Advertisement
Advertisement

Breaking News

All the light we can

মুক্তি পেল পায়েল কাপাডিয়ায় ‘অল উই ইম্যাজিন অ্যাজ লাইট’, কেমন হল কানজয়ী এই ছবি?

কান চলচ্চিত্র উৎসবে গ্রাঁ প্রি সম্মান পেয়েছে পায়েলের ছবি 'অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট'।

All the light we can imagine film review out
Published by: Akash Misra
  • Posted:November 22, 2024 1:36 pm
  • Updated:November 22, 2024 3:04 pm  

বিদিশা চট্টোপাধ্যায়: আমরা গোটা জীবন ধরে কী খুঁজি? এর কোনও একটা উত্তর আছে কি? একটা উত্তর হলে আমাদের খুঁজে চলা, বেঁচে থাকার কোনও মানেও বোধহয় হত না। আর একটা উত্তর নেই বলেই পায়েল কাপাডিয়া ‘অল উই ইম্যাজিন অ্যাজ লাইট’ ছবিটা বানিয়ে ফেলেছেন এবং এই কাজে তিনি কতটা সফল সেটা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

সত্যিই তো কী খুঁজি? ছবির টাইটেলে আছে আলোর কথা। ছোটবেলায় দূরপাল্লার ট্রেনে রাত নেমে এলে, জানালা দিয়ে অন্ধকারে জ্বলে ওঠা দূরের সরে-সরে যাওয়া আলোগুলো বড় মায়াবী লাগত। ক’টা আলো, ছোট হয়ে মিলিয়ে গেল, গুনতাম। লোডশেডিং হলে রাতের আকাশে তারার আলো খুঁজতাম। বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় স্ট্রিট লাইট থাকলে স্বস্তি পেতাম। আর সাইকেলের প্রেমিক যুগল বাল্ব নষ্ট হয়ে যাওয়া ল্যাম্পপোস্ট খুঁজত। বড় দিনে পার্ক স্ট্রিটের আলো কিংবা বিকেল ফুরিয়ে আসার আগের আলো। আলোর মানে ব্যক্তিবিশেষে, বয়স বিশেষে বদলে বদলে যায় ।

Advertisement

যেমন এই ছবির তিন নারীর কাছে। প্রভা, অনু এবং পার্বতী। প্রভা সিনিয়র নার্স, অনু জুনিয়র এবং প্রভার রুমমেট। বয়স্ক পার্বতী এই নার্সিং হোমের ক্যান্টিনে কাজ করে। প্রভা লোকাল ট্রেনে বাড়ি ফেরে। সে একা, তার স্বামী বিয়ে করেই বিদেশ পাড়ি দিয়েছে ফ্যাক্টরিতে চাকরি পেয়ে। অনুর প্রফুল্লতা তার কাছে অসহ‌্য, দমবন্ধ করা! অনু বয়সে ছোট, তার প্রেমিক আছে, তার চোখেমুখে আছে উত্তেজনার আলো, শরীরী আগুনের উত্তাপ। পার্বতী যে বস্তিতে থাকে, বিল্ডাররা সেই জমি নিয়ে নেবে, সেও একা।
এত বড় মুম্বই শহর। এত আলো, এত মানুষ এত ব্যস্ততা, এত স্বপ্ন, এত হাতছানি কিন্তু কি ভীষণ নিঃসঙ্গ এবং একই সঙ্গে খুব কালো। একটা দৃশ্য আছে গণপতি বিসর্জনের। আলো, বাজনা, মানুষ, মিছিল, তবু কি মলিন এবং হৃদয়হীন।

আবার অন্য একটা দৃশ্যে প্রভাকে দেখি একটা কবিতার মতো চিঠি পড়তে। অনু ঘুমিয়ে পড়ার পর, জানালায় বসে মোবাইলের আলো জ্বেলে প্রভা পড়ছে। প্রেরক প্রভাকে ভালোবাসে, বোঝা যায়। জানালার বাইরে অনেক দূরে ছোট ছোট আলো। সেই চিঠি পড়ার মুহূর্তে অন্ধকার ঘরটা আলোয় ভরে যায়। প্রভাকে শান্ত প্রদীপের মতো লাগে। ঘর চলতে শুরু করে। প্রভা যেন রেলগাড়ি চেপে চলে যাচ্ছে, পাড়ি দিচ্ছে জোছনার দিকে। এমন আলো শপিং মলেও নেই। অন্যদিকে অনুর হাত ধরে ঘুরে বেড়ানো সিয়াজের কাছে রাতের মুম্বই বড় মায়াময়। তার গ্রামে যে সময়ে খেলা সেরে বাড়ি গিয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ত, সেখানে তেমন সময় সে তার প্রেমিকার হাত ধরে এই বিশাল শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই শহর তার কাছে আশ্চর্যের, উড়ানের। অনুর কাছে শহরের আলো মানে আজাদির আলো। এখানে তাকে শাসন করার কেউ নেই।

সে প্রেমের আলোয় পূর্ণ হয়ে স্বাধীন তারার মতো জ্বলজ্বল করে। অন্যদিকে প্রেমহীন, স্পর্শহীন, আদরহীন জীবনটা বাঁচতে বাঁচতে প্রভাকে দেখলে তপস্বিনীর মতো লাগে, যার নিজস্ব একটা জ্যোতি আছে। আমরা বাইরের যা কিছুকে আলো বলে ধরে নিই বা নিতে চাই সেটা আমাদের সুবিধের জন্যই। ছবির সংলাপে বলছে, এই যে বিশাল মুম্বই শহরের ইলিউশনকে বিশ্বাস করতেই হবে, না হলে তুমি পাগল হয়ে যাবে। ধীরে ধীরে এই ইলিউশনটাই যেন বিশাল আকার নিচ্ছে। সেই কারণেই বোধহয় প্রভাকে সেই চিঠির প্রেরক বলে, আমি নিজের স্টেশন নামতে ভুলে যাই। ভাষাটাও রপ্ত হয়নি, আমার কি থেকে যাওয়ার মতো কারণ আছে? প্রভা উত্তর দেয় না। লোকটার কাছে আলো নিভে যায়। পার্বতীর ঘর ভেঙে দিতে চাওয়া বিল্ডারদের আকাশছোঁয়া বাড়ির তলা দিয়ে ছোট ছোট রেলগাড়ি যায়। উঁচু বাড়ির স্থির আলোর সামনে দিয়ে যাওয়া রেলগাড়ির চলন্ত আলোকে দেখলে ইলিউশনের পাশাপাশি প্রাণের ইঙ্গিত মনে হয়। সেটা
আশার আলো।

ছবির বেশির ভাগ দৃশ্যই সন্ধে, রাত আর বৃষ্টির অন্ধকারে। দিনের আলো এই ছবির ওপর বিশেষভাবে তখনই এসে পড়ে যখন প্রভা, অনু এবং পার্বতীর জানালার সিটের বাইরে দেখা যায় কংক্রিটের বদলে ঘন সবুজ। শহর ছেড়ে পার্বতীকে গ্রামে ছাড়তে আসে ওরা। যেন অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরা। ১৯৭৮ সালের মুজাফফর আলির ছবি ‘গমন’-এ এই ফেরা ছিল না। ইউপি থেকে মুম্বইয়ে ট্যাক্সি চালাতে এসে টাকা বানিয়ে গ্রামে ফিরে যাবে ভেবেছিল গোলাম হাসান। এই মহানগরী ফিরতে দেয়নি। গ্রামের অন্ধকার রান্নাঘরে বসে চোখের জল ফেলতে ফেলতে মিলিয়ে গিয়েছে খায়রুনের প্রতীক্ষা। কিন্তু প্রভা কী করে পারল? আসলে ওই যে অনুর প্রেম দেখে সে আর কোণঠাসা হল না। অন্য নারীর সুখে তার মুখে জ্বলে উঠল শান্তির আলো। এই সিস্টারহুড ছাড়া অন্ধকার পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আর যে কোনও বিকল্প রাস্তা নেই সেটা পায়েল কাপাডিয়া বুঝেছেন। আমরাও যত তাড়াতাড়ি বুঝে উঠতে পারব নিজেরাই আলো হয়ে উঠব।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement