Advertisement
Advertisement

Breaking News

ছপাক

রাজনীতিকে ছাপিয়ে গেল ‘ছপাক’, জীবনের অন্যতম সেরা অভিনয় দীপিকার

প্রথম দিনের প্রথমার্ধেই বক্স অফিসে ১২ কোটি ছাড়াল ‘ছপাক’।

Chhapaak movie review: Deepika Padukone did it again
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:January 10, 2020 1:03 pm
  • Updated:January 10, 2020 1:44 pm  

দেশজুড়ে চলতে থাকা টালবাহানা, সাপোর্ট-বয়কট বিতর্কের মাঝেই মুক্তি পেল মেঘনা গুলজার পরিচালিত ‘ছপাক’। অ্যাসিড আক্রান্ত যোদ্ধা লক্ষ্মী আগরওয়ালের ভূমিকায় দীপিকা পাড়ুকোন। কেন এই ছবি আজকের জন্য প্রাসঙ্গিক? লিখছেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ

অভিনয়: দীপিকা পাড়ুকোন, বিক্রান্ত মাসে, বৈভবী উপাধ্যায়, পায়েল কাপুর

Advertisement

পরিচালক: মেঘনা গুলজার

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলল ‘ছপাক’

সত্যিই তো, আমাদের দেশে মেয়েদের সঙ্গে হওয়া ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির মতো ঘটনাগুলো যদিও বা আমরা গুরুতর অপরাধ হিসেবে ধরি। প্রাণদণ্ড দাবি করি। অ্যাসিড অ্যাটাক কি তার চেয়ে কম গুরুতর অপরাধ? যে অ্যাসিড অ্যাটাকের বীভৎসতা সারাজীবন ধরে বয়ে বেড়াতে হয় কাউকে। ঢেকে রাখতে হয় ঝলসে যাওয়া চেহারা। কিন্তু এই গুরুতর অপরাধ যে করছে? তাঁর শাস্তি কি শুধু ১০ বছরের জেল, আর কারি কারি টাকা জরিমানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ? গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে দীপিকা পাড়ুকোন অভিনীত ‘ছপাক’। 

আজকের জন্য প্রাসঙ্গিক

অ্যাসিড আক্রমণের বীভৎসতা, কোট-কাছারিতে চলতে থাকা দীর্ঘকালীন যুদ্ধ জয়ের গল্প পর্দায় তুলে ধরেছেন পরিচালক মেঘনা গুলজার। তুলে ধরেছেন, কারণ প্রয়োজন ছিল এই গল্প হাজার হাজার লক্ষ্মী আগরওয়ালের কাছে পৌঁছে দেওয়া। তাঁদের মনোবল বাড়ানোর। রণক্ষেত্র ছেড়ে না পালিয়ে হাসিমুখে অগ্নিকন্যার মতো এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। সেটাই করেছেন মেঘনা গুলজার। আর এই যুদ্ধে সারথী মেঘনার অর্জুন হয়েছেন দীপিকা পাড়ুকোন। কী ভালই না হত, যদি বাজারে অ্যাসিড বিক্রি নিষিদ্ধ হত, তাহলে হয়তো শয়ে শয়ে মেয়েকে এভাবে পুড়তেও হত না। কোঁচকানো চামড়া, ক্ষত-বিক্ষত চেহারার অভিশপ্ত জীবন নিয়ে বাঁচতে হত না! মুখ্য চরিত্র মালতির মুখ দিয়ে হাজার হাজার অ্যাসিড আক্রান্ত যোদ্ধার এমন আর্তি তুলে ধরেছেন পরিচালক। উল্লেখ্য, প্রত্যেক চরিত্রের মতো হামলাকারীর নামও বদলানো হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতা একেবারেই দেখাননি। বরং লক্ষ্মীর আসল অপরাধী নাইম খানের বদলে বসির খান নাম রাখা হয়েছে।

হার না মানার গল্প

অ্যাসিড ঝলসে দিয়েছে মুখের ৭০ শতাংশ। কুঞ্চিত ত্বক, বিবর্ণ মুখমণ্ডল। নেই কান। চোখ-নাকের মাংস মিশে একাকার। নেই ভ্রু-যুগল। সৌন্দর্যকে এক নিমেষে ম্লান করে গিয়েছে। যে চেহারা দেখলে বাচ্চারা আঁতকে ওঠে। চিৎকার জুড়ে দেয়। পাড়া-প্রতিবেশী তো দূর অস্ত, নিজের মা-বাবার কাছেও যে চেহারা বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে। এমনকী আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মুখ দেখে নিজেই আঁতকে ওঠে সে! কিন্তু তবুও হাসিমুখে রণক্ষেত্রে দাপিয়ে বেড়ানো চারটিখানি কথা নয়! অ্যাসিডে ক্ষত-বিক্ষত হওয়া ঢাকা মুখ দুনিয়ার সামনে তুলে ধরা। নেপথ্যে কারণ একটাই। সারা দুনিয়া দেখুক অ্যাসিড আক্রমণের বীভৎসতা। দেখুক বাহ্যিক সৌন্দর্য ছাড়াও দুনিয়াজুড়ে দাপিয়ে বেড়ানোর সংগ্রাম। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া আনন্দ অশ্রু। শিখুক, এভাবেও বেঁচে থাকা যায়। বাইরের দুনিয়ার কাছে সে ‘কুৎসিত’ জেনেও কাউকে ভাললাগা, তার প্রেমে পড়া, কোনওরকম সংকোচ না রেখে সাহস করে মনের কথা বলা। জীবনযুদ্ধে নিজেকেই নিজের ঢাল তৈরি করার গল্প ‘ছপাক’। এক হার না মানার গল্প।

অ্যাসিড আক্রান্ত যোদ্ধার বেশে দীপিকা এবং সঙ্গী ‘অমল’ বিক্রান্ত

অ্যাসিড আক্রান্ত যোদ্ধা লক্ষ্মী আগরওয়ালের ভূমিকায় দীপিকা পাড়ুকোন অনবদ্য। লক্ষ্মীর চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে কম কাঠখড় পোহাতে হয়নি তাঁকে। দীপিকার হোমওয়ার্কও যে বেশ পোক্ত ছিল তা পর্দাতেই ফুটে উঠেছে। একজন অ্যাসিড আক্রান্তের জীবনের যে কঠিন বাস্তব, তাঁদের রোজকার যে জীবনযুদ্ধ, সেটার সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করার চেষ্টা করেছেন দীপিকা। আর সেই প্রচেষ্টায় তিনি সফল। লক্ষ্মীর সঙ্গী অমলের ভূমিকায় বিক্রান্ত মাসের অভিনয় যথাযথ। ঠিক যতটা দরকার ছিল। অর্থাভাবে বাস্তবের মুখোমুখি হয়ে এক এনজিও চালক যেরকম খিটখিটে-গম্ভীর হয়ে ওঠেন, বিক্রান্ত পারদর্শীতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন। মিষ্টি রসায়ন।

deepika

মেঘনা মনে করিয়ে দিলেন

‘রাজি’র পর আবার এক ভিন্ন স্বাদের ছবি উপহার দিলেন দর্শককে। গোটা সিনেমাজুড়ে অ্যাসিড অ্যাটাকের বিরুদ্ধে চলতে থাকা যুদ্ধের শেষেও শেষ দৃশ্যে মেঘনা ফের দর্শককে মনে করিয়ে দিলেন- একটা লক্ষ্মীর দোষী হয়তো শাস্তি পেয়েছে। কিন্তু দেশে এরকম হাজার হাজার লক্ষ্মী রয়েছে। দেশের কোনও না কোনও কোণায় এখনও অ্যাসিড আক্রমণ চলছে। নষ্ট করে দিচ্ছে ফুলের মতো সুন্দর জীবনকে। এমন গুরু অপরাধের জন্য কি আজও এই লঘু দণ্ড ন্যায্য? ‘ছপাক’-এর শেষ দৃশ্যে বুজে যাওয়া চিন্তাভাবনাকে ফের চাগাড় দিয়ে তুললেন পরিচালক মেঘনা গুলজার।

[আরও পড়ুন: খাপছাড়া চিত্রনাট্য, জিতের ‘অসুর’-এ ম্লান আবির-নুসরত ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement