গান্ধীজয়ন্তীতে মুক্তি পেল সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘গুমনামি’। পুজো রিলিজের বাংলা এবং হিন্দি সিনেমার ভিড়ে কেন দেখবেন এই ছবি, লিখলেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ।
ছবি- গুমনামি
পরিচালক– সৃজিত মুখোপাধ্যায়
অভিনয়- প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, তনুশ্রী চক্রবর্তী, সৃজিত মুখোপাধ্যায়।
প্রথমত, নেতাজি অন্তর্ধান রহস্যের মতো একটা স্পর্শকাতর ইস্যু নিয়ে ছবি তৈরি করার জন্য পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় নিঃসন্দেহে ‘বাহবা’র দাবিদার। মৃত্যুরহস্য পর্দায় কতটা সাফল্যের সঙ্গে ফুটে উঠল কি উঠল না, সে পরের কথা। তবে যে ছবি জন্মলগ্ন থেকেই বিতর্কের শিকার, সেসব সামলে পুজোর উপহার হিসেবে বাঙালি সিনেদর্শকদের সামনে আনার জন্য পরিচালককে তো বাহবা দিতেই হয়!
আসা যাক, ‘গুমনামি’ প্রসঙ্গে। উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদ আশ্রমে থাকা সেই ভগবানজি কি সত্যিই নেতাজি? ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট কি সত্যিই কোনও বিমান দুর্ঘটনা ঘটেনি? এই ছবিতে কিন্তু কখনও সাদা-কালো ফ্রেমে আবার কখনও বা সাম্প্রতিক অতীতের প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে গিয়ে রঙিন ফ্রেমে বারবার প্রশ্ন তুলেছেন সৃজিত। মনে করিয়ে দিয়েছেন শুধু শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ের স্ট্যাচু কিংবা কয়েকটা ভবন-সরণির নামে ‘নেতাজি’র উল্লেখ থাকলেই যে এই দেশ তথা বিশ্ব নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসকে মনে রেখেছে, তেমনটা নয়!
পিতাসম গান্ধীজির সঙ্গে অহিংসভাবে ব্রিটিশদের সঙ্গে সমঝোতায় নারাজ নেতাজি। দেশকে স্বাধীন করতে তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের পথে হাঁটতে চান। তবে দেশে থেকে তা সম্ভব নয়। তাই বিদায় জানালেন তাঁদের। এভাবেই শুরু হয় ‘গুমনামি’। এরপর চিন-জাপান-রাশিয়া-মস্কোয় দফায় দফায় আলোচনা। পরিকল্পিত বিমান দুর্ঘটনা, সবই তুলে ধরা চেষ্টা করেছেন সৃজিত। তবে এই লম্বা টাইম পিরিয়ডটাকে ফ্রেমে ধরতে গিয়ে কোথাও হয়তো একটু তাড়াহুড়ো করে ফেলেছেন পরিচালক। মনে হয়েছে আরেকটু পরিসরে দেখানো যেত। তবে নেতাজি অন্তর্ধান রহস্যে ডুবে যাওয়া এক সাংবাদিককে কিন্তু আরও বেশি করে এই ‘সিনেমার নায়ক’ বলে মনে হয়েছে।
নেতাজির মৃত্যু নিয়ে ঘনীভূত হওয়া রহস্যের সমাধা করতে শাহনওয়াজ, খোসলা এবং মুখার্জি কমিশন নামে যে তিনটি কমিশন গঠিত হয়েছিল, তাদের যুক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উপযুক্ত নথিপত্র দেখিয়ে একের পর এক যুক্তি পরিবেশন করেছেন সাংবাদিক চন্দ্রচূড় ধর। ফৈজাবাদের সেই সন্ন্যাসী গুমনামিবাবা কিংবা ভগবানজি যে নেতাজি, তা প্রমাণ করার চন্দ্রচূড়ের আপ্রাণ চেষ্টাও তুলে ধরেছেন পরিচালক। নেতাজি অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে এক অ্যাসাইনমেন্টের নির্দেশে আসে তার উপর। যে সাংবাদিক কোনও দিনই নেতাজি আবেগে ভেসে যেতেন না, অ্যাসাইনমেন্ট চলাকালীন নেতাজি সম্পর্কে সেই ধ্যানধারণা বদলে যায়। তাঁর একমাত্র ধ্যানজ্ঞান হয়ে ওঠে নেতাজি। নেতাজি-ই তখন চন্দ্রচূড়ের একমাত্র আদর্শ। যেই চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য। ইতিহাসের পাতায় নেতাজি অন্তর্ধান রহস্য সম্পর্কিত সব ধারণাকে যুক্তি দিয়ে খণ্ডাতে চেয়েছিলেন চন্দ্রচূড়। ‘গুমনামি’র ফ্রেমে সেসবও তুলে ধরেছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়। অনির্বাণও অনবদ্য। ‘গুমনামি’তে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মেক-আপও প্রশংসনীয়। ছবির দৃশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গানগুলিও মর্মে পশে যাওয়ার মতো।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.