ভালবাসার কোনও লিঙ্গ হয় না। ভালবাসা ভালবাসাই। সমকামিতা এখন মুক্ত বিহঙ্গ। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সমলিঙ্গে যৌনতা এখন অত্যন্ত স্বাভাবিক। সেলুলয়েডে সমকামিতা নিয়ে অনেকবার আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু বারবার বাধা পেয়েছে। সেই কথাই sangbadpratidin.in-কে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন পরিচালক ওনির। শুনলেন বিশাখা পাল
এবার রামধনু আকাশে নির্দ্বিধায় উঠতে পারবে। কেউ কটাক্ষ করবে না। কেউ আড়চোখে দেখবে না সমকামীদের। বহুদিন ধরে যে লড়াই চলছে, তা এখন পায়ের নিচে মাটি পেল। সমকামিতার অধিকার রক্ষায় কখনও রাস্তায় নেমে হয়েছে বিপ্লব, কখনও আবার প্রতিবাদ হয়েছে সেলুলয়েডে। সমকামিতা যে অপরাধ নয়, তা বারবার বলে এসেছেন অনেকে। রুপোলি পর্দাতেও উঠে এসেছে সমকামীদের লড়াইয়ের গল্প। এতদিনের এত বিপ্লব শেষ পর্যন্ত পূর্ণতা পেল আজ। সুপ্রিম কোর্ট ঘোষণা করল, সমকামিতা অপরাধ নয়। আইন তো নিদজের কাজ করে দিল। এবার কি তবে সেলুলয়েডের জন্যও খুলে গেল দ্বার?
“অবশ্যই।” সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন চিত্রপরিচালক ওনির। বললেন, আজকের দিনটি ঐতিহাসিক। কারণ, আজ এক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এতদিন ধরে যে লড়াই চলছে, তা আজ সফল। তবে একে শুধু সমকামী বা রূপান্তরকামীদের জয় বলে মানতে নারাজ ওনির। পরিচালকের মতে, এই জয় সমস্ত ভারতীয়র জয়। কারণ দেশের সংবিধান প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা বলে। সেই অধিকার আজ স্বীকৃত। বহু লড়াইয়ের পর আজ আদালত স্বীকার করে নিয়েছে, যে কোনও সাধারণ মানুষের মতো সমকামী ও রূপান্তরকামীদেরও অধিকার আছে। তাঁরাও সাধারণই। এটা তো কম কথা নয়। আজ খুব বড় একটি কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। শুধু ভারতের নয়, গোটা পৃথিবীর জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আজও অনেক দেশে সমকামিতা স্বীকৃত নয়। সমলিঙ্গে যৌনতা এখনও পর্দার আড়ালেই থাকে। তারা এই দেখে উদ্বুদ্ধ করবে। আশাবাদী তিনি।
[ ‘আজ সেই সব মানুষের স্বীকৃতি পাওয়ার দিন, ঋতুপর্ণ বেঁচে থাকলে খুশি হতেন’ ]
বহুদিন ধরে সমকামিতা আর রূপান্তরকামিতা নিয়ে তিনি সোচ্চার ওনির। ‘মাই ব্রাদার নিখিল’, ‘আই অ্যাম’, ‘শব’-এর মতো ছবিতে উঠে এসেছে সেই কথা। কিন্তু ছবির বিক্রেতারা তাঁর পাশে দাঁড়াননি। এনিয়ে আক্ষেপ করছিলেন পরিচালক। বলছিলেন, ভাল ছবি। অথচ স্রেফ সমকামিতার জন্য তিনি পাননি স্যাটেলাইট চ্যানেল। কিন্তু এবার হয়তো তা হবে না। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর সমকামিতা বৈধ। তাই আর কোনও অজুহাত ধোপে টিকবে না।
তাঁর শেষ ছবি ‘শব’ এখনও কোনও স্যাটেলাইট চ্যানেল কেনেনি। ভাল কোনও প্লাটফর্ম পায়নি। অর্থনৈতিক লাভ-লোকসানের কথা অবশ্যই মানেন ওনির। কিন্তু সামাজিক দায়িত্ব বলেও তো কোনও বিষয় আছে। ওনির বলেন, আসলে সবার মধ্যে হোমোফোবিয়া-টা রয়ে গিয়েছে। সমকামিতা নিয়ে বললে লোকে কী বলবে? তার কী হবে? সবাই তাঁকে বলেছে, এই রকম গল্প তিনি কেন সিনেমার জন্য বাছেন? আর শুধু ‘শব’ কেন? সেটা তো হালে এসেছে। ‘আই অ্যাম’-কেও এই সব ঝড়-ঝঞ্ঝা পেরতে হয়েছিল। ছবিটি জাতীয় পুরস্কার পেয়েও অতিরিক্ত কোনও সুবিধা পায়নি। কেউ ছবিটিকে আলাদা করে দেখেনি। ছ’বছর কেউ এর স্যাটেলাইট সত্ত্ব কেনেনি। কারণ একটাই, সমকামী চরিত্রকে তিনি স্বাভাবিক হিসেবে দেখিয়েছেন। একটা U/A সার্টিফিকেটের জন্য তাঁকে সেন্সর বোর্ডের সঙ্গে টানা ছ’মাস লড়াই করতে হয়েছে। তবে এবার লড়াই অনেক সহজ হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
তবে লড়াই এখানেই শেষ নয়। কারণ, সমাজ রাতারাতি বদলাবে না। কিন্তু আস্তে আস্তে সমাজ বদলাবে। তার জন্য তৈরি থাকতে হবে। সমকামীরা নাগরিক অধিকারের জন্য লড়াই করবে। রুপোলি পর্দার বাঁধনও আলগা হবে। সেন্সর বোর্ড কোনও অজুহাতে এখন সমকামি ছবির উপর যথেচ্ছ কাঁচি চালাতে পারবে না। অ্যাডাল্ট মার্ক দিতে গেলেও দু’বার ভাবতে হবে। কিন্তু এর জন্য ইন্ডাস্ট্রি থেকে সমর্থন দরকার। তবেই লড়াই সফল হবে। কিন্তু হবে। সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের পর সেলুলয়েডের বাঁধন অনেক আলগা হবে বলে মনে করেন তিনি।
[ সমকামে ‘সুপ্রিম’ স্বীকৃতি, ঐতিহাসিক রায় নিয়ে কী জানালেন সেলেবরা? ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.