সুপর্ণা মজুমদার: রিমেক শব্দ বলিউডের কাছে নতুন নয়। সাম্প্রতিক অতীতে তাতে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। একই পরিচালককে দিয়ে নতুন ছবি তৈরি করা হচ্ছে। তাতে সাফল্য মিলছে ঠিকই, কিন্তু সবক্ষেত্রে কি ছবির মান উন্নত হচ্ছে? লাভের অঙ্ক অবশ্য অক্ষয় কুমার (Akshay Kumar) ভাল বোঝেন। তাই বিতর্ক, সমালোচকদের নিন্দা সত্ত্বেও ওয়েব দুনিয়ায় প্রচুর দর্শক দেখেছিলেন ‘লক্ষ্মীবম্ব’ থুড়ি ‘লক্ষ্মী’ সিনেমাটি। এ ছবিতে অক্ষয় শুধুমাত্র অন্যতম প্রযোজক। কেন্দ্রীয় চরিত্র ভূমি পেড়নেকর (Bhumi Pednekar)। প্রতিপক্ষ ‘বাহুবলী’ খ্যাত অনুষ্কা শেট্টি (Anushka Shetty)। হ্যাঁ, তাঁকে ক্যামেরার সামনে রেখেই তেলুগু সিনেমা তৈরি করেছিলেন পরিচালক জি অশোক (G. Ashok)। হুবহু সেই সিনেমাই নতুন করে তৈরি করেছেন হিন্দিতে।
‘ভাগমতী’ (Bhaagamathie) হিন্দিতে প্রথমে হয়েছিল ‘দুর্গাবতী’। পরবর্তীকালে ‘দুর্গামতী’ (Durgamati)। নাম পরিবর্তনের কারণ আমাজন প্রাইম ভিডিওয় (Amazon Prime Video) ছবির মু্ক্তির পরও পরিষ্কার নয়। কারণ কাহিনি অনুযায়ী নাম পরিবর্তনের তেমন কোনও প্রয়োজন ছিল বলে তো মনে হয় না। কাহিনি নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। তবে ট্রিটমেন্টে দাক্ষিণাত্যের প্রভাব স্পষ্ট। যেটা রাঘব লরেন্সের ‘লক্ষ্মী’র ক্ষেত্রে হয়েছিল, তা অশোকের ছবির ক্ষেত্রেও হয়েছে। এই প্রসঙ্গে একটু দক্ষিণী তারকা বিজয় দেবেরকোণ্ডার উদাহরণ দেওয়া যাক। এক সাক্ষাৎকারে বিজয় জানিয়েছিলেন, তিনি নিজের মাতৃভাষার বাইরের সিনেমায় কখনই এমন চরিত্রে অভিনয় করতে চান না যার কাহিনি এক্কেবারে সেই অঞ্চলভিত্তিক। কারণ ভারতবর্ষের প্রত্যেক প্রদেশের আঞ্চলিক মুড ভিন্ন থাকে। তাতে অন্য প্রদেশের অভিনেতা খাপ খাওয়াতে পারেন না। দাক্ষিণাত্যেরও একটি ধারা রয়েছে, সেই ধারায় সেখানকার অভিনেতা-অভিনেত্রীরাই বেশি স্বচ্ছ্যন্দ। তবে ছবির সিনেম্যাটোগ্রাফি বেশ ভাল। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজক যথাযথভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, বিশেষ করে ভয়ের দৃশ্যে। কিছু জায়গায় ভয়ের আবহ তৈরি করেছেন পরিচালক। তবে কিছু জায়গায় বড্ড বেশি প্রেডিক্টেবল, বিশেষ করে যাঁরা ‘ভাগমতী’ দেখেছেন।
এবার আসা যাক চরিত্রের ক্ষেত্রে। রিমেক হলে তুলনা আসতে বাধ্য। ভূমি পেড়নেকর তা ভালভাবে জেনেই এই দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন। তবে অভিনয় শুধুমাত্র সংলাপ বলা নয়, পুরো শরীরের ভাব ও ভঙ্গিমা চরিত্রের ক্ষেত্রে খুব প্রয়োজন। অনুষ্কা শেট্টির শারীরিক গঠন ও ভূমির শারীরিক গঠনে অনেকটাই পার্থক্য। দু’জনের অভিনয়শৈলীও একদম আলাদা। ভূমি ভাল অভিনেত্রী, তবে রুদ্রমাদেবী, দেবসেনা কিংবা ভাগমতীর মতো দোর্দণ্ডপ্রতাপ চরিত্রে অনুষ্কাকে ছাপিয়ে যাওয়া তাঁর পক্ষে অসম্ভব। চেষ্টা ভূমি করেছেন। কিন্তু শাহরুখ খান যেমন ‘সিরিয়াস মেন’ হতে পারবেন না, তেমনই নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি সিনেমার রাজ কিংবা রাহুল হয়ে উঠতে পারবেন না।
হিন্দি ছবিতে যিশু সেনগুপ্তর (Jisshu Sengupta) কদর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে। এই ছবিতে যিশু নিজের অভিনয় ধার দেখানোর অনেকটা সুযোগ পেয়েছেন। আর তার সদ্ব্যবহারও করেছেন। আরশাদ ওয়ারসি নেগেটিভ চরিত্রে দাগ কাটতে পারলেন না। ভূমির প্রেমিকের চরিত্রে করণ কাপাডিয়া শুধুমাত্র অক্ষয় কুমারের শাশুড়ি ডিম্পল কাপাডিয়ার বোনের ছেলে বলেই সুযোগ পেয়েছেন। মাহি গিল বাঙালি হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছেন। সর্বোপরি ‘দুর্গামতী’ দাক্ষিণাত্যের ‘ভাগমতী’ ছায়া হয়ে থেকে গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.