নির্মল ধর: নারী বহুরূপিণী। নারী সংসারী, গৃহবধূ, নারী শক্তিরূপিণী, নারী প্রেমিকা, নারী রুদ্রাণীও। উল্লাস মল্লিকের কলমে বিপরীত মেরুর দুই নারীর কথা বলা হয়েছে। চিত্রনাট্যকার মনতোষ চক্রবর্তী সেই দুই নারীকে বাস্তব ও অতি নাটক মিলিয়ে একধরনের বাণিজ্যিক চেহারা দিয়েছেন। সেই চেহারাকে জীবন্ত রূপ দিতে পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী বাণিজ্যিক ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে তমসা (ঋতুপর্ণা) এবং ভূমিকার (প্রয়াত দিশা) জীবন তুলে ধরার আন্তরিক ও সৎ চেষ্টা করেছেন। সর্বত্র তাঁর প্রয়াস যে সিনেমার ব্যাকরণ মেনেছে এমন নয়, বেশ কিছু জায়গায় ‘অতি নাটক’ ও কোইনসিডেন্স বড্ড বর্ণময়।
[রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের সামনে প্রদর্শিত হবে রানির ‘হিচকি’]
তমসার সংক্ষিপ্ত প্রেম পর্ব দেখানো ভাল। সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে তমসার পাশে ভূমিকার অবস্থান। দু’টি নারী চরিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। একজন পোড় খাওয়া জীবনকে সরিয়ে পুরুষত্বের দম্ভ ভেঙে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তা সে যে কোনও মূল্যেই হোক। প্রয়োজনে নারীর লাস্যরূপ দিয়েও। তমসা তেমনই এক নারী। অসুস্থ স্বামী শান্তশীলকে( কাঞ্চন) স্ত্রীর সুস্থ করে না তোলার কারণটি অবশ্য স্পষ্ট নয়। অসুস্থ স্বামীর সামনেই সে বহু পুরুষে উপগত নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য। আর বিপরীতে দাঁড়িয়ে ভূমিকা বিপ্লবী দাদুর স্মৃতিতে বিভোর। এমন মেয়ে আজকাল কি সত্যিই মেলে! চিত্রনাট্যের বাঁধুনির গুণেই ভূমিকা কিছুটা বিশ্বাস্য হয়েছে। এই প্রসঙ্গে প্রয়াত শিল্পী দিশার স্বাভাবিক ও সাবলীল অভিনয়ের প্রশংসা করতেই হচ্ছে। অবাস্তব ভূমিকার চরিত্রকে বিশ্বস্ত করে তোলায় দিশার অভিনয় একটি বড় ভূমিকা নিয়েছে। সিরিয়াস চরিত্রে কাঞ্চন মল্লিকের অভিনয় দুর্দান্ত। তবে ভাল লাগেনি কমেডির ছোঁয়া লাগানো ব্যবসায়িক পার্টনার হরনাথের (বিশ্বজিৎ) চরিত্রটি। কেন তাকে বাতুল করে তোলা হবে তমসাকে উজ্জ্বল করে তোলার জন্য? কিন্তু দর্শক তো বুঝতেই পারছে তমসা পুরুষ চরিত্রকে ব্যবহার করছে শুধুমাত্র নিজের আখের গোছাতে। তমসা ও ভূমিকার পারস্পরিক সংঘাত একটি বড় জায়গা নিয়েছে চিত্রনাট্যে। এই সংঘাতের বিন্যাসটি অবশ্য সুন্দরভাবেই গড়েছেন পরিচালক। তবে শেষ মুহূর্তে অসুস্থ শান্তশীলের পরাক্রমী হয়ে ওঠার ঘটনাটি বেশি নাটকীয় লেগেছে। আবার অসুস্থ স্বামীর কাছে এসে পরাজিত তমসার আত্মসমর্পণ নাটকীয় হলেও দর্শকদের ভাল লাগবে এবং অনেক কিছু অব্যক্ত রেখেও চিত্রনাট্যকার পরিচালক তমসার এক মানসিক উত্তরণের কথাও বুঝিয়ে দিলেন। পরিচালক হরনাথ বাণিজ্যিক ঘরানার মানুষ। এমন একটি প্রচেষ্টার জন্য সাধুবাদ দিতেই হয়। সময়ের দাবি মেনে নিজেকে বদলে নেওয়াটা জরুরি। সিনেমার ভাষা এবং ব্যকরণ নিয়ে আরও আধুনিক হয়ে ওঠা দরকার তাঁর পক্ষে। তবে যেটুকু ঘটিয়েছেন সেটাই বা কম কিসে!
[সিনে ইন্ডাস্ট্রিতে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াবেন না, আরজি জাভেদ আখতারের]
শৌভিক বসুর ক্যামেরার কাজ বেশ ভাল। দিশার নিম্ন মধ্যবিত্ত বাড়ির পরিবেশটি সুন্দর এসেছে। পাশাপাশি তমসার সাজানো বাড়ির পরিমণ্ডলটিও ভাল, শান্তশীলের ভিখিরি বন্ধু মন্টুর (দেবরঞ্জন নাগ) বাড়ির পরিবেশটিও বাস্তবোচিত। দেবজ্যোতির আবহ নাটকীয় পরিস্থিতিগুলোকে যেমন বাড়তি মাত্রা দেয়, তেমনই কঠিন সিচুয়েশনগুলোকে লঘুতর করে। অভিনয়ে দিশার কথা আগেই বলেছিল। ওঁর বিপরীতে দাঁড়িয়ে তমসার চরিত্রে ঋতুপর্ণা আপাত ভিলেনিপনার অভিনয় মন্দ করেননি। স্বামীর প্রতি তাঁর তাচ্ছিল্যভাবের প্রকাশ হয়টা একটু বাড়াবাড়িই লাগে, তবে শেষ মুহূর্তের আত্মসমর্পণে তিনি আন্তরিক। তমসা তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা একটি অভিনয় হতে পারত। তেমনটি হয়নি। বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী কমেডি করতে গিয়ে একটু বাড়াবাড়িই করেছেন। রাজেশ শর্মা এবং সাহেব চট্টোপাধ্যায়ের ক্যামিও মন্দ নয়। অনেকটাই চিত্রনাট্যের কারণে দিশাকে মনে রাখবেন দর্শক। তাঁর অকাল প্রয়াণ বাংলা সিনেমার ক্ষতিই করল।
[মিমি নয়, রাজের নয়া ‘কাটমুন্ডু’ সফরে নায়িকা শুভশ্রী]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.