই মুহূর্তে প্রশ্ন তোলার জন্য সম্ভবত কেউ বেঁচে নেই। নইলে…।
[পাঁচ নায়িকা নিয়ে কি দর্শকদের মন জয় করতে পারল বিরসার ‘ক্রিসক্রস’?]
১৯৩৬ সালের বার্লিন ওলিম্পিকে জার্মানিকে হারানো-সহ ’৪৮-এ লন্ডনের হকি ম্যাচগুলোর পুনর্চিত্রায়ণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে রিমা অতীতকে বিশ্বাসযোগ্য করার কোনও ত্রুটি রাখেননি।
আর অভিনয়! তারকা অক্ষয় কুমারের অনভ্যস্ত ভঙ্গিতে ধুতি-শার্ট পরে বাঙালি সাজটা মন্দ নয়। তপনের চরিত্রে অভিনয়ে তিনি এক ধরনের কমেডির ছোঁয়া রেখেছেন মাতাল বলেই কি? ওই ছোঁয়াটি এক কথায় ‘ব্যাড টাচ’। স্ত্রী মনোবীণার চরিত্রে মৌনী রায় কোনওরকমে চালিয়ে গিয়েছেন বলতে পারি। তাঁর পোশাক-আশাকের বিন্যাসে, চোখমুখ শরীরের ঝলকানিতে এত শিহরণ কেন? কুণাল কাপুর হয়েছেন দলের ক্যাপ্টেন সম্রাট। মন্দ নন। আরও দুটি চরিত্রে হিম্মত সিং ও আরপি সিংয়ের চরিত্রের দুই অভিনেতাই বেশ ভাল। ওই যে শুরুতেই বলেছি বায়োপিক তৈরির ব্যবসায়ীক মজাটাই হল দর্শককে উত্তেজনা ও দেশপ্রেমের জোয়ারে ভাসিয়ে দেওয়া। এখন তো আবার দেশপ্রেমের সংজ্ঞাটা পালটে গিয়েছে। সুতরাং সত্য-মিথ্যায় মাখানো ‘গোল্ড’ নামের এই অলংকারটি প্রযোজকের গদিতে সোনা ঝরাতেই পারে।
[মাটির সোঁদা গন্ধ মেখে কতটা মন কাড়তে পারল ‘উড়নচণ্ডী’?]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.