বিদিশা চট্টোপাধ্যায়: নতুন ‘বব বিশ্বাস’ (Bob Biswas) কেমন হল জানার আগে বলে রাখা প্রয়োজন যে এই প্রতিবেদনে স্পয়লার থাকছে, নাহলে এই ছবি নিয়ে কথা বলা মুশকিল। শুক্রবার Zee5 প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে অভিষেক বচ্চন (Abhishek Bachchan) অভিনীত, দিয়া অন্নপূর্ণা ঘোষ (Diya Annapurna Ghosh) পরিচালিত ছবি ‘বব বিশ্বাস’। শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়(Saswata Chatterjee)অভিনীত বব বিশ্বাসের স্মৃতি নিয়েই এই ছবি দেখতে হবে। অতএব তুলনা আসবেই।
‘কাহানি’তে বব সম্পর্কে আমরা খুব বেশি জানতাম না। শুধু এটুকু জানা যায়, সে একজন কনট্র্যাক্ট কিলার এবং LIC-তে চাকরি করা আপাতভাবে খুব সাধারণ একজন মধ্যবিত্ত নাগরিক। তার অতীত-বর্তমান, তার জীবন, কিছুই জানা যায়নি। সেই শূন্যস্থান পূরণ করার উদ্দেশ্য নিয়েই নতুন ছবির সূত্রপাত।
ছবির প্রথমেই আমরা দেখি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে বব। পুরনো স্মৃতি বিশেষ কিছু নেই। তার এক সুন্দরী স্ত্রী রয়েছে, সন্তান রয়েছে ( স্ত্রীর আগের পক্ষের সন্তান ) এবং যে বাড়ি ববের বাসস্থান সেটা বেশ উচ্চবিত্ত বাঙালি বাড়ি। যদিও ছবিতে বলা হয় ‘ছোটাসা ঘর’। বেশ কিছু প্লট একসঙ্গে এগোয়। এক, যারা ববকে দিয়ে আবার কনট্র্যাক্ট কিলিংয়ের কাজ করাতে চায়। দুই, মাদকচক্র। আর তিন, ববের অন্তরমনের দ্বন্দ্ব। কেমন মানুষ ছিল সে? ভাল না মন্দ? সে কি সত্যিই মানুষ মারতে পারে? আদৌ কখনও খুন করেছে? এই প্রশ্নই নিরন্তর চলতে থাকে।
আপাতভাবে শান্ত বব তার নিজের জীবনের গ্রাফটা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না। কিন্তু ঘটনাচক্রে কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রথম খুন করে ফেলে। যেন মানুষ খুন করা তার সহজাত এবং দৈনন্দিন ব্যাপার। সকালে উঠে চায়ে চুমুক দেওয়ার মত। বাকি সব ভুলে গেলেও, তার মাসল মেমোরি আগের মতোই। এই দৃশ্যে অভিষেকের অভিনয় ভাল লাগে। দু’টো আলাদা সত্তা তৈরি করতে পেরেছেন। কিন্তু এই ছবির প্রধান সমস্যা হল, ববের মতই ছবির পরিচালক এবং গল্পকারও কনফিউজড এবং তাঁদের উদ্দেশ্য বেশ আবছা। বব বিশ্বাসকে তাঁরা হিরো হিসেবে দেখাতে চান না ভিলেন, তা স্পষ্ট নয়।
‘কাহানি’তে যে ববকে আমরা দেখেছিলাম, সেই চরিত্রের জটিলতা, স্তরগুলো এখানে আস্তে আস্তে পরিষ্কার করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এই কাজটাই পরিচালক করতে চেয়েছিলেন কিনা বোঝা গেল না। গল্প যতো এগোতে থাকে আমরা অপেক্ষা করে থাকি যে একটা সদুত্তর পাওয়া যাবেই! পাড়ায় খুন হচ্ছে, মানুষ গায়েব হয়ে যাচ্ছে, অথচ কারও কোনও হেলদোল নেই। ববের অন্তর্দ্বন্দ্বের গভীরে যাওয়া নেই। তার গার্হস্থ্য জীবনের খুঁটিনাটিও খুব দায়সারা ভাবে লেখা।
ববের স্ত্রী মেরির চরিত্রে চিত্রাঙ্গদা সিং (Chitrangada Singh) বেমানান। প্রথম স্বামী মারা যাওয়ার পর যতই অসহায় হোক না কেন, একজন অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন নারী কখনই ববের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাকে বিয়ে করবে না। ববের স্মৃতিভ্রংশের কারণ কী? এবং অতি সাধারণ মধ্যবিত্ত এই বব কনট্র্যাক্ট কিলার হয়ে উঠল কীভাবে? কোনও উত্তরই পাওয়া যায় না। কারণ পরিচালক এত গভীরভাবে ভাবতেই চাননি। তবে এই ছবিতে উল্লেখযোগ্য পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি। কালীদার চরিত্রে তার অভিনয় মনে রাখার মত। খুব কম জানা যায় কালীদা সম্পর্কে। তবু তিনি নজর কাড়েন। এই কালীদাকে নিয়ে আরেকটা চিত্রনাট্য লেখা যেতে পারে। কিন্তু সেটা ‘কাহানি’র পর এই ‘বব বিশ্বাস’-এর মতো হলে প্রয়োজন নেই।
সুজয় ঘোষ পরিচালিত ছবি ‘কাহানি’তে আট মিনিটের উপস্থিতিতে ‘বব’ যে বিশ্বাসযোগ্যতা এবং আলোড়ন তৈরি করতে পেরেছিল, দিয়া অন্নপূর্ণা ঘোষ পরিচালিত ‘বব বিশ্বাস’ সেটা পারেনি বলাই বাহুল্য। তবে এর দায় অভিষেক বচ্চনের নয়। পরিচালক, গল্পকার এবং চিত্রনাট্যকারের। বব বিশ্বাসকে নিয়ে প্রিকুয়েল তৈরি করতে গেলে আরও রিসার্চ এবং যত্ন প্রয়োজন। সুজয় ঘোষ নিজেকে ছাপিয়ে যেতে সক্ষম হলেন না। এবং শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের ‘বব’ মাসল মেমোরিতে আগের মতই থেকে গেল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.