সুলয়া সিংহ: তাঁরা ভারতীয়দের টেনিসকে ভালবাসতে শিখিয়েছিলেন। ব়্যাকেট হাতে গর্বিত করেছিলেন দেশকে। আগামীকে স্বপ্ন দেখার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। শুধু বড়পর্দায় নয়, বাস্তবেও যে জয়-বীরু জুটির অস্তিত্ব আছে, তা জানান দিয়েছিলেন। আবার তাঁদেরই বৈরিতা অবাক করেছে গোটা বিশ্বকে। টেনিস কোর্টকে বিদায় জানানোর এতগুলো বছর পর সেই দুই কিংবদন্তি যখন নিজেদের অনুভবের কাহিনি নিজমুখে জানান, মন্দ লাগে না। চোখের সামনে ১৯৯৬, ১৯৯৯-এর সুখের সব স্মৃতি ভেসে উঠলে টেনিসপ্রেমী হিসেবে নিঃসন্দেহে চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। সর্বোপরি গুঞ্জন আর বাস্তবের সূক্ষ্ম ফারাকটাও বেশ স্পষ্ট হয়ে যায়। ‘ব্রেক পয়েন্ট’ তাই লি-হেশ জুটিকে জানার দিক থেকে নিশ্চিতভাবেই দারুণ একটা ডকু ফিচার হয়ে রইল।
খেলোয়াড় পরিবারে জন্ম নেওয়াটা প্রথম থেকেই একটা অ্যাডভান্টেজ ছিল লিয়েন্ডার পেজ ও মহেশ ভূপতির জন্য। জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে কিংবা আরও ভাল করে বলতে গেলে সঠিক পথে চালিত হতে যে পথপ্রদর্শকের প্রয়োজন, তা তাঁরা পেয়েছেন গোড়া থেকেই। তাছাড়া আর্থিক অনটনের সম্মুখীনও তাঁদের হতে হয়নি কখনও। কিন্তু বাবার দুই তারকার পথের কাঁটা হয়ে উঠেছে মানসিক চাপ। লিয়েন্ডারের মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদ থেকে মহেশের চোট তাঁদের কেরিয়ারের শুরুতেই বড় ধাক্কা। তবে নিজেদের মতো করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা।
‘ব্রেক পয়েন্ট’ (Break Point) ডকু ফিচারে তাঁদের কেরিয়ারকে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জুনিয়র উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হওয়া থেকে অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জয়ের মধুর স্মৃতিচারণ করেছেন পেজ। তারপর পেজের জীবনে মহেশের এন্ট্রি। তাঁদের ডাবলস কেরিয়ারের সূচনা। লাজুক মহেশ (Mahesh Bhupathi) আর ‘দাবাং’ লিয়ের বন্ধুত্বের নানা টুকরো কিস্সা সংবাদমাধ্যমের দৌলতে পৌঁছে গিয়েছিল টেনিসপ্রেমীদের কাছে। কিন্তু তাঁরা একসঙ্গে কতবার ‘শোলে’ ছবিটি দেখেছেন কিংবা ম্যাচে নামার আগের রাতে কী কী করেছেন অথবা ‘ছোট ভাই’ মহেশ ভূপতিকে বিজ্ঞাপনে অতিরিক্ত অর্থ পাইয়ে দিতে কীভাবে নিজে কম টাকায় চুক্তি করেছেন, এ ডকু ফিচারে তা অনেকটাই বিস্তারিত রয়েছে। আর রয়েছে ভরপুর আবেগ। তাঁদের বন্ধুত্বে চিড় ধরার নেপথ্য কাহিনি শুধু তাঁদের মুখ থেকে নয়, শোনা গিয়েছে তাঁদের পরিবারের সদস্য, বন্ধু, টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা (Sania Mirza), রোহন বোপন্না, ব্রায়ান ব্রাদার্স, কোচ-সহ তাঁদের জীবনের সঙ্গে জড়িত নানা ব্যক্তিত্বরা।
কথায় বলে এক হাতে তালি বাজে না। এই সম্পর্কে ভাঙনের ক্ষেত্রেও তেমনটাই যেন প্রযোজ্য। কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি, খানিকটা ইগো, অনেকটা গুঞ্জনের প্রভাব আর বন্ধুত্বে তৃতীয় ব্যক্তির আগমন- সব মিলিয়ে লি-হেশের সোনালি সফরের ইতি ঘটেছিল একটা সময়। তার জন্য কি তাঁরা আক্ষেপ করেন? টাইম মেশিনে চেপে সেই সময়ে পাড়ি দিয়ে এক স্ম্যাশে পালটে ফেলতে চান নিষ্ঠুর সত্যিটাকে? রিভিউতে পড়ে নয়, উত্তরটার জন্য ডকু ফিচারে চোখ রাখুন। আর টেনিসপ্রেমী হলে আরও একবার বাঁচুন সেই গর্বের দিনগুলিতে। যেখানে প্রথম ভারতীয় হিসেবে মিক্সড ডাবলস গ্র্যান্ড স্লাম চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন মহেশ ভূপতি। যেখানে বিশ্বের এক নম্বর জুটি হিসেবে একের পর এক গ্র্যান্ড স্লাম ঘরে তুলেছিলেন লি-হেশ। যেখানে এশিয়ান গেমসের পোডিয়ামে সোনার পদক গলায় জাতীয় সংগীত গাইছিলেন তাঁরা।
‘ব্রেক পয়েন্ট’ ভারতীয় টেনিস ইতিহাসের কাছে এক অমূল্য সম্পদ হয়ে রয়ে গেল। বিশ্বের সেরা জুটির দূরত্বের নেপথ্য কাহিনির অনেকখানি নির্ভয়ে জানানোর জন্য পরিচালক জয় কারসকে ধন্যবাদ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.