বিশাখা পাল: ভূত চাইলে কীই না করতে পারে! অলৌকিক শক্তি বলে কথা। জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সবই ভূতের বাঁয়ে হাত কা খেল। আর শুটিং? সেটা না পারলেও ভূত যে তাতে ষোলোআনা সাহায্য করতে পারে, তা কিন্তু নিজের ছবিতে দেখিয়ে দিয়েছেন অনীক দত্ত। ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ ছবিতে তিনি যে সূত্রপাতটি করেছিলেন, তা আরও খানিকটা এগিয়ে নিয়ে গেলেন ‘ভবিষ্যতের ভূত’ ছবিতে। তবে আবারও সেই একই কথা ঘুরেফিরে আসছে। ‘ভবিষ্যতের ভূত’ কোনওভাবেই ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এর সিক্যুয়েল নয়। তবে সিনেমা দেখতে বসে ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এর কথা মনে পড়তে বাধ্য।
এই ছবিটিও সিনেমার শুটিংয়ের গল্প। তবে সাদামাটা গল্পের খাতে বয়নি এই ছবি। মনে হয়, পলিটিক্যাল স্যাটায়ার তৈরি করতে চেয়েছিলেন অনীক দত্ত। কিন্তু ঠিক কী যে তিনি বানালেন, তা অনেকের কাছেই পরিষ্কার নয়। গল্পের পরতে পরতে রাজনৈতিক ছোঁয়া। গেরুয়া, লাল, সবুজ কোনও দলেরই রংকে বাদ রাখেননি তিনি। সব দলের নেতিবাচক দিকগুলিকে নিয়ে খেলেছেন। সেই সঙ্গে মিডিয়াকেও ছেড়ে কথা বলেননি তিনি। এমনিতে তিনি খেলেছেন ভালই। কিন্তু…
এই ‘কিন্তু’-টাই কমিয়ে দিয়েছে পরিচালক অনীক দত্তের মার্কস। গল্পের মধ্যে সবথেকে বড় যে বিষয়টি চোখে লাগে, তা হল ফ্ল্যাশব্যাক আর ঘনঘন গল্পের পরিবর্তন। গল্প পরিচালক ফেঁদেছিলেন ভালই। একটা অ্যাপ। নাম তার ‘ট্যাঁকখোশ’। কাল্পনিক ভূতকে জনগণের সঙ্গে পরিচিত করাতে এই অ্যাপের আগমন। কিন্তু সেই অ্যাপকে হাতিয়ার করে সত্যিকারের ভূতেরা চলে আসে বাস্তব জগতে। কে নেই এই ভূতেদের মধ্যে? প্রবীণ মার্কসবাদী যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন ক্যাবারে ডান্সার, রবীন্দ্রসংগীত গায়িকা, সাংবাদিক, যাত্রাদলের নায়ক। সবাই থাকে ‘বাতিল ঘর’-এ। কারণ তারা সবাই ভূত হয়েছে তখনই যখন তারা মনুষ্যজগতে বাতিল। অ্যাপটিকে কাজে লাগাবার ফান্ডা তৈরি হয় ওই বাতিলঘরে বসেই। তবে তার আগে ঘরে কারা কারা থাকবে, তা নিয়েও একটা প্রতিযোগিতা হয়েছিল। বিচারক ছিলেন প্রবীণ ভূতেরা। ঠিক যেমন ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ ছবিতে হয়েছিল। এখানেই স্পেশাল অ্যাপিয়ারেন্স রয়েছে স্বস্তিকার। তিনি এখানে কদলীবালা নন, বাতাবিবালা। একটিমাত্র গান আর নাচ রয়েছে তাঁর। আর তাতেই মাত করেছেন তিনি।
[ বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে নওয়াজের ‘ফটোগ্রাফ’ মন কাড়ল? ]
‘ভবিষ্যতের ভূত’ সিনেমাটিকে মোট তিনটি খণ্ডে ভাগ করা হয়। প্রথমটি ‘বাতিল ঘর’-এর ভূতেদের ইতিহাস। মার্কসবাদী রাজনীতিবিদ, ক্যাবারে ডান্সার, সাংবাদিকরা কীভাবে ভূত হলেন, সেটি তুলে ধরেছেন পরিচালক। এরপর আসছে ‘ট্যাঁকখোশ’ প্রসঙ্গ। আর তৃতীয় ভাগ হল ভূতেদের আন্দোলন। এই পার্টটি সবচেয়ে আকর্ষণীয়। জমি দখলের চেষ্টা করছে ‘শাসকদল’। তথাকথিত প্রতিবাদীরা এসে সেখানে ‘জমি দেব না’ গোছের প্রতিবাদ শুরু করেছে। এদেরই সাহায্য করতে তৎপর ভূতেরা। এর জন্য ফেলুদার সিধুজ্যাঠার মতো একটি চরিত্র তাদের সাপ্লাই দেয় সাতটি ভূত। এলাকার এক দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতাকে (এই চরিত্রে নিজেকে আরও একবার প্রমাণ করেছেন কৌশিক সেন) শায়েস্তা করতে ময়দানে নামে ভূতেরা।
গল্পের এই তিনটি খণ্ড কিন্তু আলাদা নয়। একসঙ্গে জোড়া। একটার সঙ্গে একটা সম্পর্কিত। তবে এই লিংকটা খুঁজতে গেলে, বলা ভাল গোটা ছবিটা বুঝতে গেলে আপনাকে কতটা যে মাথা খাটাতে হবে, তা জানা নেই। বিশেষত ছবির শেষে যখন দেখবেন গোটা সিনেমাটাই যখন একটা সিনেমা আর সেটি করতে সাহায্য করছে ভূতেরা, তখন কী মনে করবেন, সেটা আপনার উপরেই না হয় ছেড়ে দেওয়া যাক। তবে আবারও মনে করিয়ে দিই, ছবি দেখতে বসে একটা কথা যদি মাথায় রাখবেন, এর সঙ্গে কিন্তু ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এর কোনও যোগাযোগ নেই। তাই কি পরিচালক লোগোতেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, ‘তবে সিক্যুয়েল নয়’ লিখে?
[ গল্পেই মাত করল ‘বাচ্চা শ্বশুর’? ছবি দেখে কী বলছে দর্শকরা? ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.