অশান্তির আবহেই শান্তির বার্তা ছড়িয়েছিলেন। দিয়েছিলেন ঐক্যের বার্তা। আজ মূর্তি ভাঙার রাজনীতির শিকার ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। এমন পরিস্থিতিতেই ভারত কেশরীকে পর্দায় তুলে ধরেছেন তিনি। বাংলা-হিন্দি দুই ভাষাতেই মুক্তি পাচ্ছে পরিচালক মিলন ভৌমিকের ছবি। নামও দুটি: ‘দাঙ্গা- দ্য রায়ট’ এবং ‘১৯৪৬- দ্য ক্যালকাটা কিলিং’। তবে কেন্দ্রীয় চরিত্রে একজনই, গজেন্দ্র চৌহান। ছবি মুক্তির আগে মনের কথা শেয়ার করলেন সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-এর সঙ্গে। শুনলেন সুপর্ণা মজুমদার।
এতদিন পর সিনেমার পর্দায় আপনি। ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মতো চরিত্রকেই কেন বেছে নিলেন?
গজেন্দ্র: এটা আসলে সত্যিকারের একজন দেশপ্রেমিকের কাহিনি। তাঁর জন্যই আজ পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অংশ। ডঃ শ্যামাপ্রসাদ না থাকলে আজ বাংলা পাকিস্তানের অঙ্গ হত। দেশভাগের সময় জিন্না পুরো পরিকল্পনা করে ফেলেছিলেন। তা হতে দেননি ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। সারা দেশে একই আইন, একই সংবিধানের পথ দেখিয়েছিলেন। আমি তো ওনাকে ‘শের-এ-বাংলা’ বলি। এদিকে বাম ও মমতার শাসনেই বাংলার হাল এমন। আসল উন্নয়নের পথ শ্যামাপ্রসাদের মতো মানুষই দেখিয়েছিলেন। এই ভাবনা নিয়েই দেশের সরকার চলছে। আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গেও তা হবে। আর এমন সিনেমা মানুষকে শ্যামাপ্রসাদের মতো ব্যক্তিত্বের সঙ্গে পরিচয় করাবে। তাঁর ভাবনা-চিন্তার প্রসার ঘটাতে সাহায্য করবে।
চারদিকে মূর্তি ভাঙার যে হিড়িক পড়েছে, তাতে শ্যামাপ্রসাদের মূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার কী প্রতিক্রিয়া?
গজেন্দ্র: কোনও ভারতীয় মনীষীর মূর্তিই ভাঙা উচিত নয়। তবে ত্রিপুরায় লেনিনের মূর্তি ভাঙার প্রসঙ্গে বলব, লেনিন ভারতীয় ছিলেন না। ওঁর মূর্তির কোনও প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন নেই ওঁর মতাদর্শের। আপনি দেখবেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওঁর মতাদর্শ লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ বিচারই এখন প্রাসঙ্গিক।
[‘সলমনের যথাযথ শাস্তি হয়েছে’, মুখ খুলে ধর্ষণের হুমকি পেলেন সোফিয়া]
বর্তমান পরিস্থিতিতে আজকের প্রজন্মের কাছে শ্যামাপ্রসাদের মতো ব্যক্তিত্ব কতটা প্রাসঙ্গিক?
গজেন্দ্র: ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক। পূর্বসূরিদের ভুললে সামনের দিকে চলা যায় না। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি কংগ্রেস ছেড়ে নতুনত্বের বার্তা দিয়েছিলেন। আজ আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে, কাদের বলিদানের জন্য দাঁড়িয়ে তা জানা উচিত।
এই চরিত্র করাটা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
গজেন্দ্র: প্রথমে মিলনবাবু যখন বলেছিলেন, আমি ভাবতে পারিনি এটা আমি করতে পারব। কারণ অভিনয় তো করতেই পারি, কিন্তু ঐতিহাসিক চরিত্রের মতো দেখতে হওয়াটা খুবই জরুরি। তাই আমি আগে স্পেশ্যাল মেকআপ করে দেখেছিলাম কেমন দেখতে লাগছে। এবং আশ্চর্যের বিষয়, আমাকে ও ভারত কেশরীকে দেখতে প্রায় একইরকম লাগছিল। পরে কলকাতায় ওঁর ভাইয়ের সঙ্গে রাজ্যপাল কেশরিনাথ ত্রিপাঠির সঙ্গেও দেখা করি। অনেক সাহায্য পাই।
[নজির গড়লেন অনুষ্কা! প্রযোজক হিসেবে পাচ্ছেন দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার]
এ ছবিকে শংসাপত্র দিতে তো সেন্সর প্রচুর সময় নিয়েছে…
গজেন্দ্র: দেখুন, ঐতিহাসিক তথ্য দিয়ে তৈরি ছবি সৎভাবে তৈরি করতে হয়। এ ছবি দাঙ্গার সময়ের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা। তাই তেমন শব্দও থাকবে, এটা তো স্বাভাবিক! কিন্তু সেন্সর তাতে আপত্তি তুলেছিল। ফলে কিছু পরিবর্তন করতে হয়েছে। সিবিএফসির নিয়ম বড় পুরনো। তা পরিবর্তনের প্রয়োজন। আপনাদের মাধ্যমে আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাবো এই পরিবর্তন তাড়াতাড়ি আনতে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আবহে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে এ ছবি কতটা প্রাসঙ্গিক?
গজেন্দ্র: ওঁর আদর্শ এই সময় খুবই জরুরি। আমার মনে হয় এ ছবি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক ভিত নাড়িয়ে দেবে। পশ্চিমবঙ্গে যেভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচন হচ্ছে, তা দুঃখের বিষয়। তবে সত্যেরই জয় হয়। আগামী দিনে এমন সময় আসবে যে বাংলায় সত্যের জয় হবে এবং বিজেপির শাসন হবে।
সামনেই ছবির মুক্তি? দর্শকদের জন্য কী বলবেন?
গজেন্দ্র: দর্শকদের বলব, আমরা অনেক পরিশ্রম করে ছবি তৈরি করেছি। দয়া করে একবার অন্তত গিয়ে ছবিটি দেখুন। পছন্দ হওয়া না হওয়া ব্যক্তিগত বিষয়। তবে এটা জানুন, আপনার জন্য এবং বাংলার জন্য কারা বলিদান করেছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.