আকাশ মিশ্র: একদিন একটা দুর্দান্ত ম্যাজিক হবে। আর সব কিছু বদলে যাবে। ঠিক যেমনটি মন চেয়েছে, চারিদিক ঠিক তেমনটিই হয়ে যাবে। কিন্তু কবে? আশা নিয়েই তো বেঁচে থাকা। তা বিত্তশালী হোক, কিংবা মধ্যবিত্ত অথবা সেই গরীব মানুষটি, যে চব্বিশটা ঘণ্টা খেটে চলেছে দু’পয়সা রোজগারের জন্য। সেও এরকমই এক ম্যাজিক চায় তাঁর জীবনে। সেও স্বপ্ন দেখে, সব দুঃখ দূর হয়ে, সুখের ভেলাতেই বয়ে যাবে তাঁর জীবন। কিন্তু সেটা কি সব সময় সম্ভব? পরিচালক রাজদীপ ঘোষ ঠিক এই ফিলোজফিকেই ধরেছেন তাঁর ছবি ‘কলকাতার হ্যারি’তে (Kolkatar Harry Movie)। আর এই ম্যাজিক ও স্বপ্নের গল্প বলতেই গিয়ে একে একে ঢুকে এসেছে শিশুমন, স্কুল, শিশুপাচারের মতো বিষয়। ঢুকে এসেছে অসহায়তার কথাও।
ছবির গল্পটা একটু ছুঁয়ে নেওয়া যাক। একটি স্কুল বাস চালায় হরি ওরফে সোহম চক্রবর্তী, যাকে বাচ্চারা ক্যাপ্টেন বলে ডাকে। হরি, হ্যারি পটারের ফ্যান। দারুণ ম্যাজিক দেখায়। জীবনে ম্যাজিক হওয়ার গল্প বলে। যে কোনও পরিস্থিতিতে কীভাবে ভাল থাকা যায়, সেই মন্তর হরি ধার করে জে কে রাউলিংয়ের হ্যারির থেকেই। ঠিক যেমন উইগরডম লেভিওসা! হ্যারি পটারের এই মন্ত্রেই তো বসকে কাবু করে ফেলে ছবির মোহর সেন ওরফে প্রিয়াঙ্কা সরকার। যে মন্ত্রে বদলে যায় মোহরের কঠোর মায়ের মন। আর তারপরই হরির প্রেমে হাবুডুবু মোহরের মন। তবে এই মন্ত্র কিন্তু বদলাতে পারে না হরির পরিস্থিতি। ঠিক এরকমই ক্রাইসিস ও তাঁর সমাধানকে নিয়ে গল্প এগিয়ে চলে। তবে পরিচালক চমক দেন গল্পের ভিতরে আরেক গল্প বলে। যে গল্পের মূল কাণ্ডারী প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়! যা কিনা ছবির আসল ট্যুইস্ট।
এতো গেল গল্প। কেমন হল ‘কলকাতার হ্যারি’?
গল্প হিসেবে দারুণ এক বিষয়কে বেছেছেন পরিচালক রাজদীপ। তবে এই গল্প বলতে গিয়েই গণ্ডগোল করে ফেললেন তিনি। কারণ, জীবন ও ম্যাজিককে এক ফ্রেমে দেখাতে গিয়ে একাধিক সমস্যা ও বিষয়কে পর পর সাজিয়ে দিলেন। যা কিনা একসুতোয় বাঁধা পড়ল না। বরং, কীরকম একটা জাম্প কাটের রূপ নেয়। আসলে, এই ছবির চিত্রনাট্যের প্রতি আরেকটু যত্নবান হওয়া উচিত ছিল।
অভিনয়ের দিক থেকে সোহম ও প্রিয়াঙ্কা যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন। এক্ষেত্রে সোহম অবশ্য একটু বেশিই নম্বর পাবেন। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের স্ক্রিন টাইম খুব একটা বেশি নয়। তবে তিনি ছবিতে বেশ ভালই। শিশুশিল্পীরাও যথেষ্ট ভাল অভিনয় করেছে। বহুদিন পর স্ক্রিনে লাবণী সরকারকে দেখেও ভাল লাগবে। এই ছবির মূল সমস্যাই হল, চিত্রনাট্য। একাধিক বিষয়কে না দেখিয়ে এই ছবি অনায়েসে শুধুমাত্র খুশি থাকার পাসওয়ার্ড হয়ে উঠতে পারত। আর ঠিক এখানেই দুর্বল হয়ে গেল ‘কলকাতার হ্যারি’। ভিএফএক্সের কাজ বেশ দুর্বল। যে ছবি রূপকথাকে প্রেক্ষাপট করে তৈরি হয়, সেখানে ভাল ভিএফএক্স খুবই প্রয়োজন ছিল। শেষমেশ বলা যায়, ‘কলকাতার হ্যারি’ ছবিটির সম্ভাবনা ছিল ভাল ছবি হয়ে ওঠার। তবে ঢিলেঢালা চিত্রনাট্যের কারণে এই ছবি মাঝারি মানেরই হয়ে দাঁড়াল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.