নেপোটিজম বিতর্ক, স্টার-কিডদের কটাক্ষ, ইন্ডাস্ট্রির অচলায়তন পরিস্থিতি, হাজারো বিতর্কের মাঝেই মুক্তি পেল ‘গুঞ্জন সাক্সেনা: দ্য কারগিল গার্ল’ (Gunjan Saxena: The Kargil Girl)। বাস্তব জীবনের গুঞ্জন সাক্সেনা ‘টারম্যাক’-এ নারীবাদের ঝাণ্ডা উড়িয়ে ফিরলেও রিল লাইফে সেই বীরঙ্গনার জীবনকাহিনিকে কতটা তুলে ধরতে পারলেন জাহ্নবী কাপুর? লিখছেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ।
পরিচালক- শরণ শর্মা
অভিনয়ে- জাহ্নবী কাপুর, পঙ্কজ ত্রিপাঠি, অঙ্গদ বেদি, বিনীত কুমার।
১৯৯৯ সালে কারগিলের যুদ্ধক্ষেত্রে আহত জওয়ানদের কাছে এক ‘মহিলা’ ফ্লাইট লেফটেন্যান্টই হয়ে উঠেছিলেন ভগবানের দূতের মতো। রণক্ষেত্রে শত্রুপক্ষ পাকিস্তানের আক্রমণের হাত থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে ফিরেছিলেন বহু সেনা-জওয়ানদের। চল্লিশটিরও বেশি মিশনে গিয়েছেন। পাক সেনার গোপন ঘাঁটি উদ্ধার করে খবর দিয়েছেন। গুঞ্জন সাক্সেনাকে ভারতের কারগিল সাফল্যের অন্যতম মুখ বললেও অত্যূক্তি হয় না! প্রশিক্ষণকালীন ছেলেদের ভিড়ে দমিয়ে রাখা এই মেয়েটিই নিজের জেদ, অদম্য ইচ্ছেজানায় ভর করে উড়িয়ে দিয়েছিলেন জয়ের নিশান। সেই বীরাঙ্গনার কাহিনিই পর্দায় তুলে ধরেছেন শরণ শর্মা। গুঞ্জন সাক্সেনার ভূমিকায় জাহ্নবী কাপুর (Janhvi Kapoor)।
গুঞ্জন সাক্সেনার ভূমিকায় জাহ্নবী
তুমি মেয়ে। অতএব পাহাড়ে চড়া, পাইলট হয়ে আকাশে ওড়ার স্বপ্ন তোমার ‘ইচ্ছে-তালিকা’ থেকে বাদ দাও! এ হল আমাদের অতি পরিচিত সমাজের ‘আম’ কথা। সামাজিক কাঠামোয় যতই নতুন করে খড়-মাটি লেপা হোক না কেন, দেশের জরাজীর্ণ-ভগ্ন মানসিকতার জন্য কখনওই তা দৃঢ়, পোক্ত কাঠামোতে পরিণত হবে না। নারীদের ‘ফাঁপা’ স্বাধীনতাই সার! বায়ুসেনায় মহিলাদের জায়গা কোথায়? সাম্যবাদ তো দূরের কথা! উলটে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নিয়মে বেরি পড়িয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল গুঞ্জনকে। তবে লিঙ্গবৈষম্যের পালটা জবাব মুখে নয়, বরং রণক্ষেত্রে দিয়েছিলেন তিনি। শুরুটা ঠিকভাবে হলেও এরকম রাফ অ্যান্ড টাফ, প্রথম মহিলা শৌর্যপ্রাপ্ত বিমানচালক এবং ডাকাবুকো একজন মহিলার চরিত্রে কোথাও গিয়ে খানিক বেমানান মনে হল জাহ্নবীকে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই উল্লেখ্য, জাহ্নবী কিন্তু পর্দায় গুঞ্জন সাক্সেনা ফুটিয়ে তুলতে কোনও রকম কসরত ছাড়েননি। তাঁর মধ্যেকার প্রচেষ্টা ফুটে উঠেছে ছবির প্রতিটি দৃশ্যেই। কিন্তু পিছলে গিয়েছেন টারম্যাকে! কোথাও গিয়ে বড় বেশি করে মনে হল, এই ছবিতে আরও পোক্ত একজনের দরকার ছিল। বরং অভিনয়ের দিক থেকে মূল চরিত্র জাহ্নবীকেও ছাপিয়ে গিয়েছেন বাবার চরিত্রে অভিনয় করা পঙ্কজ ত্রিপাঠী।
দিকভ্রষ্ট চিত্রনাট্য
“যে চেষ্টা করে, ভাগ্য কোনওদিন তাঁকে হারতে দেয় না”, বাবার বলা এই কথাগুলোই মেয়ে গুঞ্জন সাক্সেনার কাছে যেন মন্ত্রের মতো হয়ে গিয়েছিল। তাই রানওয়ে থেকে পুরো দুনিয়া জয় করার নেশাকে কোনও কিছুই দমাতে পারেনি। শুরুটা ভালই হয়েছিল, কিন্তু ছবির মাঝে গিয়ে কোথায় যেন তাল কেটে গেল। পরিচালক শরণ শর্মার হাতে ‘গুঞ্জন সাক্সেনা: দ্য কারগিল গার্ল’ এক লড়াকু মেয়ের কাহিনির পরিবর্তে কখন যেন সম্পর্কের গল্প হয়ে ওঠেছে। যে গল্প এক বাবা এবং মেয়ের হার না মানার কথা বলে। প্রতিকূলতাকে জয় করে স্রোতের বিপরীতে সমুদ্রে গা ভাসিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর কথা বলে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ভিড়ে গুঞ্জনের টারম্যাক সাফল্যের থেকেও তাঁর পারিবারিক টানাপোড়েনকে বেশি করে হাইলাইট করা হয়েছে ছবিতে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজপ্রথার প্রচলিত বিশ্বাসকে কষিয়ে চপেটাঘাত করতে গিয়েও কোথাও মনে হল লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গেল!
তুলনামূলক পরিণত জাহ্নবী
জেদ, রণক্ষেত্রে অদম্য প্রচেষ্টা.. উপকরণ সবই ছিল। তবে ঠিক জমল না। ট্রেলারে আত্মবিশ্বাসী এবং প্রাণবন্ত গুঞ্জনের লুকে শ্রীদেবীকন্যা জাহ্নবী কাপুর নজর কাড়লেও ছবিতে বেশ কিছু জায়গায় দুর্বল মনে হয়েছে। তবে ২০১৮ সালে ‘ধড়ক’-এর থেকে ‘গুঞ্জন সাক্সেনা: দ্য কারগিল গার্ল’-এ জাহ্নবী কাপুরকে অভিনেত্রী হিসেবে তুলনামূলক পরিণত মনে হল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.