সুলয়া সিংহ: গুন্ডে, সুলতান, টাইগার জিন্দা হ্যায়-র মতো বক্স অফিসে ঝড় তোলা সমস্ত ছবি রয়েছে আলি আব্বাস জাফরের ঝুলিতে। তাই আরও একবার সলমন খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে বড়পর্দায় ভাল কিছু তুলে ধরবেন, এমন আশাতেই বুক বেঁধেছিলেন দর্শকরা। আর ইদে তিনি যে ‘ইদি’ দিলেন তা পেয়ে খুশিই হবেন সলমন ভক্তরা। সাম্প্রতিক অতীতে বজরঙ্গি ভাইজান ও টাইগার জিন্দা হ্যায়-এর পর এটাই সলমনের কামব্যাক ছবি বলা যেতে পারে। টিউবলাইট এবং রেস থ্রি’র হতাশা থেকে দাবাং খানকে বের করে নিয়ে এলেন আলি আব্বাস।
দেশভাগের কাহিনি, স্বজন হারানোর যন্ত্রণা, হিন্দু-মুসলিম ভাই-ভাই, ছবিতে বরাবরই এই বিষয়গুলি ‘খায়’ দর্শকরা। আর ‘ভারত’কে আগাগোড়া সেই আবেগেই মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নাচ-গান-রঙিন যৌবন, হাসি-ঠাট্টার মাঝেও বারবার ঘুরেফিরে এসেছে স্টেশন মাস্টার বাবাকে সলমনের হারিয়ে ফেলার কষ্ট। আদর্শ ছেলে, আদর্শ দাদা, আদর্শ বন্ধু, সর্বোপরি আদর্শ মানুষ ‘ভারত’। চরিত্রের নাম যখন দেশের নামে, তখন এই সব দায়িত্বই চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে সলমনের কাঁধে। চিত্রনাট্যও লেখা হয়েছে সেভাবেই। গল্পের পরতে পরতে যেখানে একজন মানুষকে ছাপিয়ে ‘ভারত’ হয়ে উঠেছে গোটা দেশের প্রতিচ্ছবি। তাই তো সে নিজের নামের সঙ্গে কোনও পদবিও ব্যবহার করে না। এক কথায়, এছবিতেও ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ সলমন খান। ঠিক যেভাবে তাঁকে দেখতে অভ্যস্ত তাঁর ভক্তরা। তবে গল্পের প্রবাহে বাস্তবতার ছোঁয়া লাগিয়ে বিষয়টিকে মানানসই করে তোলার অনেকটাই চেষ্টা করেছেন পরিচালক।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় লাহোর থেকে ট্রেনে চেপে ভারতে চলে আসতে হয় ছোট্ট ভারত ও তার পরিবারকে। মা, এক ভাই ও এক বোনকে সঙ্গে নিয়ে এলেও বাবা ও আরেক বোনকে ভিড়ে মিশে যেতে দেখেছিল ‘ভারত’। ট্রেন ছাড়ার আগে বাবাকে কথা দিয়েছিল পরিবারের খেয়াল রাখবে। আর ৭০টা বসন্ত কাটিয়েও বাবাকে দেওয়া কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে সে। এমনকী, পরিবারের দেখভালে যাতে এটুকু গাফিলতি না হয়, তার জন্য ভালবেসেও বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিতে পিছুপা হয়নি। এ ছবিতে ভারত এমন একটি চরিত্র যে জীবনে কখনও কোনও ভুল কাজ করেনি। করতে গেলেও মুহূর্তে তা শুধরে নিয়েছে। যাই হোক, ভারতে এসেই সংসার চালাতে অর্থ উপার্জনে মন দিতে হয় খুদে ‘ভারত’কে। কখনও সার্কাসের মঞ্চে তো তেলের খনিতে, আবার কখনও মালবাহী জাহাজে, সর্বত্রই নিজের কীর্তির বিচ্ছুরণ ঘটায় ‘ভারত’।
কর্মজীবনের প্রতিক্ষেত্রে আপদে-বিপদে সহকর্মীদের উদ্ধারও করে সে। তার মাঝেই ক্যাটরিনা ওরফে কুমুদের সঙ্গে প্রেম। যাকে ভালবেসে ম্যাডাম-স্যার বলেই ডাকে ভারত। কিন্তু পরিবারের কথা ভেবে বিয়েটা করা হয় না। এরই মধ্যে সময় অনেকখানি বয়ে গিয়েছে। কপিল দেবের টিম ইন্ডিয়া প্রথমবার বিশ্বকাপ জিতে গিয়েছে। পাক ধরেছে ভারতের চুল, গোঁফ-দাড়িতেও। কিন্তু লাহোরে হারিয়ে যাওয়া বাবা ও বোনকে এখনও ভুলতে পারেনি সে। শেষমেশ, তাদের কি খুঁজে পেল ভারত? ম্যাডাম-স্যারের সঙ্গে কি সাত পাকে বাঁধা পড়ল এই আদর্শ পুরুষ? সেটা নাহয় সিনেমা হলে গিয়েই দেখবেন। তবে এটুকু বলা যেতে পারে, সেই ক্লাইম্যাক্সেও চমক দিয়েছেন পরিচালক। ‘বজরঙ্গি ভাইজান’-এর মতো ভারত-পাকিস্তান দুই দেশের মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তোলার সূক্ষ্ম চেষ্টা হয়েছে এ ছবিতেও।
এবার আসা যাক ছবির চরিত্রগুলিতে। সলমনের বাবার ভূমিকায় জ্যাকি শ্রফ দারুণ ফিট করেছেন। ক্যাটরিনা আরও একবার অভিনয়ের চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ঠিক মন ভরাতে পারলেন না। আর সলমন? পরিচালক তাঁকে দিয়ে যা যা করাতে চেয়েছেন, সব পেয়েছেন। আবেগ প্রবণ ভাই যখন বোনের জন্য ডুকরে কেঁদে ওঠে বা বছরের সত্তরের বৃদ্ধ যখন সঙ্গিনীকে আই লাভ ইউ বলে, তখন হলে হাতহালির ফোয়ারা। বয়সের সঙ্গে তাঁর মেক-আপও ম্যাচ করে গিয়েছে ভালই। তবে সত্তর বছরেও সাদা হয়ে যাওয়া দাড়ি-গোঁফ নিয়ে অ্যাকশনের দৃশ্যটা একটু বাড়াবাড়ি। কিন্তু মনে মনে ভেবে নিন না, ওঁ সলমন, দেখুন সমস্যা হবে না। তবে একজনের প্রশংসা না করলেই নয়। তিনি ভারতের বন্ধু সুনীল গ্রোভার ওরফে বিলাইতি। হাসি-ঠাট্টা-আবেগ-বন্ধুতায় দুর্দান্ত সাপোর্টিং চরিত্র হয়ে উঠেছেন তিনি। তবে জিন্দার মতো গান ও তেলের খনির কিছু দৃশ্য ছেঁটে ছবিটাকে আরও টাইট করা যেতেই পারত।
সবশেষে বলতে হয়, আপনি যদি ভাইজানের ভক্ত হন, তবে যুক্তি-তর্ক ভুলে ২ ঘণ্টা ৩৫ মিনিটের লম্বা ছবি হেসে আর চোখের কোণে জল এনে উপভোগ করবেন। যে ছবিতে শাহরুখ থেকে অমিতাভ বচ্চনের ছোঁয়া রয়েছে, যেখানে ভারতীয় দলের বিশ্বজয় থেকে শচীনের ব্যাটিং রয়েছে, সেখানে ছবি ফ্লপ হওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। সুতরাং আরও একবার যে ভারত রূপী সলমন বক্স অফিসে রেকর্ড গড়তে চলেছেন, তার আঁচ প্রথমদিনই পাওয়া গেল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.