আকাশ মিশ্র: ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে চলেছে রিঙ্কু। রাজপথ থেকে গলি, পাঁচিল টপকে অন্য বাড়ির বারান্দায়, কিছুতেই ধরা পড়া যাবে না। বাড়ি থেকে পালাতেই হবে। পালাতেই হবে প্রেমিকের সঙ্গে। এই নিয়ে ২১ বার। কিন্তু ভাগ্য়ের পরিহাস। আগের বারের মতো এবারও শেষ রক্ষা হল না রিঙ্কুর (Sara Ali Khan)। ধরা পড়ল, কাকাদের হাতে! ঠাকুমার মারধর, তবুও মুখ ফুটে বের হল না প্রেমিকের নাম! রিঙ্কুর জেদ দেখে, সামনে যাকে পাওয়া যাবে তাঁর সঙ্গেই বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল রিঙ্কুর পরিবার। আর সেই ফাঁদে পড়ল হবু ডাক্তার ভি ভেঙ্কটেশ বিশ্বনাথ আইয়ার ওরফে বিশু (Dhanush)! মুখে লাফিং গ্য়াসের নল পরিয়ে জোর করে রিঙ্কুর সঙ্গে বিশুর বিয়ে। কিন্তু রিঙ্কু ভালবাসে এক জাদুকরকে। আর বিশুরও রয়েছে প্রেমিকা! এবার? ডিজনি হটস্টারে সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘অতরঙ্গি রে’ ঠিক এভাবেই শুরু করলেন পরিচালক আনন্দ এল রাই। কমেডির ধাঁচেই পরিচালক এগিয়ে নিয়ে চললেন এক ত্রিকোণ প্রেমের গল্প। মাঝখানে সারা আর দু’দিকে ধনুষ ও অক্ষয় কুমার। অন্য়ান্য বলিউডি ত্রিকোণ প্রেমের গল্প ঠিক যেরকমটি হয়, ‘অতরঙ্গি রে’ ছবির প্রথমভাগ ঠিক তেমনই। কিন্তু পরিচালক আনন্দ এল রাই আসল বাজিটা যে খেলবেন দ্বিতীয়ভাগে, তা কিন্তু একটুও টের পেতে দেননি। চিত্রনাট্য়ে যে টুইস্ট এনেছেন ছবির চিত্রনাট্যকার হিমাংশু শর্মা তা এককথায় অসাধারণ। বলা ভাল এই টুইস্টই ছবির প্রাণভোমরা! না, এই রহস্য ফাঁস করা উচিত হবে না।
আনন্দ এল রাই তাঁর প্রতিটি ছবিতেই দুই আলাদা মেরুর চরিত্রকে সামনে নিয়ে এসে ছবির গল্প সাজান। তা ‘তন্নু ওয়েডস মন্নু’ হোক কিংবা ‘জিরো’, ‘রাঞ্ঝনা’। সব ছবিতেই দুই চরিত্রের মধ্যে বড্ড দুরত্ব রেখে, ছবির শেষে সরলরেখায় মিলিয়ে দেন পরিচালক আনন্দ। তবে ‘অতরঙ্গি রে’ ক্ষেত্রে আনন্দ ফমূর্লাটা একটু বদলে দিলেন। একটি প্রেমের গল্পের সঙ্গে এমন এক বিষয়কে মিশিয়ে দিলেন যা কিনা ছবির সবচেয়ে বড় চমক। না, এই চমক নিয়েও কিচ্ছুটি বলা যাবে না, চমক জানলেই, ছবির আসল সূত্রটাই ফাঁস করে দেওয়া হবে।
তবে এই ছবির গল্পই যে একমাত্র স্ট্রং পয়েন্ট, তা কিন্তু নয়। এই ছবি একেবারেই অভিনয় নির্ভর ছবি। এ ব্য়াপারে এগিয়ে দক্ষিণী অভিনেতা ধনুষ! শুধুমাত্র ধনুষের অসাধারণ, সহজ, সরল অভিনয়ের জন্য়ই বার বার দেখা যেতে পারে এই ছবি। তাঁর সংলাপ বলার কায়দা এবং বিশেষ করে অনেক দৃশ্যে শুধুই অভিব্যক্তি মুগ্ধ করে। রিঙ্কু চরিত্রে সারা আলি খান নিজের একশো শতাংশ দিয়েছেন। বিশেষ করে ছবির প্রথমভাগে সারার সাবালীল অভিনয় নজর কাড়বে। তবে দ্বিতীয়ভাগে গিয়ে কিছু দৃশ্যে সারা অতিনাটকীয় হয়ে যায়। অক্ষয় কুমার খুব একটা সুযোগ পাননি অভিনয় দেখানোর। কিন্তু অক্ষয়ের চরিত্রটা এই ছবির মেরুদন্ড বলা যেতে পারে। তবে ছবির দৈর্ঘ্য যদি একটু কম হত, তাহলে গল্পের টানটান ভাবটা আরও স্পষ্ট হত।
সব মিলিয়ে ‘অতরঙ্গি রে’ ছবির বিষয় নির্বাচন এই ছবিকে আলাদা মাইলেজ দেয়। সঙ্গে ধনুষের অভিনয় উপরি পাওনা। রহমানের সুর গোটা ছবি জুড়ে মুড ধরে রাখে। বছর শেষে আনন্দ এল রাইয়ের অতরঙ্গী রে এক বড় চমক, তা বলাই যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.