Advertisement
Advertisement
Film Review

চিত্রনাট্যই তুরুপের তাস, মগজকে নাড়া দেবে অতনুর ‘আরো এক পৃথিবী’, পড়ুন রিভিউ

নজর কেড়েছেন বাংলাদেশের অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিন।

Atanu Ghosh New movie Aaro ek prithibi is a must watch film| Sangbad Pratidin
Published by: Akash Misra
  • Posted:February 3, 2023 2:22 pm
  • Updated:February 8, 2023 5:25 pm  

চারুবাক: অতনুর শেষ তিনটি ছবি “রবিবার”,”ময়ূরাক্ষী” এবং “বিনিসুতোয়” কে ট্রিলজি ধরলে, তাঁর সিনেমা ভাবনার যে বেঞ্চমার্ক দর্শকের কাছে তৈরি হয়েছে, অতনুর এই নতুনতম ছবি ‘ আরো এক পৃথিবী ‘ তা থেকে অনেকটা সরে গিয়েছে বলতেই হবে। এই ছবির ন্যারেটিভ ওঁর আগেকার ছবির তুলনায় অনেকটাই মসৃণ, সহজ সাধারণ দর্শকের কাছে মনোগ্রাহী হওয়ার দাবি রাখে। এটা হয় তো সমঝোতা নয়, বিষয় ও গল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই তাঁর সিনেমা প্রকরণে বদল ঘটেছে। তাঁর ছবির সংলাপে যেভাবে স্বাদু সাহিত্যের আমেজ মেলে, ছবির প্রেক্ষিতে যে সুদৃশ্য শৈলীর চাদর জড়ানো থাকে, এই ছবিতে তার অভাব বোধ করতে পারেন দর্শক। আসলে ছবির কন্টেন্টই তো ঠিক করে দেয় সিনেমার ফর্ম। এখানেও তেমনটাই ঘটিয়েছেন অতনু।

লন্ডন শহরের প্রেক্ষাপটে সদ্য পৌঁছে যাওয়া এক বাঙালি তরুণী প্রতীক্ষার (তাসনিয়া ফারিন) “স্বপ্নে বোনা ঘর, স্বপ্নে বোনা বাড়ি” তো শুধু নয়, স্বপ্নের বরকেও না পাওয়ায় যে অসহায় অবস্থার মুখোমুখি হয় সেটা নিয়েই এক ধরনের সাসপেন্স থ্রিলারের ঢংয়ে চিত্রনাট্য বুনেছেন। অবশ্যই নিরুদ্দেশ স্বামীর ফিরে পাওয়ার মাঝে এসেছে মাঝবয়সী বেহালা বাজিয়ে বোহেমিয়ান পিতৃসম শ্রীকান্ত মুন্সী (কৌশিক), বান্ধবীর বেশে আয়েশা (অনিন্দিতা) নামের এক লন্ডনবাসী তরুণী যে নিজেও “ভয়ংকর” পরিবেশে বাঁচে, বাঁচতে বাধ্য হয়। প্রতীক্ষার পাশে স্নেহশীল বাবার ভূমিকা নিয়ে শ্রীকান্ত দাঁড়ান। সাময়িক আশ্রয় দেন, চাকরি এবং নিশ্চিত আশ্রয়ের ব্যবস্থাও করে দেন তিনি। অথচ এই মানুষটাই দুনিয়া জয় করার স্বপ্ন নিয়ে একসময় দেশ ছেড়েছিলেন জীবন থেকে পালানোর জন্য নয়, জীবনকে দেখার জন্য। পুজোর তহবিল তছরূপ করে তিনি পালিয়ে এসেছিলেন লন্ডনে। প্রতীক্ষার সঙ্গে তাঁর জীবনের কথাও সমান্তরাল জায়গা নিয়েছে চিত্রনাট্যে। এখন তাঁর আশ্রয় টেমস নদীর খালে পরিত্যক্ত এক ছোটো লঞ্চে (কীভাবে সেটি তিনি দখল করেছেন জানা যায়নি!), যেমন অস্পষ্ট থেকে গিয়েছে আয়েশার অতীত, কিংবা নিজের “গুন্ডা” বাবার কাছ থেকে প্রতীক্ষার রিভলবার চালানোর প্রশিক্ষণ! অথচ ফ্ল্যাশব্যাকে প্রতীক্ষার অতীত জীবনের টুকরো টুকরো কিছু সুন্দর এবং অসুন্দর মুহূর্ত এনেছেন অতনু! প্রতীক্ষার বর “উধাও” হয়েছিলেন কেন, কিভাবেই বা ফিরে এলেন সেটাই অতনুর ছবির আরও একটি অন্ধকার দিক।

Advertisement

[আরও পড়ুন: শিল্পীর মুক্ত উদযাপনে শিল্পের গণমুক্তি, বার্তা বেহালা আর্ট ফেস্টের ]

ছবির এই পর্বটুকু ভাগ্যিস খুবই সংক্ষিপ্ত! অতনুর চিত্রনাট্য ঘরছাড়া মানুষগুলোর বিদেশ বিভুঁইয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়াকেই প্রাধান্য দিয়ে লেখা। সুতরাং আপ্পু প্রভাকরের ক্যামেরা দারুণ গতিময় এই ছবিতে। তাঁর ফ্রেম এবং কোরিওগ্রাফি বেশ নাটকীয়, সাহিত্য বা কবিতার অনুসারী নয়, হয়তো তিনি তেমনটি চাননি। তবে ইথিওপিয়ার টাক্সি ড্রাইভার বা পাকিস্তানের তরুণের মতো ছোট ছোট চরিত্রগুলো হালকা স্কেচের আঁচড়ে বিষণ্ণ জীবনের কথাও জানিয়ে দেয়। এগুলোই ছবিতে অতনুর একান্ত ছোঁয়া বলতে যায়, যেমন বয়স্ক কালো উদারমনস্ক বাড়িওয়ালি! তবে ছবির প্রাণবিন্দু ধরা রয়েছে থিম সংটিতে! অনির্বাণ মুখোপাধ্যায়ের লেখা গানটি পুরো ছবি জুড়েই প্রিল্যুড ইনটারল্যুডের কাজ করেছে। দেবজ্যোতি মিশ্রর সুরে পোরশিয়া সেনের গাওয়া সুন্দর গানটি অবশ্য প্রায় বিবেকের চেহারা নেওয়ায় ছবির সিনেম্যাটিক মূল্য কিন্তু একটু বেতাল হল যে! তবুও বলবো “স্বপ্ন দেখছ তুমি, নাকি স্বপ্ন দেখছে তোমাকে..” “আকাশের নিচে বাঁচো, বাতাস হবে ঘর…” গানের ইত্যাদি লাইনগুলো ছবির প্রাণ! এখানেই আমাদের চেনা অতনুর চেতনা ও ছোঁয়ার অনুভূতি মেলে।

ওঁর ছবিতে অভিনয় কোনও শিল্পী মন দিয়ে করবেন না সেটা হতে পারে না। এখানেও হয়নি। প্রতিবেশী দেশের নতুন মুখ তাসনিয়া ফারিন প্রতীক্ষার চরিত্রে ভীতি, হতাশা, আবার প্রতিকূল সময়ে শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়ানোর কাজটিও সাবলীল ভাবেই করেছে। ঠিক প্রথম শেখা ইংরেজি কবিতার মতোই। আয়েশা চরিত্রের শারীরিক স্মার্টনেসের সঙ্গে সুন্দর মিলিয়ে দিয়েছেন বাচিক অভিনয়ও অনিন্দিতা বসু। আর কৌশিক গাঙ্গুলিকে নিয়ে নতুন কী আর বলা যায়! তিনি শ্রীকান্তর বিপজ্জনক বেঁচে থাকার স্বাভাবিকতার সঙ্গে নিজের হারিয়ে ফেলা শিশু ভাইঝি নুরির ভালবাসাকে প্রতীক্ষার প্রতি উজাড় করে দিয়েছেন কিছু নীরব মুহূর্ত দিয়ে! বয়স্ক বাড়িওয়ালির চরিত্রের অনামী অভিনেত্রীও বেশ আন্তরিক ও স্বচ্ছন্দ। তুলনায়, অরিত্রর চরিত্রে সাহেব ভট্টাচার্য চিত্রনাট্যে তেমন জায়গা পায়নি, যেটুকু পেয়েছেন সদ্ব্যবহারই করেছেন। সত্যি বলতে, এতো দিনের চেনা পরিচালক অতনু ঘোষকে এই ছবি এক অচেনা আলোয় আমাদের সামনে নিয়ে এল। সেই অচেনা আলোর বিচ্ছুরণ আদৌ হয় কিনা বা কীভাবে কতটা হয় সেটা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

[আরও পড়ুন: বড়পর্দায় বাদশাহি কামব্যাক, ‘পাঠান’ বুঝিয়ে দিল শাহরুখ ‘জিন্দা হ্যায়’]

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement