নির্মল ধর: পরিচালক হর্ষবর্ধন কুলকার্নি পুণে ফিল্ম স্কুলের ছাত্র হলেও, বলিউডের জল হাওয়ায় বেড়ে হয়ে ওঠার কারণে তাঁর ফিল্মি ভাবনায় বলিউডের কর্মাসিয়াল ছবির ছাপ বেশি। সিনেমা এবং সাধারণ সামাজিক সচেতনতা তেমন গভীর নয় হর্ষবর্ধনের। অন্তত “বাধাই দো” (Badhaai Do) ছবিতে সমকামিতাকে যেভাবে হর্ষবর্ধন দেখিয়েছেন, তা মানুষের মনকে কতটা ছুঁতে পারবে সেটাই প্রশ্ন। সমকাম বা সমকামি মানুষদের নিয়ে এখনও সাধারণ মানুষের মধ্যে ছুঁতমার্গ রয়েছে। পরিচালক হর্ষবর্ধন তাঁর এই ছবিতে সমকামকে নিয়ে সমাজের ভাবধারাকে গুরুত্ব না দিয়ে, কমেডির কায়দায় গল্প বলে, রসিকতার পর্যায় নিয়ে গেলেন। আর সেখানেই ছবির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।
ছবির দুই প্রধান চরিত্র সমকামী, পুলিশ অফিসার শার্দুল ওরফে রাজকুমার সমকামি। অন্য়দিকে স্কুলের পিটি টিচার সুমন ওরফে ভূমি পেডনেকারও রিমঝিম নামের এক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বান্ধবীর সঙ্গে সমপ্রেমের সম্পর্কে জড়িত। অথচ দুজনের বাড়ির লোকেরা ওদের বিয়ে দিতে চায়। ঘটনাক্রমে শার্দুল এবং সুমনের বন্ধুত্ব হয়। পরিবারের এই বিয়ের চাপ থেকে বাঁচতে দুজনেই সিদ্ধান্ত নেয় নিজেদের যৌন পছন্দ বা রুচিকে লুকিয়ে বিয়ে করার। এতে সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না। কিন্তু তেমনটা হল না। বিয়ে হতেই, দুই পরিবারের লোকজন সন্তান চায়! ব্যস, ঝামেলা শুরু! বিয়ের একবছর পরেও সন্তান না হওয়ায় শুরু হয়ে যায় দুজনের নানা মেডিক্যাল পরীক্ষা। এসব ঘটানো হয় নিছক হাসি মজার মোড়কে। বাড়ির লোকের কাছে যখন শার্দুল ও সুমনের সেক্সুয়াল পছন্দের ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়, তখন থেকে চিত্রনাট্য কিঞ্চিৎ গম্ভীর হওয়ার চেষ্টা করে বটে, কিন্তু চিত্রায়নে সেটার ছাপ বেশ কম। সেখানেও শুধু কমেডি। শার্দুল ও সুমন দুজনেই দত্তক নেওয়ার কথা ভাবে, কিন্তু স্বামী – স্ত্রীর আসল যৌনভাবনার পরিচয় জানলে এই দত্তক আইনত হবে না। সুতরাং, সমস্যার সমাধান শার্দুল ও সুমনের যৌন পছন্দকে গোপন করে কাজ হাসিল করা। সেটাই হয়। শেষমেশ, পরিবার মেনে নেয় দুই সমকামির বিয়ে এবং তাঁদের পছন্দ অপছন্দ!
পরিচালক সমকাম নিয়ে এমন মজা করে ছবি বানালেন কেন? সেটা একেবারে স্পষ্ট নয়। ছবি দেখে হর্ষবর্ধনকে তাই কোনও ভাবেই “বাধাই” দেওয়া যাবে না। তবে বাহবা দিতে হবে রাজকুমার (Rajkumar Rao) ও ভূমিকে (Bhumi Pednekar)। তাঁদের অভিনয়ই প্রাপ্তি। রিমঝিমের চরিত্রে চারু দারাং তেমন স্বাভাবিক নন, বরং রাজকুমারের সঙ্গীর চরিত্রে নরেশ পান্ডে অনেকটাই সাবলীল। এই ছবির তিনজন সুরকার – রয়েছে তিনটি গানও। কিন্তু কোনওটাই মনে থাকে না। ছবির বিষয় ভাবনায় নতুনত্ব ছিল, কিন্তু “বাধাই” পাওয়ার মত ছবি হল না ‘বাধাই দো’!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.