নির্মল ধর: হয়তো মৈনাক ভৌমিক (Mainak Bhaumik) এমনটাই ছেয়েছিলেন, মা-মেয়ের গল্পে দু’জনের ঝগড়া, খুনসুটি, ভালবাসার সঙ্গে একটু গভীর ভাবেই মানসিক সংঘাতটুকু রাখবেন। বিশেষকরে মা ও মেয়ে যখন এখনকার ‘নেটিজেন’! আবার শত হলেও তো মা ও মেয়ে! স্নেহ, মায়া, মমতায় মাখানো চিরকালীন এক সম্পর্ক। সেখান থেকে সরতে পারেননি পরিচালক। মায়ের সঙ্গে মেয়ের বিরোধ মৃত বাবাকে নিয়ে। বাবার গার্হস্থ্য অত্যাচার মা কেন মুখ বুজে সহ্য করতেন? সেটা মেয়ে চিনি কখনই বুঝে উঠতে পারেনি। বাবা চলে যাবার পরও মা আবার কেন ভোগেন একাকীত্বে, এটাই মেয়ের অনুযোগ। আর এখান থেকেই দু’জনের সংঘাত শুরু। প্রাত্যহিক জীবনের পাশাপাশি সেই বিরোধ ঢুকে পড়ে চিনির পেশায় এবং প্রেমিক সুদীপের সম্পর্কেও।
‘চিনি’র (Cheeni) চিত্রনাট্য মৈনাক সাজিয়েছেন টক-ঝাল-মিষ্টির মিশেলে। কিন্তু এই মিশ্রণে একটু রাসায়ানিক ত্রুটি থেকে গেছে। টক-ঝাল পরিমাণ মতো থাকলেও মিষ্টির পরিমাণ সর্বত্র সমান ভাবে পড়েনি। ফলে অনেক জায়গা যেমন স্বাভাবিক সুন্দর লেগেছে, তেমনি বেশ কয়েকটি জায়গায় মা-মেয়ের সংঘাত কিছুটা সাজানো মনে হয়। চিনির কাজের জায়গা অর্থাৎ অ্যাড এজেন্সির পরিবেশটি ঠিকমতো আসেনি, যেমনটি সুন্দরভাবে উপস্থিত হয়েছে মা মিষ্টি, মেয়ে চিনি ও পরিচারিকা বেলা মাসিকে নিয়ে সাংসারিক পরিমণ্ডল। মদ্যপ বাবার প্রতি মেয়ের ক্ষোভ-রাগ যতটা স্বাভাবিক, মায়ের প্রতি তার বিরূপ মনোভাব ততটা হবে কেন? মায়ের নিঃসঙ্গতা, একাকীত্ব, মানসিক শূন্যতা মেয়ের উপলব্ধি করা উচিত। কৌশলী চিত্রনাট্যের একেবারে শেষ পর্বে এসে অবশ্য সেই ভ্রান্তি দুর করেছেন মৈনাক, সেটা কি নাটক জমিয়ে রাখার জন্য? বাণিজ্যিক ফর্মুলায় পড়বেন কেন তিনি? বাড়িতে একটি ঘর বাবার মৃত্যুর পর থেকে তালাবন্ধ রাখার রহস্য ফাঁস করে তিনি বাড়তি নাটক জমতে যাবেন কেন? মৈনাক আজকের প্রজন্মের মধ্যে যথেষ্ট বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ, সিনেমা সচেতন মানুষ। ধীরে ধীরে তিনি ‘মসালা’র মধ্যে ঢুকে পড়তে চাইছেন কি?
পুরো ছবি জুড়েই তাঁর সিনেমা বোধের উদাহরণ। আলো-আঁধারিতে “তোমার চোখের শীতলপাটি…” গানটির চিত্রায়ণ চোখে লেগে থাকে। সংলাপের মধ্যে আজকের ‘লবজ’ সুন্দর এসেছে। মা ও মেয়ে দু’জনেই তর্ক করেছে একইরকম ভাষায়। ছবির টেকনিক্যাল দিকগুলোও বেশ ঝকঝকে, টানটান, ক্ষিপ্র গতিময়। তবে মা ও মেয়ের পাশে প্রেমিক সুদীপকে একটু ‘বেচারি’ টাইপের লাগল। প্রায় কিছুই করার নেই সৌরভ দাসের। তবুও সৌরভ অধিকাংশ সময় নীরব থেকেও নিজের উপস্থিতি জানিয়ে দিয়েছেন। চিনির চরিত্রে মধুমিতা সরকার (Madhumita Sarkar) অনেক জায়গাতেই বেশি স্মার্ট হয়েছেন। কিন্তু মায়ের সঙ্গে আবেগের মুহূর্তগুলোতে তিনি বেশ নিচু স্তরের অভিনয় দিয়ে স্বাভাবিক।
অপরাজিতা আঢ্য (Aparajita Adhya) হয়েছেন মা মিষ্টি। তিনি তাঁর নিজস্ব ঢংয়ে রয়েছেন ক্যামেরার সামনে। ভাল লেগেছে প্রায় সানাইয়ের ‘পো’ হয়ে ওঠা বেলা মাসির চরিত্রে পিঙ্কি বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ছবির শুরুতে চিনি বলেছে “আমাদের গল্প রোমকম নয়, ফ্যামিলি ড্রামা নয়, রীতিমতো হরর স্টোরি….”। মৈনাক সেই সাংসারিক হররের সঙ্গে চিনি মিষ্টির জোগান দিয়ে বড়দিনের কেক বানানোর চেষ্টা করেছেন। তবে সেটা নাহুমের হলো, নাকি পুরনো দিনের বড়ুয়া বেকারির কেক? সেটা দর্শকরাই বুঝুন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.