বিশাখা পাল: ছবির ট্রেলার দেখে গল্প সম্পর্কে আঁচ পাওয়া যায়নি একেবারেই। সঞ্জয় দত্ত থেকে বরুণ ধাওয়ান, এই দুই প্রজন্মের মধ্যে খেই হারিয়ে ফেলেছিল ট্রেলারের গতি। ফলে কাট টু কাট শট দেখেই খুশি থাকতে হয়েছিল দর্শককে। কিন্তু ছবি মুক্তির পর দেখা গেল পুরোটা না হলেও ‘কলঙ্ক’-এর গল্প বেশিরভাগটাই আগে থেকে আন্দাজ করা যায়। কিন্তু চিত্রনাট্য, পরিচালনা ও অভিনয়ের গুণে সসম্মানে উতরে গেল ‘কলঙ্ক’।
গল্পটি দেখানো হয়েছে ফ্যাশব্যাকে। অমৃতসরে বসে ১০ বছর পর একটি মেয়ে বলছে লাহোরে তার ফেলে আসা জীবনের গল্প। ছবির পটভূমিকা স্বাধীনতার ঠিক আগের। দেশ তখনও ভাগ হয়নি। লাহোরের কাছে হুসনাবাদ শহরের একটি পরিবারে তৈরি হয় এক অদ্ভুত পরিস্থিতি। বাড়ির পুত্রবধূ সত্য (সোনাক্ষী) মরণাপন্ন। ক্যানসার বাসা বেঁধেছে শরীরে। সে চায় তাঁর মৃত্যুর পর স্বামী দেব (আদিত্য) আবার বিয়ে করুক। তার মৃত্যুর পর নতুন কনে যাতে পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে, তাই নিজে বেঁচে থাকতে থাকতেই তাকে বাড়িতে আনতে চায় সত্য। এখান থেকেই পারিবারিক ঘেরাটোপে প্রবেশ আলিয়ার। ছবিতে তাঁর নাম রূপ। তবে ত্রিকোণ প্রেমের উপাখ্যান এই গল্প নয়। সাধারণত এক্ষেত্রে কোনও একজন নায়িকা স্বামীর ভালবাসার জন্য উঠে পড়ে লাগে। এখানেই গড়পড়তা ফ্যামিলি ড্রামাকে টেক্কা দিয়েছে ‘কলঙ্ক’।
বিয়ের পর রূপ জানতে পারে স্বামী তাকে কোনওদিনই ভালবাসতে পারবে না। তাতে সে ঘরের কোণে বসে ফুঁপিয়ে কাঁদে না। বরং শহরের নিষিদ্ধপল্লিতে গিয়ে গান শেখার জেদ ধরে। নিজের জীবনকে নিজের মতো করে উপভোগ করতে চায়। নিষিদ্ধপল্লির বিখ্যাত বাঈজি বেগম বাহারের (মাধুরী) কাছে গান শিখতে এসেই জাফর নামে এক মুসলিম ছেলের প্রেমে পড়ে যায় রূপ। এই জাফর আবার আদতে প্রতিবাদী স্বভাবের ছেলে। মেয়ে নিয়ে খেলা তার স্বভাবসিদ্ধ। অবশ্য বেগম বাহারকে সে সহ্য করতে পারে না। রূপকে এক লহমায় নিজের দিকে টেনে আনে জাফর। এদিকে রূপ তখন পারিবারিক খবরের কাগজের অফিসে যাতায়াত শুরু করেছে। স্টোরির সন্ধানে সে কাকতালীয়ভাবে জাফরের কাছেই এসে পড়ে। প্রেম তাদের যখন বেশ ভালরকম পেকে উঠেছে, বাদ সাধে বলরাজ চৌধুরি (সঞ্জয় দত্ত) ও বেগম বাহার। রূপকে তারা জানিয়ে দেয়, প্রেম নয়, চৌধুরিদের ধ্বংস করতে জাফর রূপকে দাবার বোড়ের মতোই ব্যবহার করছে।
[ আরও পড়ুন: জমাটি থ্রিলার হিসেবে দর্শকদের মন কাড়ল সৃজিতের ‘ভিঞ্চিদা’? ]
প্রত্যাশিত। কোনও পরিবারকে ধ্বংস করতে গেলে বাড়ির বউকে কবজা করা সবচেয়ে সহজ অস্ত্র। বরুণের অভিনয়ে দেখে আর চিত্রনাট্যের গুণে একথা আগে থেকে বোঝার এক ফোঁটাও উপায় নেই। এখানে বড় নম্বর পেয়ে পাশ করে গিয়েছেন অভিষেক বর্মন। কিন্তু জাফর কেন এমন করতে চায়? এখানেই আসে বেগম বাহারকে সহ্য না করতে পারার কারণ। উঠে আসে বাহার আর বলরাজের অনৈতিক সম্পর্কের কথা। আবারও- প্রেডিকটেবল। জাফর যে তাদেরই সন্তান, তা ছবির প্রথম থেকেই আঁচ করা যায়।
ছবিতে চমক অবশ্য একজনই। কুণাল খেমু। বলতে গেলে তিনিই দর্শকের মধ্যে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত টানটান উত্তেজনা জিইয়ে রাখেন। ছবির পোস্টারে তিনি নেই। ট্রেলারেও একঝলকের বেশি দেখা যায়নি তাঁকে। কিন্তু ছবিতে তিনিই প্রধান আকর্ষণ। জাফরের বন্ধু আবদুল হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ। কিন্তু ছবির ক্লাইম্যাক্সেও তিনি মুখ্য। তাঁকে ছাপিয়ে যেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে আদিত্য, বরুণ ও আলিয়াকে। দেশভাগের জন্য মুসলিমদের উসকে দেওয়া থেকে দাঙ্গা বাঁধানো, সবেতেই আবদুল অগ্রণী। তারই জন্য পরিণতি পায় না রূপ আর জাফরের প্রেম। দেশভাগের সময় যে ধ্বংসলীলা চলেছিল, তাতে আবদুল সক্রিয় ভূমিকা নেয়।
ভাল নম্বর নিয়ে ‘কলঙ্ক’ পাশ করে যায় শুধু চিত্রনাট্য আর অভিনয়ের গুণে। ‘টু স্টেটস’-এর পর অভিষেক বর্মনের এটি দ্বিতীয় ছবি। প্রথমটির মতো দ্বিতীয় ছবিতেও নিজের সুনিপুণ পরিচালনার একটা নমুনা দেখিয়েছেন তিনি। প্রতিটা খুঁটিনাটি বিষয়ের দিকে তীক্ষ্ণ নজর ছিল তাঁর। এমনকী চিত্রনাট্য নিয়েও কোনও সমালোচনার অবকাশ রাখেননি তিনি। ছবির সেট আর মিউজিকও অসাধারণ। শুধু একটাই আক্ষেপ, ছবিটি বড় বেশি প্রেডিকটেবল। পরের ধাপে কী হবে, তা আগে থেকেই বোঝা যায়। এটুকু বাদ দিলে ‘কলঙ্ক’-এ তেমন কোনও খামতি নেই। বরং তিনঘণ্টা জমিয়ে সিনেমার রসস্বাদন করতে পারে অভিষেক বর্মনের ‘কলঙ্ক’।
[ আরও পড়ুন: শতাধিক বাংলা ছবির ভিড়ে বুদ্ধির সিনেমা ‘তারিখ’ ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.