সুলয়া সিংহ: উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ভাঙাচোরা ভাবমূর্তি, অ্যাকশনের মধ্যেও কমেডি আর পত্নীর সঙ্গে পুলিশের দুষ্টু-মিষ্টি প্রেম কাহিনি। এই হল দাবাংয়ের ইউএসপি। কখনও উর্দি গায়ে চাপিয়ে তো কখন শার্টলেস হয়ে চুলবুল পাণ্ডের দাবাংগিরি দেখতে মন্দ লাগেনি তাঁর অনুগামীদের। দাবাংপ্রেমীদের কথা ভেবে পরিচালক প্রভুদেবাও এবার সেই ধাঁচ ভাঙেননি। কিন্তু আরও বেশি মশলা মাখাতে গিয়েই কেলেঙ্কারিটা করে ফেললেন। ধাঁচ গিয়েছে টেড়েবেঁকে। ফলে ‘দাবাং থ্রি’-তে সল্লু মিঞাকে সেই চুলবুল মেজাজে পাওয়া গেলেও সবমিলিয়ে কেমন যেন অসম্পূর্ণতা রয়ে গেল। প্রথমেই নজর রাখা যাক ছবির গল্পের দিকে।
কাহিনি: চুলবুল পাণ্ডের পুরো পরিবারকে তো এর আগের দুই পর্বেই দর্শকরা চিনে ফেলেছেন। কিন্তু তার চুলবুল হয়ে ওঠার নেপথ্যে রয়েছে একটি কাহিনি। বলা ভাল প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার কাহিনি। আর সেখানেই আত্মপ্রকাশ সাই মঞ্জেরেকরের। চুলবুলের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়। এমনকী চুলবুল নামটিও তারই দেওয়া। তখনও চুলবুল পুলিশের চাকরি পায়নি। কিন্তু গুন্ডা বালি সিং (কিচ্চা সুদীপ) সেই লাভস্টোরির হ্যাপি এন্ডিং হতে দেয় না। প্রেমিকাকে খুন ফাঁসিয়ে দেয় চুলবুলকে। তারপর নানা বাধা বিঘ্ন পেরিয়ে বর্তমান সময়ে পৌঁছেছে এই দাবাং পুলিশ অফিসার। আর এত বছর পর সেই খলনায়কের সঙ্গে ফের সাক্ষাৎ হয় তার। যে বালি সিং বেআইনিভাবে নারী পাচারের সঙ্গে যুক্ত। পুলিশ হিসেবে কীভাবে দাবাংগিরি দেখিয়ে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটবে, সেটাই হল গল্পের সারমর্ম।
অভিনয়: এ ছবি যে আদ্যোপান্ত সলমন খানের, সে নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ছবির পরতে পরতে শুধুই চুলবুল পাণ্ডে। তাঁর কমেডি, তাঁর অ্যাকশন, তাঁর নাচ। রবিনহুড পাণ্ডে কিংবা ‘পুলিশওয়ালা গুন্ডা’র চরিত্রে সলমনকে দর্শকরা ঠিক যেভাবে দেখতে অভ্যস্ত, সেভাবেই তিনি ধরা দিয়েছেন। তবে সাইয়ের সঙ্গে প্রেমালাপের চেয়ে সন্তানের বাবা হিসেবে রাজ্জোর (সোনাক্ষী সিনহা) সঙ্গে অনেক বেশি সাবলীল লাগছে তাঁকে। সোনাক্ষীর এই ছবিতে তেমন কিছু করার থাকে না। তবে বুঝিয়ে দিয়েছেন, ‘দাবাং’ সিরিজে রাজ্জো একজনকেই মানায়। মাখন চাঁদ পাণ্ডে অর্থাৎ আরবাজ খান নিজের চরিত্র ভালভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে এই ছবির প্রাপ্তি হল ভিলেন বালি সিং। দক্ষিণী সুপারস্টার কিচ্চা সুদীপের চালচলন-লুক থেকে অভিনয়, নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। বলিউডে ডেবিউ করা সাইয়ের চরিত্রটি ছোট। এবং তাতে সাবলীল অভিনয়ই করেছেন তিনি।
কী ভাল লাগল না:
অল্পবয়সি সাইয়ের সঙ্গে সলমনের ভালবাসার দৃশ্য হজম করতে বেশ কষ্ট হয়। অকারণে একের পর এক গান দিয়ে ছবিকে অতিরিক্ত দীর্ঘ করার কোনও মানে খুঁজে পাওয়া গেল না। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সলমন যেন আরও দাবাং হয়ে উঠছেন। পরিচালক অন্তত তেমনটাই মনে করেছেন। তাই অ্যাকশনের পরিমাণ এ ছবিতে দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। একাহাতেই শয়ে শয়ে পালোয়ানদেরও শেষ করে দিচ্ছেন তিনি। অ্যাকশনের এই ওভারডোজ অনেক সময়ই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজের মায়ের খুনে কে অভিযুক্ত, রাজ্জোর সেটাও না জানা বড্ড বাড়াবাড়ি। ছবির কমেডিও বেশ ম্যাড়ম্যাড়ে। আর সর্বোপরি, আজব ভঙ্গিতে নাচিয়ে ‘মুন্না’কে বদনাম না করলেই ভাল করতেন প্রভুদেবা। কোরিওগ্রাফার পরিচালক হলে হয়তো এমনটা হয়। রেমো ডিসুজাও ‘রেস থ্রি’-তে একই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন।
কী ভাল লাগল:
‘দাবাং’ ছবির প্রত্যেকটি পর্বের সঙ্গে একটু একটু করে এগিয়েছে এর গল্প। সেই ধারাবাহিকতা এই ছবিতেও উপস্থিত। পরিচিত সেই পাণ্ডে পরিবারের ভাল-মন্দের সঙ্গে আরও একবার মিশে যেতে খারাপ লাগে না। মহিলাদের নিরাপত্তা কিংবা পুলিশের কর্তব্য নিয়ে কয়েকটি সংলাপ খারাপ নয়। আর আপনি যদি মনে প্রাণে ভাইজানকে ভালবাসেন, তবে তাঁর তরফে বড়দিনের এই উপহার চেখে দেখতেই পারেন।
কিন্তু বর্তমানে যেভাবে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে উত্তপ্ত গোটা দেশ, তাতে এ ছবি বক্স অফিসে কতটা ঝড় তুলতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সল্লু মিঞার ছবির ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শোয়ে সিনেমা হলের ফাঁকা আসন বেশ অবাক করার মতোই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.