সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সোনার কাঠি, রূপোর কাঠি, জিয়ন কাঠি এক/আওয়াজ পেলেই উঠবে জেঁগে খাঁচার ভিতর জ্যাক… মন্ত্রবলেই খাঁচার ভিতর উঠে আসে ভয়ঙ্কর ‘ব্ল্যাক পান্থার’। দেখে উপস্থিত দর্শকরা ভয় পেলেও অসাধারণ ‘ম্যাজিক’-এ মন্ত্রমুগ্ধও হয়ে পড়েন। রাজা চন্দ (Raja chanda) পরিচালিত ‘ম্যাজিক’ এইভাবেই ছবির শুরুতে দর্শকদের আকৃষ্ট করে। প্রশ্নটা এখানেই। ম্যাজিক কী? শুধুমাত্র হাতের ভেলকি আর দৃষ্টিভ্রম? অনেকেই উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বললেও পরিচালক এখানেই ছবির আসল রসদ লুকিয়ে রেখেছেন।
‘আয়রে ভোলা খেয়াল খোলা/ স্বপনদোলা নাচিয়ে আয়/ আয়রে পাগল আবোল-তাবোল/ মত্ত মাদল বাজিয়ে আয়।’ এই ছবির অন্যতম অঙ্গ কবি সুকুমার রায়ের ‘আবোল-তাবোল’। যে ‘আবোল-তাবোল’ ছোটবেলায় মজার ছড়া হিসাবে পরিচিত হলেও জীবনে চলার পথে তা যে সমানভাবে প্রযোজ্য, নিঁখুতভাবে বুঝিয়েছেন পরিচালক।
সিনেমার গল্প শুরু ইন্দ্রজিৎ ও কৃতী – দুই চরিত্রকে নিয়ে। কৃতী ওরফে ঐন্দ্রিলা একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। তাঁর অফিসে জুনিয়র ডিজাইনার হিসাবে কাজে যোগ দেন ইন্দ্রজিৎ ওরফে অঙ্কুশ। যে ছেলেটি শুধু ভাল ডিজাইনার নয়, একজন ভাল ম্যাজিশিয়ানও। যে সকলের মুখে হাসি ফোটায়। তার চারপাশে সবসময় আনন্দের পরিবেশ তৈরি করে রাখে। তাঁর প্রেমে পড়েন সিনিয়র কৃতী। অফুরন্ত ভালবাসা, মিষ্টি প্রেম, ভালবাসাকে আগলে রাখা নিয়ে কিছুটা বোরিং হলেও ভালই চলছিল ছবির গল্প।
তারপরেই আসে নতুন চমক। ইন্দ্রজিতের আবদারে যখন কৃতী আসে তাঁর বাড়িতে। ম্যাজিকের নামে তাঁর সামনে চলে আসে আলমারিতে থাকা দুটি দেহের কঙ্কাল। কাদের কঙ্কাল সেটা? কী করে সেখানে এল? কেনই বা ইন্দ্রজিৎ তাঁর বাড়িতে কঙ্কাল রেখেছেন? তাহলে কি সে মানসিক রোগে আক্রান্ত? শুধু কৃতীর মনে নয়, দর্শকদের মনেও উঠে আসে এই রকম একাধিক প্রশ্ন। সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারে ধীরে ধীরে খুলতে থাকে ইন্দ্রজিতের জীবনের নানা জট। সামনে আসে সদা হাস্যময় বাবা-মায়ের আত্মহত্যার গল্পও। কেন আত্মহত্যা? কী এমন হয়েছিল যা পাল্টে দিয়েছে ইন্দ্রজিতের জীবন? কার উপর প্রতিশোধ নিতে চান ইন্দ্রজিৎ? না, এই সব প্রশ্নের উত্তর এখানে নয়, সেটা জানতে হলে আপনাকে দেখতে হবে ‘ম্যাজিক’।
ছবিতে সাবলীল অভিনয় করেছেন অঙ্কুশ হাজরা (Ankush Hazra) । তবে বেশ কিছু জায়গায় ঐন্দ্রিলা সেনের (Oindrila Sen) অভিনয় অতিমাত্রিক। অল্প সময়ের জন্য হলেও বাবার চরিত্রে দেবশংকর হালদার, অসুস্থ মায়ের চরিত্রে বিদিপ্তা চক্রবর্তী যথাযথ। মনোরোগ চিকিৎসকের ভূমিকায় পায়েল সরকারকে (Payel Sarkar) তেমন ভাবে ব্যবহার করেননি পরিচালক রাজা চন্দ।
বেশ কিছু জায়গায় গ্রাফিক্সের কাজ ভাল। ক্যামেরার কাজও ঝকঝকে। ছবিতে মোট তিনটি গান রয়েছে। সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন ডাব্বু ও গান লিখেছেন রাজীব দত্ত। গেয়েছেন শান্তনু দে, অন্তরা মিত্র, শান, অন্বেষা ও অনুপম রায় (Anupam Roy)। সব কটা মনে না ধরলেও ‘মন আনমনে’ গানটির দৃশ্যায়ণ, সংলাপ, কোরিওগ্রাফি ভাল লাগে।
সবশেষে যেটা বলার, আমাদের জীবনে প্রত্যেক মুহূর্ত নানা ম্যাজিকের সাক্ষী থাকে। হাতের কারসাজি নয়, এই ম্যাজিক ভালবাসার ম্যাজিক, দুঃখ ভুলে আনন্দে থাকার ম্যাজিক, ঘৃণা ভুলে ক্ষমা করে দেওয়ার ম্যাজিক, নতুন ভাবে বেঁচে থাকা অনুভূতির ম্যাজিক পরিচালক রাজা চন্দ যেভাবে বলতে চেয়েছেন, তা গল্পের বুননে সত্যিই সুন্দর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.