এক ‘হীরামাণ্ডি’ সিরিজ সমস্ত কিছু পালটে দিল। রাতারাতি স্টার ‘উস্তাদজি’। এই চরিত্রে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন ইন্দ্রেশ মালিক। আপাতত কয়েকটাদিন বন্ধুদের সঙ্গে কোনও এক পাহাড়ে ঘুরতে গিয়েছেন। সেখান থেকেই সুপর্ণা মজুমদারকে দিলেন এই একান্ত সাক্ষাৎকার।
কেমন আছেন?
আমি খুব ভালো আছি।
কী বলে ডাকছে লোকজন? ইন্দ্রেশ মালিক না উস্তাদজি?
ম্যাডাম, মা-বাবা যে নাম দিয়েছে তা তো থাকবেই। আপনারা ভালোবেসে যে নামে ডাকতে চান ডাকতে পারেন।
‘হীরামাণ্ডি’তে উস্তাদজির চরিত্র বেশ আনপ্রেডিক্টেবল। কতটা প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল?
খুব বেশি প্রস্তুতি কিন্তু নিতে হয়নি। ব্রিফিং বেশ স্ট্রং ছিল। চরিত্রটা বুঝেছি, পরিচালকের চোখে ভাষায় একটা স্বস্তি দেখেছি। তিন-চার দিনের মধ্যেই ধরে ফেলেছিলাম বিষয়টা। এটা আসলে পুরোটাই টিম এফোর্ট।
সাধারণত অভিনেতারা বাস্তব থেকে অনুপ্রেরণা পান। আপনার কাছে কোনও রেফারেন্স ছিল?
১৯৪০-এর এমন উস্তাদজি পাওয়া তো এখন সম্ভব নয়! কিছু শোনা কথা থাকে, কিছু পড়ে জানতে হয়, পুরনো সিনেমা দেখতে হয়, তাতে কিছু ম্যানারিজম পাওয়া যায়। আমার দাদু-দিদিমা, ঠাকুমা-ঠাকুরদা আবার লাহোর, রাওয়াপিণ্ডির মানুষ ছিলেন। তা জেরে কিছু সাহায্য পেয়েছি। নির্দিষ্ট কোনও চরিত্র খুঁজতে হয়নি। পরিচালক ও চিত্রনাট্যকারদের মতো করে এই চরিত্র ফুটিয়ে তোলার নেপথ্যে এমনই একাধিক বিষয়ের প্রভাব রয়েছে।
সঞ্জয় লীলা বনশালি নাকি আপনার স্বপ্নে আসতেন?
উনি তো আমার গুরু। আমি তো ওনার ব্যক্তিত্বতে মুগ্ধ ছিলাম। কে হয় না বলুন তো! প্রথমে একটু দ্বিধা ছিল। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই সেই দ্বিধা কেটে যায়। এখন আমি ওনাকে অনেক ভালো বুঝতে পারি। আমায় খুবই কামফর্ট জোন দিয়েছেন। ভালোভাবে কাজ শিখিয়েছেন।
স্বপ্নে নাকি বনশালিজি আপনার গলা চেপে ধরেছিলেন?
না না, ওটা তো ইয়ার্কির কথা। সিরিয়াসলি নেবেন না। ভালোবেসে বলতাম। কীভাবে কী করব, ওনার কাছে জানতে চাইতাম। এ তো ভালোবাসার কথা।
রণবীর সিং, দীপিকা পাড়ুকোন বা আলিয়া ভাট, সকলেই বনশালির শুটিংয়ের ইউনিক স্টাইল নিয়ে কথা বলেন। আপনি কী বলবেন?
উনি তো জিনিয়াস। যতক্ষণ না নিজের মতো করে সিনটা শুট করছেন সন্তুষ্ট হন না। এটাই তো জিনিয়াস মানুষের লক্ষণ। ওনার ভিশন খুবই বড়। সিনেমা আর সঙ্গীত নিয়ে অগাধ জ্ঞান।
হীরামাণ্ডর শুটিংয়ে সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত কোনটা?
সেই নথের সিনটা। যেখানে ফরিদন আমায় নথ পরাচ্ছে। আর যখন আমি আলমজেবের হাতে পিস্তল তুলে দিচ্ছি। খুবই আবেগঘন দৃশ্য।
নথের সিনটায় নাকি সত্যিই কেঁদে ফেলেছিলেন…
আসলে, শিল্পীর ক্ষেত্রে সততা কিন্তু খুবই উপকারী। এই সততাই অন্যের মন ছুঁয়ে যায়। তাই এমন মুহূর্ত আসে যখন চোখে জল চলেই আসে। আবেগে স্রোতে বয়ে যায় শিল্পী।
‘হীরামাণ্ডি’র আগে জীবন, আর ‘হীরামাণ্ডি’র পরে জীবন, কী পার্থক্য?
এখন অনেক বেশি সাক্ষাৎকার দিতে হচ্ছে। অনেক ভালোবাসা পাচ্ছি। এতটা আশা করিনি কখনও।
মনে রাখার মতো কম্প্লিমেন্ট এখনও পর্যন্ত।
সবার আগে পরিচালক খুব ভালোবাসা দিয়েছেন। খুব খুশি হয়েছেন, অনেক আশীর্বাদ দিয়েছেন। খুব বড় ব্যাপার। ইন্ডাস্ট্রির নামকরা লোকজন প্রশংসা করেছেন। সহকর্মীরা প্রশংসা করলে আনন্দ বেশি হয়। এছাড়া ৭৫ বছরের এক মহিলা সম্ভবত আমেরিকা থেকে, তিনি বলেছিলেন, ‘তুমি আগের জন্মে আমার ছেলে কেন ছিলে না?’ এটা দারুণ একটা অনুভূতি ছিল। আমার বন্ধু শরদ। সেও বলেছে। আপনজনের প্রশংসা পুরস্কারের থেকেও বেশি।
সোনাক্ষী আর জেসনের সঙ্গে আপনার ঘনিষ্ঠ দৃশ্য ছিল।
চ্যালেঞ্জ ছিল অস্বস্তি। এটা কমন। অভিনেতার মধ্যে থাকে। আমি এমন দৃশ্য আগে করিনি। সোনাক্ষীকে এর জন্য ধন্যবাদ দেব। আমায় খুবই সহজ করে দিয়েছিলেন। আত্মবিশ্বাস দিয়েছিলেন। খুবই সুন্দরভাবে হয়ে গিয়েছিল। জেসন আর আমিও আগে কথা বলে নিয়েছিলাম। যাতে দৃশ্যটা বাস্তবিক হয়। সহ-অভিনেতা এতটা কামফর্ট জোন দিলে দৃশ্য ভালো হতে বাধ্য।
প্রশংসা, খ্যাতি ছাড়া ‘হীরামাণ্ডি’ থেকে কী পেলেন?
সন্তুষ্টি।
শরমিন খুবই ট্রোল হয়েছেন। কী বলবেন?
আপনি কাউকে প্রতিক্রিয়া দেওয়া থেকে বিরত রাখতে পারবেন না। এটা ব্যক্তিগত বিষয়। ও খুবই ভালো মনের মানুষ। খুবই ভালো কাজ করেছি আমরা। আমার কথা লিখে রাখবেন, ও ঠিক নিজের জায়গায় পৌঁছে যাবে। আমি তো খুব ভালো সময় কাটিয়েছি। সুন্দর মনের একজন মানুষ।
এর পর কী কী রয়েছে?
আপনারা প্রার্থনা করুন। ভালো চরিত্রের অফার পেলে আবারও নিজেকে উজাড় করে দেব।
বাংলা সিনেমা দেখেছেন?
হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমি দেখি। অপর্ণা সেনের সিনেমা খুব ভালো লাগে। সত্যজিৎ রায় সাহেবের সিনেমা দেখেছি। আর বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর সিনেমা দেখেছি। বাঙালি সংস্কৃতি খুব ভালো লাগে।
এখানকার কোন খাবার খেতে ভালোবাসেন?
মিষ্টি দই। আমার দারুণ লাগে।
‘হীরামাণ্ডি’র সদস্যদের নাম আমি বলব, গুণ আপনি বলবেন।
মনীষা কৈরালা – খুবই বলিষ্ঠ অভিনেত্রী। প্রচুর অভিজ্ঞতা।
সোনাক্ষী সিনহা – ক্ষুরধার, বুদ্ধিমতী আর খুবই স্নেহপূর্ণ একজন মানুষ
অদিতি রাও হায়দরি – খুঁটিনাটি খুব ভালো বোঝে, অত্যন্ত কোমল, গভীরতা আছে
রিচা চাড্ডা – খুবই স্ট্রং চরিত্রের স্ট্রং একজন মানুষ
শরমিন সেহগল – সৎ মনের মানুষ
সঞ্জয় লীলা বনশালি – ঈশ্বর। সিনেমার ঈশ্বর। ‘গাঙ্গুবাঈ’য়ের পর আবার ওনার সঙ্গে কাজ করতে পেরেছি, এটা আমার সৌভাগ্য। জিনিয়াস।
ইন্দ্রেশ মালিক – একজন ছাত্র। শুধু ভগবানকে ভয় পাই আর কাউকে না। জীবনের শেষ পর্যন্ত শিখে যাব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.