সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এ কোন সকাল! রাতের থেকেও যেন অন্ধকার। বৃহস্পতিবার সংগীতজগতে যেন আচমকাই নেমে এল ঘন অন্ধকার। চলে গেলেন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। আর এন টেগোর হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। আর গানের দুনিয়া হারালো তার অভিভাবককে।
বেশ কিছুদিন অসুস্থতা নিয়ে এই হাসপাতালে ভরতি ছিলেন। সুস্থতা কামনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। বয়স হয়েছিল প্রায় তিরাশি বছর। বাংলা গানের সুর ও ভাষা নিয়ে যে নিরীক্ষা, তার অন্যতম কান্ডারি ছিলেন। বাংলা সংগীত জগতকে দিয়ে গিয়েছেন অমূল্য সম্পদ। যে ঋণ নতজানু হয়ে স্বীকার করেন সব প্রজন্মের শিল্পীরা। তবু সকলকেই চলে যেতে হয়। গানের দুনিয়ায় গভীর শূন্যতা তৈরি করে তাই সুরলোকে পাড়ি দিলেন এই সুরশিল্পী।
[ বাঙালির ফের অস্কার যাত্রা, সেরার দৌড়ে শামিল ‘রক্তকরবী’ ]
বাংলা গানের সোনার সময়ের অন্যতম সেরা প্রতিনিধির তকমা তাঁকে দেওয়াই যায়। তবে তিনি ভাস্বর তাঁর ব্যতিক্রমী নিরীক্ষায়। সুরের পৃথিবীতে রামধনুর উদ্ভাস হলেও, বাংলা গানের ভাষা বা কথা কোনও কোনও অংশে ছিল বেশ দূর্বল। এমনকী সলিল চৌধুরির মতো কিংবদন্তিও রাবীন্দ্রিক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারেননি। সেই প্রেক্ষিতেই নয়া ভাষার জন্ম দেন জটিলেশ্বর। বাংলা ভাষার ঐশ্বর্য, শব্দের কারুকাজ কীভাবে বাংলা গানকে সমৃদ্ধ করে তুলতে পারেন তা তিনি হাতেকলমে করে দেখিয়েছিলেন। ফলত কেউ বলে ফাল্গুন, কেউ বলে পলাশের মাস। কিন্তু তিনি জানতেন এ আসলে তাঁর সর্বনাশ। এই অভিব্যক্তি বাংলা গানের নিজস্ব ও নতুন সম্পদ। তিনিই জানালেন, তোমার সঙ্গে দেখা না হলে ভালবাসার দেশটি দেখা হত না। জানালেন, কেমন করে বিনা কারণে বঁধূয়া চোখে জল আনে। সহজ সুরের চলনেও কী করে গানের অঙ্গে অঙ্গে রংমশাল জ্বালিয়ে তুলতে হয়, তা তাঁর থেকে ভাল আর কে জানেন। ফলে বাংলা আধুনিক গানের ধারায় এক নবযুগের শুরু হল। হারমোনিয়ামে জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের আঙুল খেলা করার অর্থ বাংলা গানের আর একটু সমৃদ্ধি।
[ তোতলামির দোষে ভুগতেন নিজেও, ‘হিচকি’র ট্রেলার লঞ্চে খোলামেলা রানি ]
পরবর্তী সময় আপন করে নিয়েছে এই ভাষাকে, এই অভিব্যক্তিকে। এই সহজ সুরের বিন্যাসকে। বলা যায় এই মোকাম থেকেই বাংলা গানের নয়া যাত্রা শুরু। স্বর্ণযুগের গান আর জীবনমুখী গানের বলে যা প্রচারিত হল।তার মাঝে সেতু হয়ে থাকল জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের গান।
চুঁচুড়ায় জন্ম ১৯৩৪ সালে। কিংবদন্তি সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের কাছে প্রায় এক দশক গানের তালিম নিয়েছেন। চিন্ময় লাহিড়ী ও সুধীন দাশগুপ্তের থেকেও আহরণ করেছেন সংগীতশিক্ষা। দীর্ঘ শিক্ষার সঙ্গে মিশিয়েছেন তাঁর নিজস্ব সংগীতবোধ। ফলে বাংলা সংগীতের দুনিয়ার অন্য ঘরানা জন্ম দিতে পরেছেন। তৈরি করে গিয়েছেন অংসখ্য ছাত্রছাত্রীকে। তাঁর সুরের ব্যাটন কণ্ঠে তুলে নিয়েছেন তাঁরাই। গত ৯ ডিসেম্বর থেকে কিডনির সংক্রমণে হাসপাতালে ভরতি ছিলেন। বার দুয়েক ভেন্টিলেশনেও রাখা হয়েছিল। তবু শেষরক্ষা হল না। বৃহস্পতিবার দুপুরে শিল্পী পাড়ি দিলেন সুরলোকে। হয়তো অন্য কোনও ভুবন ভাসছে তাঁর সুরের লহরীতে। মোটা কাচের চশমার ওপারে বন্ধ তাঁর দুচোখ। পোষা পাখির মতো আঙুল খেলে যাচ্ছে হারমোনিয়ামে। আর হয়তো অন্য কোনও সুরের ভুবনে পরিচিত ভঙ্গিতে তিনি ছড়িয়ে দিচ্ছেন তাঁক কণ্ঠের দরদ… ‘প্রাণের রাধার কোন ঠিকানা, কোন ভুবনে কোন ভবনে, বলতে পারে কোন সজনী, কোন স্বজনে?’… জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায় ছাড়া সুরের আখরে এমন দরদ দিয়ে এ প্রশ্ন আর কে করতে পারেন!
[ কেন অস্কার দৌড়ে বাতিল হল ‘নিউটন’, তথ্য ফাঁস করলেন নাসিরউদ্দিন ]
তাঁর প্রয়াণে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
।
Saddened at the demise of veteran singer Jatileshwar Mukhopadhyay. A big loss to the world of music. I wished him on his birthday only a week ago. Very sad. Condolences to his family
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) December 21, 2017
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.