Advertisement
Advertisement
Khadaan Review

অ্যাকশনে ফিরেই ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ দেব, যোগ্যসঙ্গত যিশুর, কেমন হল ‘খাদান’?

নাচ-গান, রোমান্স, অ্যাকশনে 'মশালা' প্যাকেজ কতটা জমল? পড়ুন রিভিউ।

Dev, Jisshu Sengupta starrer Khadaan film review
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:December 20, 2024 5:43 pm
  • Updated:December 20, 2024 7:01 pm  

সন্দীপ্তা ভঞ্জ: ‘ফ্যামিলি নিয়ে ব্যস্ত আছি তো কী ভাবিছিস, অ্যাকশনটা ভুলে গেছি?’, ‘খাদান’-এর সংলাপ ধার করেই বলা ভালো দেব মনে করিয়ে দিলেন ‘তিনি ফিরেছেন’। কোলিয়ারি এলাকা, মাফিয়া রাজ, সিস্টেম-সিন্ডিকেটের মারপ্যাঁচ… থেকে নাচ-গান, রোমান্স, অ্যাকশনে ‘মশালা’ প্যাকেজ কতটা জমল ‘খাদান’?

‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ দেব
শার্টের খোলা বোতাম। আলুথালু চুল। মুখে বিড়ি। শেষ কবে প্রান্তিক শ্রেণির হিরো হিসেবে কোনও বাঙালি অভিনেতা ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ লুকে ধরা দিয়েছেন, তা মনে পড়ে না। ঠোঁটের ফাঁকে দেবের বিড়ি ধরার স্টাইল মনে করিয়ে দিল ‘দিওয়ার’-এর বচ্চনের কথা। সেই ‘চ্যালেঞ্জ’ বা ‘পাগলু’র সোয়াগ আছে বটে তবে এবার ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ অবতারে ধরা দিয়ে দেব বুঝিয়ে দিলেন রাজার প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। এযাবৎকাল বলিউড কিংবা দক্ষিণী সিনেমার মারপিটের মারপ্যাঁচে বাঙালি দর্শকরা হাততালি দিয়ে প্রেক্ষাগৃহ ভরিয়েছেন। তবে এবার হোমমেড প্রোডাক্টে সেই স্বাদ দিলেন দেব। মাস কর্মাশিয়াল হিসেবে ‘খাদান’ যে হিট, হলের গর্ভগৃহে উপচে পড়া হাততালি আর সিটির আওয়াজই তা বলে দেয়। এবার আসা যাক সিনেমার গল্পে।

Advertisement

Dev-Khadaan

স্বাদ বদলের গল্প
কাঁটাতার পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে সর্বস্ব খুইয়ে এপারে আসা মোহন দাসের (যিশু সেনগুপ্ত) সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় শ্যাম মাহাতোর (দেব)। কীর্তনের বোলে মজে থাকা মোহনের মাস্টারমাইন্ড আর শ্যামের শক্তি, দুয়ে মিলে কোলিয়ারি এলাকায় একচেটিয়া রাজত্ব শুরু হয়। দুই ‘লুটেরা’ বন্ধুর খবর পেয়ে স্থানীয় বিধায়ক সিদ্দিকির (সুজন নীল মুখোপাধ্যায়) বুকেও কম্পন ধরে। শ্যাম-মোহনের কাঁধে ‘খাদান’-এর দায়িত্ব সঁপে সিস্টেম-সিন্ডিকেটে দিব্যি চলছিল। এসবের মাঝেই রবিনহুড ভাবমূর্তির জেরে খাদান এলাকার আদিবাসীদের ‘দেবদূত’ হয়ে ওঠেন শ্যাম। চাষের জমি কেড়ে খেটে খাওয়া শ্রেণীর পেটে লাথি মারতে নারাজ সে। কারণ খিদের জ্বালা তারও জানা। অতঃপর খাদানের ২০ শতাংশ ভাগ উপহার দিয়ে শ্যাম হয়ে ওঠে তাদের রাজা। সেখানেই এন্ট্রি আদিবাসীদের সর্দার মান্ডির। তবে ওই সিনেমার সংলাপ ধার করেই বলতে হয়, ‘পুরুষ মানুষের প্রধান অস্তর ধৈর্য আর বীর্য’! রাগের মাথায় পুলিশ খুন করে শ্যাম জেলে যায়। এদিকে ঘরে সদ্যোজাত সন্তান আর স্ত্রী। জেলেই রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় রবিনহুড শ্যামের। নেপথ্যের ষড়যন্ত্রী কে? সেকথা এই পরিসরে না বলাই ভালো। দ্বিতীয়ার্ধে ক্ষমতার দখল বুঝে নিতে খেল দেখায় শ্যাম মাহাতোর ছেলে মধু। ততদিনে মোহনের সংসার ফুলেফেঁপে প্রাসাদোপম বাংলো থেকে মাফিয়া রাজত্ব চালাচ্ছে। এরপরই গল্পে ট্যুইস্ট! কী? জানতে হলে হলে ঢুঁ মারতে হবে। তবে এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, গল্পের বেশ কিছু ট্যুইস্ট প্রেডিক্টেবল! গাঁথুনি আরও উন্নতমানের হলে ভালো হত।

Khadaan-2

একাই একশো…

প্রত্যন্ত গ্রামবাংলা কিংবা প্রান্তিক এলাকার হৃদস্পন্দন তিনি যেন টের পান। শ্যাম মাহাতোকেও তাই আমজনতার কণ্ঠস্বর করে তোলেন দেব। ‘মাস কর্মাশিয়াল’ করতে হলে ‘মাসের’ কথা তুলে ধরতেই হবে। সিনেমার প্রয়োজনে বারবার নিজেকে ভেঙে-গড়ে এক্সপেরিমেন্ট করেছেন। ‘পাগলু’ কিংবা ‘দুই পৃথিবী’র সুপারস্টার বছরখানেক ধরে যেভাবে ছক ভেঙে ক্যামেরার সামনে ধরা দিচ্ছেন, তাতে মুগ্ধ হয়েছেন সিনে-সমালোচকরাও। যে কোনও চরিত্র আত্মস্থ করতেও কোনওরকম কসরত বাকি রাখেননি তিনি। ‘খাদান’-এ আবার দ্বৈত চরিত্রে তিনি। ‘বাপ-বেটা’ দুই ভূমিকাতেই সাধ্যমতো নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তবে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, এই ছবিতে দেবের রোমান্টিক ইমেজ তাঁর শুরুর দিনগুলোর নস্টালজিয়া উসকে দেয়। চরিত্রের প্রয়োজনে বিড়ি টেনে ঠোঁট পুড়িয়েছেন। অ্যাকশন সিকোয়েন্সের মারপ্যাঁচ হোক কিংবা নাচে-গানে ‘লাভার বয়’ ইমেজ, সবেতেই সাবলীল দেব। তবে অভিনেতার নাচের দৃশ্যের বেশ কিছু জায়গায় ফিটনেসে খামতি মনে হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ দশ বছর বাদে কমার্শিয়াল মশালা মুভিতে তিনি যে প্রচেষ্টাটা করে দেখালেন নতুন পরিচালক সুজিত দত্ত রিনোকে নিয়ে, তার জন্যে নিঃসন্দেহে বাহবা প্রাপ্য। সিস্টেমের ভিতরে থেকে সিস্টেমকে প্রশ্ন ছোঁড়ার সাহস হয় ক’জনের?

Khadaan Trailer: Dev, Jisshu Sengupta starrer Bengali movie set the stage ablaze

‘অর্জুন’ দেব, তাঁর ‘সারথি কৃষ্ণ’ যিশু
‘খাদান’ যে দেবময় ছবি, সেকথা একেবারেই বলা যাবে না। সমানতালে সারথির দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন যিশু সেনগুপ্ত। বলিউড, দক্ষিণ ঘুরে অবশ্য এই ধরনের চরিত্র তাঁর কাছে জলভাত। তবে মোহনের চরিত্রের গভীরতায় আরেকটু নজর দিতে পারতেন পরিচালক। বিশেষ করে তাঁর বাঙাল সংলাপ বলার স্টাইলে। তবে শ্যাম-মোহনের রসায়ন হিট। ভবিষ্যতেও এই জুটিকে পর্দায় দেখার ইচ্ছে রইল। ‘খাদান’-এর ক্লাইম্যাক্স জমিয়ে। সিনেপোকাদের জন্য অবশ্য ট্যুইস্ট ধরা খুব একটা কঠিন নয়। ‘একেনবাবু’ কিংবা ‘জটায়ু’র মোড়ক থেকে বেরিয়ে অনবদ্য অনির্বাণ চক্রবর্তী। আদিবাসী সর্দার মান্ডির ভূমিকায় তাঁর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ থেকে সংলাপ বলার ধরন, এককথায় দারুণ। দীর্ঘদিন বাদে বড়পর্দায় বরখা বিস্ত। প্রথমার্ধে তাঁর চরিত্র নজর কাড়লেও দ্বিতীয়ার্ধে তিনি বড়ই ফ্যাকাসে। দুষ্টু-মিষ্টি প্রেমিকার ভূমিকায় ইধিকা পাল যথাযথ। পরিমিত অভিনয় সুজন নীল মুখোপাধ্যায়েরও। নজর কাড়লেন জন ভট্টাচার্য। বিশেষ করে দেবের সঙ্গে অ্যাকশন দৃশ্যে। 

কেন দেখবেন?
স্টোরি টেলিংয়ে খামতি থাকলেও ক্ষুরধার অ্যাকশন, গান-নাচ রোম্যান্সে পুরো মশালা মুভি প্যাকেজ ‘খাদান’। পয়সা উসুল! বাংলা সিনেইন্ডাস্ট্রির অর্থনীতি চাঙ্গা করতে এরকম মাস কমার্শিয়াল দরকার। অতঃপর শীতকালীন ছুটিতে প্রেক্ষাগৃহে ঢুঁ মারতেই পারেন পুরনো দেবকে ফিরে পেতে। শেষপাতে বলি, ‘খাদান ২’ আসছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement