চারুবাক: শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ বুড়ো হয়নি। যেমন হয়নি সত্যজিৎ রায়ের ফেলু মিত্তির। চিরযুবা তারা। তরুণ পরিচালক দেবালয় ভট্টাচার্য বলা যেতে পারে শরদিন্দুর কাঠামো এবং লেখার মেজাজ বজায় রেখেই সত্যান্বেষীর কাহিনীর এক ধরনের বিনির্মাণই ঘটিয়েছেন। আশি বছরের থুত্থুরে বুড়ো বানিয়েছেন সত্যান্বেষীকে। গৃহবন্দি হয়েও সত্যকে খুঁজে বেড়ানোয় তাঁর বিরাম বিশ্রাম নেই। বিশেষ করে তখন, যখন পুলিশ অফিসার অভিমন্যু খুনের আসামি।
সত্যান্বেষণে দাদুকে সাহায্য করে নাতি সাত্যকী (দুটি ভূমিকাতেই রয়েছেন আবীর) এবং সাধন সঙ্গিনী তূণা (সোহিনী)। ব্যোমকেশের নিজের ঘরের মধ্যেই অপরাধ ও অপরাধী! সুতরাং ব্যোমকেশের নাটক এবং রহস্য একেবারে জমে বরফ। আর সেই বরফ গলানোর কাজে দেবালয়ের বুদ্ধি মেশানো চিত্রনাট্য অনেকটাই সফল।
[ সম্পর্কের টানাপোড়েন কি সত্যিই দেখাতে পারল ‘গহীন হৃদয়’? ]
কালো গোলাপ ও লাল গোলাপের প্রতীকী উপস্থাপনা, কবিতার ব্যবহার গানকে ক্যাটালিস্টের মতো প্রয়োগ ছবির গতি এবং চরিত্রকে অন্যতর এক অভিঘাতে পৌঁছে দেয়। সংলাপের সরস প্রয়োগও ভাল। কিন্তু শরদিন্দুর সাহিত্য ছোঁয়া বড় কম। পারিবারিক গল্পের মধ্যে সামাজিক দুর্নীতিও যেমন জায়গা পেয়েছে, তেমনই সম্পর্কের জটিলতাও। অভিযুক্ত অভিমন্যুর স্ত্রী অনসূয়ার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের আভাসটাই ছবির টার্নিং পয়েন্ট। এটিকে নিয়ে বেশ ভালই খেলেছেন পরিচালক। কাট-টু-কাট দৃশ্য বদলের পদ্ধতিটাও রহস্যের জালকে বিস্তৃত করে। গৃহবন্দি ব্যোমকেশ তার নিজস্ব ক্ষমতায় সত্যকে খুঁজেছেন আর নাতি সাত্যকি খুঁজেছে ঘরের বাইরে। কাজের এই ব্যালেন্সটুকুও ভাল। আর গে পুলিশ অফিসারকে এনে সম্পর্ককে কি আধুনিক চেহারা দিলেন দেবালয়? সেটা না দিলেও রহস্যের কোনও খামতি হত না। অনেক দর্শকের কাছে খুনের রহস্য নিয়ে জটিল ধাঁধাঁ তৈরির ব্যাপারটি স্পষ্ট নাও হতে পারে।
[ কতটা বেপরোয়া হতে পারল ইশান-জাহ্নবীর ‘ধড়ক’? ]
আদিম রিপু, অস্ত্র চালানো ইত্যাদি ঘটনাস্থলের সঙ্গে খুনের যোগাযোগটা বেশ জটিল। এমনকী অরিন্দম শীলের চরিত্রটাও তো স্পষ্ট হল না। নির্মাণকে সমর্থন রেখেই বিনির্মাণ করতে হয়। সেখানেই রয়েছে গলদ। আভিনয়ে বৃদ্ধ আবির মেকআপের ভারে নুব্জ। সাত্যকী হিসেবে ভালই। তূণা এবং সত্যবতী হয়েছেন সোহিনী সরকার। বযসের কোনও ছাপ পড়েনি তাঁদের চেহারায়। ব্যোমকেশ বৃদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু তরতাজা যুবক রয়েছেন অজিত (রাহুল)। কেন? সোহিনী অবশ্য মন্দ অভিনয় করেননি। রাহুল উপস্থিতি শুধু করণীয় কিছু ছিলই না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.