নির্মল ধর: ভাবা গিয়েছিল টালিগঞ্জ বুঝি আর কপি পেস্ট কম্মোতে হাত পোড়াবে না, অনেক তো হলো! কিন্তু ‘বাজি’ দেখে বোঝা গেল না। অন্তত সুপার স্টার জিৎ-এর (Jeet) অ্য়াটিটিউড দেখে তা মালুম হল না। ২০১৬ সালে পরিচালক সুকুমারের তেলুগু ছবি “নান্নাকু প্রেমাথো”র বাংলা সংস্করণ এই ‘বাজি’ জিতের প্রযোজনায় তৈরি। স্বয়ং জিৎ জুনিয়র এন টি রামা রাও-এর জায়গাটি নিয়ে ছবির প্রায় প্রতিটি ফ্রেমে নিজেকে প্রমাণের আপ্রাণ চেষ্টা করে গেলেন। টুকলি বাজিতে যে টলিউড এখনও বেশ পটু, সেটা বোঝাতে অংশুমান প্রত্যুষের ‘পরিচালক’ হওয়ারও দরকার ছিল না। কপি পেস্টের জন্য আবার পরিচালক লাগে নাকি! এই ছবির সম্পূর্ণ পটভূমি বিলেতের লন্ডন শহর। জিৎ হয়তো ভেবেছেন বাংলার বুভুক্ষু দর্শককে লন্ডন দেখিয়ে বাজিমাত করবেন। কিন্তু গল্পের মধ্যে বাঙালি যে একটা নিটোল গল্প খোঁজে, সেটা এখনও তিনি যে কেন বুঝছেন না! শুধু ভুতুড়ে মার্কা মারপিট আর ঘটনায় জিলিপির প্যাঁচ দিয়ে দর্শককে ক্লান্তি ছাড়া আর নতুন কিছু উপহার দিতে পারল না এই ‘বাজি’ (Baazi Review)!
বাবা রুদ্রপ্রতাপকে (অভিষেক) ঠকিয়ে প্রতারক ব্যবসায়ী কে কে বর্ধন (সব্যসাচী) এখন গ্রেট ব্রিটেনের এক ব্যবসায়ী। আর রুদ্রপ্রতাপ রোগে বিছানায়। ডাক্তার জানিয়েছে আয়ু মাত্র এক মাস। তাঁর দুই ছেলে – বড় দেবদূত উকিল, ছোট জিৎ (আদিত্য)। পেশা অজানা, তবে ইমোশন, প্রেম এবং মারপিট করতে রীতিমতো পেশাদারী দক্ষতা রয়েছে। নিজের রাগ কমাতে যে কোনও জায়গায় প্রায় বিনা কারণেই যাকে তাকে মেরে বৃন্দাবন ( নাকি লন্ডন বা আয়ারল্যান্ড) দেখিয়ে দিতে পারে। শুরু হয় ‘অপারেশন জিরো’ নামের এক অদ্ভুত কাণ্ড! রুদ্রপ্রতাপের মেয়ে কাইরার (মিমি) সঙ্গে প্রথমেই প্রেমের অভিনয় দিয়ে ‘আদি’র নায়কোচিত কায়দা, পড়ে ব্যাংক অ্য়াকাউন্ট হ্যাকিং নিয়ে বেশ এক কম্পিউটার খেল, যার না বোঝা গেল মাথা, কিংবা ল্যাজা! মাঝে মাঝে খোদ লন্ডনেই দেখা মিলল হুমদো চেহারার ফাইটার, যাদের সঙ্গে প্রতি রিলে ‘আদি’র সঙ্গে ঢিসুম ঢিসুম কারণ অকারণে দেখা গেল। অবশ্য কাইরার সঙ্গে নাচ গানের মশলা না মেশালে নায়কের প্রেম বোঝানো যাবে না যে, তাই সেরকম গোটা তিনেক গান ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে মূল তেলুগু ছবির মতোই। ছবির গপ্পো কীভাবে শেষ হবে, সে তো দর্শক জানেই, কিন্তু সেখানে পৌঁছতে যে সাপ- লুডো খেলার কায়দায় দর্শককে হয়রানি হতে হয়, সেটা খানিকটা ঘুমপাড়ানি ওষুধের বড়ির মতো।
জিত গাঙ্গুলির সুরে তিনটি গান শুনতে খারাপ লাগে না। অভিনয় নিয়ে বলতে গেলে সব্যসাচী চক্রবর্তীর কথাই আগে বলতে হয়। তিনি ভিলেন, কিন্তু অভিনয় করেছেন খুবই নিচু লয়ে, তাই ভাল লাগে। মিমি সুন্দরী নায়িকা কিন্তু ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ তেমন পাননি। বিশ্বনাথ বসু, প্রদীপ ধর শুধু চ্যালা হয়েই রইলেন। গোটা পর্দা কেড়ে নিয়েছেন একা জিৎ। হ্যাঁ, তাঁর স্ক্রিন উপস্থিতি নিশ্চয়ই দামী কিন্তু অভিনয়ে এবার তিনি কমেডির ছোঁয়া কম রাখায় তাঁর ফ্যান দল খুশি হবেন কি? তবে অ্যাকশনে হাততালি পড়বেই। ‘বাজি’ তাই এই পুজোতে কপিবাজি করেও ‘বাজিমাত’ করলেও করতে পারে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.